গাংনীর চেংগাড়া গ্রামে গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা অনুষ্ঠিত

গাংনী প্রতিনিধি: গাংনী উপজেলার চেংগাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে হয়ে গেলো গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা প্রতিযোগিতা। ছোটবেলায় যারা দর্শক হিসেবে এসব খেলা উপভোগ করতেন গতকাল শুক্রবার তারাই ছিলেন মূল প্রতিযোগী। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত এ প্রতিযোগিতায় এলাকার বিভিন্ন প্রান্তের বিপুল সংখ্যক নারী-পুরুষ দর্শক খেলা দেখেছেন। জানিয়েছেন তাদের হৃদয়ের অনুভূতির কথা। হারানো খেলাধুলা উপভোগ করে মুগ্ধ হয়েছেন হাজার হাজার দর্শক।

গতকাল সকাল দশটার দিকে শিশুদের খেলাধুলা দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। মোরগ লড়াই, লাফ, বিস্কুট দৌড়, অংক দৌড়সহ নানা খেলায় মেতেছিলো চেংগাড়া গ্রামের বিভিন্ন বয়সী শিশুরা। বাদ পড়েননি শিশুদের পিতা-মাতা কিংবা দাদা-দাদিরা। জুম্মার নামাজের বিরতির পর দ্বিতীয়পর্বের খেলায় তারাই ছিলেন মূল প্রতিযোগী। প্রথমেই পুরুষদের বস্তা দৌড়। বস্তার মধ্যে পা দিয়ে দৌঁড়ানো কষ্টসাধ্য হলেও তা দর্শকদের মন মাতিয়েছে। এ প্রতিযোগিতায় ইউসুফ আলী প্রথম স্থান এবং দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন মোজাম মিয়া। এরপরে আরেকটি আকর্ষণীয় খেলা তৈলাক্ত বাঁশ বেয়ে ওঠা প্রতিযোগিতা শুরু হয়। মধ্য বয়সী কৃষকরা ছিলেন এ খেলার প্রতিযোগী। ২০ ফুট বাঁশের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত লাগানো হয় তেল। একে একে ১৫ জন প্রতিযোগী চেষ্টা করেও বাঁশের মাথায় পৌঁছাতে পারেননি। তবে সর্বোচ্চ দূরত্বে পৌছে প্রথম স্থান অধিকার করেন মন্টু মিয়া। দ্বিতীয় হয়েছেন মোজাম মিয়া। এর আগে তিন পায়ে দৌড় দিয়ে দর্শক মাতিয়েছেন প্রতিযোগিরা। একজনের ডান পা আরেক জনের বাম পা একসাথে বেঁধে দেয়া হয়। এই দুজন একটি জুটি। ১৪টি জুটি দৌড়ে অংশ গ্রহণ করে। অনেকটাই ন্যাড়া পায়ে দৌড়ানোর মতো। দৌড়ে সবার আগে লক্ষ্যে পৌছে প্রথম পুরস্কার জিতে নেন দেলোয়ার-মন্টু জুটি। রাসেল-রফিকুল জুটি দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। গ্রামীণ আরেকটি ঐতিহ্যবাহী খেলা তৈলাক্ত বাঁশে ঝোলা। ঝুলতে গিয়ে কেউ বাঁশের অর্ধেক আবার কেউবা শুরুতেই মাটিতে আছড়ে পড়েন। তবুও জেতার জন্য প্রাণান্তর চেষ্টা। দর্শকদের আনন্দ দিয়ে শেষ পর্যন্ত এ খেলায় প্রথম স্থান দখল করেন ইমরান হোসেন। আর দ্বিতীয় স্থান পান রিপন। গ্রামবাংলার আরেকটি ঐতিহ্যবাহী খেলা হাঁড়ি ভাঙা। এ প্রতিযোগিতায় নারী ও পুরুষ উভয়ে অংশগ্রহণ করেন। চোখ বাঁধা অবস্থায় হাঁড়ির কাছে অনেক দূরেই লাঠি মেরেছেন বেশির ভাগ প্রতিযোগী। সারাজীবন হাঁড়ির খবর রাখা নারীরা হাঁড়ি ভাঙতে ব্যর্থ হলেও বয়োবৃদ্ধ সামসের আলী ঠিকই পেরেছেন। তিনিই একমাত্র প্রতিযোগী যিনি হাঁড়ি ভাঙতে সফল হন। জিতে নেন প্রথম পুরস্কার। লক্ষ্যের কাছাকাছি লাঠি মেরে দ্বিতীয় হন আনারুল ইসলাম। এ আয়োজনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিলো তৈলাক্ত কলাগাছ বেয়ে ওঠা। গ্রামের সবচেয়ে বয়স্ক থেকে শুরু করে তরুণ-যুবকরাও অংশগ্রহণ করেন। এমনিতেই কলাগাছ পিচ্ছিল তারপরে আবার তেল। কেউ-ই উঠতে পারছিলেন না। ওঠানামার এই দৃশ্য দেখে উল্লসিত হয়ে পড়েন দর্শকরা। পরে অবশ্য কলাগাছের মাঝামাঝি উঠে প্রথম স্থান অধিকার করেন রুবেল মিয়া। দ্বিতীয় স্থান কালাম হোসেনের। অংশগ্রণকারী বয়োবৃদ্ধরা জানালেন, প্রযুক্তির ছোঁয়ায় এখন আর কেউ খেলার মাঠে আসে না। প্রযুক্তি মানুষকে একা করেছে। সামাজিক সংঘবদ্ধতা বিলীন হতে চলেছে। তাই পুরোনো দিনের সেই মায়া-মহব্বত মানুষের মাঝে ফিরিয়ে আনতে এবং শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশ ঘটাতে ভিন্নধর্মী এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয় বলে জানিয়েছেন আয়োজক চেংগাড়া গ্রামের আবু ইউসুফ। গাংনী বাজারের লাভলু সুস্টোর ও তনিমা ট্রাভেলস এ প্রতিযোগিতা আয়োজনে সহযেগিতা করে। সামনের দিনে আরো বড় পরিসরে এরকম প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে বলে জানালেন আয়োজকরা।