স্টাফ রিপোর্টার: প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ে ১ হাজার ৬২০ জনের প্রার্থিতা বৈধ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর মধ্যে উপজেলা চেয়ারম্যান হিসাবে ৬৫১ জন, পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান ৬১২ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ৩৫৭ জন রয়েছেন। ৯৮টি উপজেলার রিটার্নিং অফিসারা যাচাইয়ে তিনটি পদে ১১২ জনের প্রার্থিতা বাতিল করেছেন। এর মধ্যে ৪১ জন চেয়ারম্যান, ৪৮ জন পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান ও ২৩ জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রয়েছেন।
আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কার্যত রাজনৈতিক লড়াইয়ে নামছে প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো। স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলেও আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সর্বশক্তি দিয়ে এই লড়াইয়ে অবতীর্ণ হতে যাচ্ছে। জাতীয় পার্টি ও জামায়াতও এ প্রতিযোগিতায় যোগ দিচ্ছে। উদ্ভূত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে প্রতিটি দলই নিজ নিজ অবস্থান থেকে উপজেলা নির্বাচনকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে। এই গুরুত্বের পেছনে প্রতিটি দলেরই রয়েছে নিজস্ব ভিন্ন ভিন্ন লক্ষ্য-উদ্দেশ্য। তবে সব দলেরই অভিন্ন লক্ষ্য- তৃণমূলে সংগঠনের ভিত শক্ত করার পাশাপাশি জাতীয় রাজনীতিতে প্রভাব বৃদ্ধি। সারাদেশে রেকর্ড সংখ্যক ১ হাজার ৭৩২ জন প্রার্থী উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ ও মহিলা) পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৬৯২, পুরুষ ভাইস-চেয়ারম্যান পদে ৬৬০ ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩৮০ প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। যাচাইয়ে যাদের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে তারা প্রার্থিতা বাতিলের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন ২৮ থেকে ৩০ জানুয়ারি। আপিল শুনানি শুরু হবে ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি। ৪ ফেব্রুয়ারি প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে। আইন অনুযায়ী প্রতীক বরাদ্দের আগে কোনো প্রার্থী প্রচার-প্রচারণা চালাতে পারবেন না।
৪৮৭টি উপজেলার মধ্যে তফশিল অনুসারে চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে ৯৭টি উপজেলার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি। এতে ১০২টি উপজেলায় ভোট নেয়ার কথা থাকলেও সীমানা জটিলতায় ৪টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ হবে না। এর মধ্যে রয়েছে-কাউনিয়া, গঙ্গাচরা, পীরগঞ্জ ও রংপুর সদর। আর রংপুর-৬ আসনে ২০ ফেব্রুয়ারি সংসদ নির্বাচন থাকায় ২৪ ফেব্রুয়ারি হবে পীরগঞ্জ উপজেলার নির্বাচন। গত ২৩ জানুয়ারি ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আরো ১১৭টি উপজেলার নির্বাচন হবে ২৭ ফেব্রুয়ারি।
আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কার্যত রাজনৈতিক লড়াইয়ে নামছে প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো। স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলেও আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সর্বশক্তি দিয়ে এই লড়াইয়ে অবতীর্ণ হতে যাচ্ছে। জাতীয় পার্টি ও জামায়াতও এ প্রতিযোগিতায় যোগ দিচ্ছে। উদ্ভূত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে প্রতিটি দলই নিজ নিজ অবস্থান থেকে উপজেলা নির্বাচনকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে। এ গুরুত্বের পেছনে প্রতিটি দলেরই রয়েছে নিজস্ব ভিন্ন ভিন্ন লক্ষ্য-উদ্দেশ্য। তবে সব দলেরই অভিন্ন লক্ষ্য- তৃণমূলে সংগঠনের ভিত শক্ত করার পাশাপাশি জাতীয় রাজনীতিতে প্রভাব বৃদ্ধি।
আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে একক প্রার্থী সমর্থনের ইস্যুতে ঐকমত্য হয়েছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৯ দল। জনপ্রিয়তা ও সাংগঠনিক সামর্থ্যের ভিত্তিতেই দেয়া হবে সমর্থন। জাতীয় রাজনীতির স্বার্থে স্থানীয় পর্যায়ে পারস্পরিক ছাড় দেয়ার মানসিকতা নিয়ে চূড়ান্ত হবে প্রার্থিতা। কোনো ধরনের কোন্দলকে প্রশ্রয় দেবে না শীর্ষ নেতৃত্ব। ৫ জানুয়ারির একতরফা জাতীয় নির্বাচনের পর রাজনীতি ও আন্দোলনের মাঠে ঘুরে দাঁড়াতে এ বিষয়ে একমত হয়েছেন জোটের শীর্ষ নেতারা। তবে নির্বাচনী বিধি-নিষেধের কারণে আনুষ্ঠানিক প্রচারণায় যাবে না বিএনপি।
টেলিভিশন ফুটবল প্রতীক থাকছে না: নির্বাচনে প্রতীক হিসেবে এবার টেলিভিশন ও ফুটবল না রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ দুটি প্রতীক বরাদ্দ দেয়ায় এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। প্রতীক বরাদ্দ আইন অনুসারে এবারে প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এতে জাতীয় নির্বাচনে ব্যবহৃত প্রতীক উপজেলা নির্বাচন থেকে বাদ দিয়ে অন্য প্রতীক দেয়া হয়েছে।
ইসির উপসচিব মিহির সারওয়ার মোর্শেদ বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনে যে সব প্রতীক প্রার্থীদেরকে দেয়া হয়েছিলো সে সকল প্রতীক উপজেলা নির্বাচনের কোনো প্রার্থীকে দেয়া হবে না। উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১০টি করে মোট ৩০টি প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। প্রতীক বরাদ্দের ক্ষেত্রে উপজেলা চেয়ারম্যান পদের জন্য উপজেলা নির্বাচন বিধি ২২ এর ১ এর (ক) অনুযায়ী বরাদ্দকৃত টেলিভিশন প্রতীক জায়গায় কমিশন এখন দোয়াত-কলম বরাদ্দ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান পদের জন্য বিধি ২২ এর ১ এর (খ) তে উল্লেখিত ফুটবল প্রতীকের পরিবর্তে জাহাজ দেয়া হবে। তবে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের ক্ষেত্রে ফুটবলে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টেলিভিশন প্রতীক নতুন দল বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টকে ও ফুটবল প্রতীক স্বতন্ত্র প্রাথীদের দেয়া হয়েছিলো। তাই এ প্রতীক দুটো আর উপজেলা নির্বাচনে দেয়া হবে না।
যে প্রতীক থাকছে নির্বাচনে: উপজেলা পরিষদ আইন ১৯৯৮ সালের ২৪নং আইন এর ধারা ৬৩ এর উপ-ধারা (৩) এর ক্ষমতাবলে উপজেলা পরিষদের বিধিমালা ২০১৩ সংশোধন করা হয়েছে। এতে মোট ৩০টি প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদের জন্য বরাদ্দকৃত ১০টি প্রতীক হচ্ছে আনারস, কাপ-পিরিচ, চিংড়ি মাছ, মোটরসাইকেল, ঘোড়া, টেলিফোন, দোয়াত-কলম, ব্যাটারি, হেলিকপ্টার ও ফেজ টুপি। ভাইস চেয়ারম্যান পদের জন্য ১০টি প্রতীকের মধ্যে চশমা, টাইপরাইটার, তালা, টিউবওয়েল, মাইক, উড়োজাহাজ, টিয়াপাখি, জাহাজ, বই ও বৈদ্যুতিক বাল্ব এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের জন্য প্রজাপতি, হাঁস, ফুটবল, ক্যামেরা, কলস, পদ্ম ফুল, ফুলের টব, বৈদ্যুতিক পাখা, তীর-ধনুক ও সেলাইমেশিন।
উল্লেখ্য, ১৯৮২ সালে উপজেলা পদ্ধতির প্রবর্তন হয়। ১৯৮৫ সালে প্রথমবারের মতো এবং ১৯৯০ সালে দ্বিতীয়বার উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হয়। ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর উপজেলা পদ্ধতি বাতিল করে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে আবার উপজেলা পদ্ধতি চালু করে। কিন্তু ওই সময়ে নির্বাচন হয়নি। ১৯ বছর পর ২০০৯ সালের ২২ জানুয়ারি উপজেলা পরিষদের তৃতীয় নির্বাচন হয়। নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় আওয়ামী লীগ। নির্বাচনের পর উপজেলা পরিষদগুলোর প্রথম বৈঠক হয় ওই বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৭ মের মধ্যে। আইন অনুসারে প্রথম বৈঠকের দিন থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর হচ্ছে উপজেলা পরিষদের মেয়াদ। এ মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ১৮০ দিনের মধ্যে পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান রয়েছে।