চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহের নির্বাচনী চিত্র : ভোটকেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতির সংখ্যা ছিলো কম

কোর্টচাঁদপুর ও মহেশপুরের ২০টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত

 

স্টাফ রিপোর্টার: ঝিনাইদহের মহেশপুর ও কোটচাঁদপুর উপজেলার অন্তত ২৫টি ভোটকেন্দ্রে ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এ সব ভোটকেন্দ্রে দুর্বৃত্তরা হামলা চালিয়ে আগুন ধরিয়ে ব্যালট পেপার পুড়িয়ে দেয়। ফলে দু উপজেলার ২০টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করেছে প্রশাসন। কুষ্টিয়া দৌলতপুরে দুটি কেন্দ্র থেকে ব্যালট পেপার ছিনতাই করেছে সন্ত্রাসীরা। তবে চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুরের ৪টি আসনের কোনো কেন্দ্রেরই ফলাফল স্থগিত করা হয়নি।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন চুয়াডাঙ্গার দুটি আসনে অনেকটাই অভিন্ন চিত্র ছিলো। মেহেরপুর গাংনী আসনে তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি ভোটারের উপস্থিতিতে নির্বাচন সম্পন্ন হয়। চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য হাজি আলী আহজগার টগর দর্শনা সরকারি কলেজ কেন্দ্রে ভোট দেন। তার ভোট দেয়ার সময় এ কেন্দ্রে ভোটারদের লম্বা লাইন নজরে পড়ে। চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার নিজের ভোট প্রদানের পর তিনি বভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে দেখেন।

পদ্মবিলা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, চুয়াডাঙ্গার পদ্মবিলা ইউনিয়নের ভোটকেন্দ্রগুলোতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। পদ্মবিলা ইউনিয়নে কুশোডাঙ্গা, পিরোজখালী, খেজুরা, সুবদিয়া ও বালিয়াকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কেন্দ্রে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণ চলে। তবে এবার ভোটারদের মাঝে তেমন আমেজ ছিলো না।

দামুড়হুদা অফিস থেকে তাছির আহমেদ জানান, দামুড়হুদা উপজেলা সদরের আশপাশ ভোটকেন্দ্রে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই ভোটগ্রহণ শেষ হয়। তবে শনিবার রাতে দুর্বৃত্তদের বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা ভেস্তে দেয় দামুড়হুদা থানা পুলিশ এবং উদ্ধার করেন শাটারগান, গুলি,ককটেল ও বোমা। একই রাতে উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা এলাকায় দুর্বৃত্তরা ২টি বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে ভোটারদের মাঝে কিছুটা ভয়ভীতি লক্ষ্য করা যায়। সকল ভোটকেন্দ্র এবং মেন রাস্তার মাঝে মাঝে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী ভোটকেন্দ্রের নাশকতা ঠেকাতে কঠোর তৎপর ছিলো। তবে ভোটকেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি কম ছিলো। ভোটারদের আশানুরূপ উপস্থিতি কম থাকার কারণে ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের সামলাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো বেগ পেতে হয়নি।

নির্বাচন অফিসসূত্রে জানা যায়, দামুড়হুদা উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌর এলাকায় মোট ভোটারের সংখ্যা এক লাখ ৯৪ হাজার ৫০০ জন। এ সকল ভোটারদের ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৭৭টি আর ভোটকক্ষের সংখ্যা ৫০১টি। সরেজমিন পর্যবেক্ষণে সকাল ১০টা ৫ মিনিটে দামুড়হুদা পাইলট হাইস্কুল ভোটকেন্দ্রে গেলে কর্তব্যরত প্রিসাইডিং অফিসার মশিউর রহমান জানান, এ কেন্দ্রটির মোট ভোটার সংখ্যা তিন হাজার ৯৪৬ জন। এর মধ্যে ভোট পোল হয়েছে ১১৭টি, আবার দুপুর ২টা সরেজমিনে মোট ভোট পোলের সংখ্যা জানা যায় ৬৮৫টি। দামুড়হুদা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ১০টা ১২ মিনিটে জানা যায় ২৭৫৯ জন ভোটারের মধ্যে ভোট পোল হয়েছে ১৩১টি। পুড়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ১০টা ২৯ মিনিটে জানা যায় দু হাজার ৫৯ জন ভোটারের মধ্যে ভোট পোল হয় ২০টি। উজিরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ১০টা ৪৬ মিনিটে জানা যায় চার হাজার ১৫৫ জন ভোটারের মধ্যে ভোট পোল হয় ১৪৮টি। দেওলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ১১টা ১৭ মিনিটে জানা যায় এক হাজার ৩১৯ জন ভোটারের মধ্যে ভোট পোল হয় ১৫৯টি।

চিৎলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ১১টা ৩১ মিনিটে দু হাজার ১৬৮ জন ভোটারের মধ্যে ভোট পোল হয় ৪৯০টি। জুড়ানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে পৌনে ১১টায় তিন হাজার ১৭৬ জন ভোটারের মধ্যে ভোট পোল হয় ২২১টি। বিষ্ণপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ১২টা ১২ মিনিটে দু হাজার ১৭৬ জন ভোটোরের মধ্যে পোল হয় ৩৭৭টি। মুক্তারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ১২টা ৩০ মিনিটে দু হাজার ১০৭ জন ভোটারের মধ্যে ভোট পোল হয় ৩৩২টি। কোমরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ১২টা ৪০ মিনিটে তিন হাজার ৮৬ জন ভোটারের মধ্যে ভোট পোল হয় ৪০০টি। কার্পাসডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ১২টা ৫৮ মিনিটে দু হাজার ৪৮০ জন ভোটারের মধ্যে ভোট পোল হয় ৪২৩টি। পাটাচোরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ১টা ১৫ মিনিটে এক হাজার ১৭৭ জন ভোটারের মধ্যে ভোট পোল হয় ৫০০টি। পুরাতন বাস্তুপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ১টা ৩৭ মিনিটে তিন হাজার ৩৩ জন ভোটারের মধ্যে ভোট পোল হয় এক হাজার ৫শটি। পুরাতন হাউলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ১টা ৫০ মিনিটে এক হাজার ৬৯০ জন ভোটারের মধ্যে ভোট পোল হয় ৩৮৭টি। জয়রামপুর বটতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ২টা ২৯ মিনিটে দু হাজার ১২৪ জন ভোটারের মধ্যে ভোট পোল হয় ৩৭০টি। জয়রামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ২টা ৪২ মিনিটে তিন হাজার ৮৬৬ জন ভোটারের মধ্যে ভোট পোল হয় ৭৩৯টি। লোকনাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ৩টা ০২ মিনিটে দু হাজার ৯০৪ জন ভোটারের মধ্যে ভোট পোল হয় ২০০টি। হাউলী ইউনিয়ন পরিষদ ভোট কেন্দ্রে ৩টা ১৫ মিনিটে এক হাজার ৮৮৭ জন ভোটারের মধ্যে ভোট পোল হয়েছে প্রায় ৫০০টি।

কার্পাসডাঙ্গা থেকে ভ্রাম্যমা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দামুড়হুদার কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের ১১টি কেন্দ্রে ৩০ হাজার ৬৬৮ ভোটারের মধ্যে পোল হয়েছে ১২ হাজার ৭২০ ভোট। এর মধ্যে নৌকা প্রতীক পেয়েছে ১১ হাজার ৭৫৩ ও হাতুড়ি প্রতীক পেয়েছে ৫৩৯ ভোট। বাতিল হয়েছে ৪২৮ ভোট।

কুড়লগাছি প্রতিনিধি জানিয়েছেন, কুড়ুলগাছি ইউনিয়নের ৯টি ভোটকেন্দ্রে ১৯ হাজার ৪৬৮ ভোটারের মধ্যে ৬ হাজার ৩৫১ ভোট পোল হয়েছে। নৌকা প্রতীকে ভোট পেয়েছে পাঁচ হাজার ৭০৪ ও হাতুড়ি প্রতীক পেয়েছে ৪১৯ ভোট। বাতিল হয়েছে ২২৮ ভোট।

দর্শনা অফিস জানিয়েছে, দর্শনা ও আশপাশ এলাকায় দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি কিছুটা কম থাকলেও সুষ্ঠু পরিবেশে পরিচালিত হয়েছে ভোটগ্রহণ কার্যক্রম। কোথায় কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। কড়া নিরাপত্তার মধ্যদিয়েই সবকটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করা হয়েছে। দর্শনা পৌরসভায় ৯টি ভোটকেন্দ্রে ২১ হাজার ৬৩৯ ভোটারের মধ্যে ৭ হাজার ১৯ ভোট পোল হয়েছে। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের আ.লীগ মনোনীত প্রার্থী এমপি আলী আজগার টগর নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ৬ হাজার ৫৩৭ ভোট। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী ওয়ার্কার্সপার্টি মনোনীত সিরাজুল ইসলাম শেখ হাতুড়ি প্রতীকে পেয়েছেন ৩৯৪ ভোট। বাতিল হয়েছে ৪৮২ ভোট। গতকাল রোববার সকাল ১০ টার দিকে দর্শনা সরকারি কলেজ ভোটকেন্দ্রে গিয়ে এমপি আলী আজগার টগর ভোট দেন। রাত ৯টার দিকে এমপি আলী আজগার টগর আবারো বিজয় হওয়ায় দামুড়হুদা উপজেলা আ.লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে পৃথক পৃথকভাবে এমপি টগরকে ফুলেল শুভেচ্ছা দেয়া হয়েছে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- উপজেলা আ.লীগের যুগ্মসম্পাদক ইউপি চেয়ারম্যান জাকারিয়া আলম, শ্রমিকনেতা আ. খালেক, মাসুদুর রহমান, গোলাম ফারুক আরিফ, আলী মুনসুর বাবু, যুবলীগ নেতা আ. হান্নান ছোট, আজিজুর রহমান বাবু, শেখ আসলাম আলী তোতা, ইকবাল হোসাইন, আশরাফুল আলম বাবু, মামুন শাহ, ছাত্রলীগ নেতা রুবেল, রফিকুল ইসলাম ববি, নাহিদ পারভেজ প্রমুখ।

আন্দুলবাড়িয়া প্রতিনিধি জানিয়েছেন, কয়েকটি বিছিন্ন ঘটনা ছাড়া আন্দুলবাড়িয়া. রায়পুর ইউনিয়ন এলাকায় শান্তিপূর্ণভাবে ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। শনিবার রাত পৌনে ১২টার দিকে নিশ্চিন্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের সামনে দুর্বৃত্তের দল ২টি পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে। একটি বিস্ফোরিত হলে অপর অবিস্ফোরিত বোমাটি জীবননগর থানার ওসি শিকদার মশিউর রহমান উদ্ধার করেন। এ ঘটনায় রাতে সেখানে অবস্থানরত কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্তরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।

পুলিশ বলছে, উদ্ধারকৃত বস্তুটি পেট্রোল বোমা নয়। বোতলে তেল ভরে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা আতঙ্ক সৃষ্টি করতে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। বাঁকা ইউনিয়নের মোক্তারপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে থাকা পাটকাটির গাঁদায় ও উথলী ইউনিয়নের কাশিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের পাশে কয়েকটি পটকা ফুটিয়ে দুর্বৃত্তরা জনপদটি আতঙ্কিত করে তোলে। রায়পুর ইউনিয়ন এলাকায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অনেকে ভোট দিতে পারেনি বলে জানা গেছে। পূর্বের রাতে সংখ্যালঘু পার্শ্ববর্তী দুতিয়ার কুটি, কেষ্টপুর, দুবলোকুড় ও মারুফদহ এলাকায় দুর্বৃত্তরা পটকা ফাটিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় আন্দুলবাড়িয়া খাপাড়া মোড়ে নির্বাচনী ফলাফল নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করায় আওয়ামী লীগ-বিএনপি সর্মথকদের মধ্যে তর্ক-বিতর্কের এক পর্যায়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংর্ঘষে বিএনপি সমর্থক মানোয়ার হোসেন (৪০) আহত হয়েছেন। সৃষ্ট সংঘর্ষের ঘটনায় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ মোক্তার হোসেন, বিএনপি নেতা সাবেক ইউপি সদস্য আতিয়ার রহমান, তার ভাই জিয়া ও সামাউল নামের দু যুবক আহত হয়েছে। আহতরা প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণ করেছে। খবর পেয়ে জীবননগর থানার ওসি শিকদার মশিউর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের নির্বাচনী এলাকা জীবননগর উপজেলায় শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। দু একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া তেমন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। ভোটারদের মাঝে তেমন কোনো উৎসবের আমেজ না থাকলেও কনকনে শীত উপেক্ষা করে ভোটাররা সুশৃঙ্খলভাবে দাঁড়িয়ে ভোটাধিকার প্রদান করেন। বিশেষ করে নারী ভোটারদের উপস্থিতি ছিলো লক্ষণীয়। এ সময় নারী ভোটাররা জানান, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট দিতে পারায় তারা আনন্দিত। তবে কিছু কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি তুলনামূলক কম লক্ষ্য করা গেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও ছিলো সতর্ক অবস্থায়।

সরেজমিন বেলা ১১টার দিকে উথলী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে গিয়ে প্রিসাইডিং অফিসার মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ওই কেন্দ্রের মোট ভোট সংখ্যা ৩ হাজার ৭২২। এর মধ্যে বেলা ১১টা পর্যন্ত ৯৭ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। বেলা ১২টার দিকে খয়েরহুদা প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে গিয়ে প্রিসাইডিং অফিসার মো. মশিউর রহমানের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ওই কেন্দ্রে ৩ হাজার ৬৩৪ জন ভোটারের মধ্যে বেলা ১২টা পর্যন্ত ৯৯৫ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। বেলা সাড়ে ১২টার সময় কাশিপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে গিয়ে প্রিসাইডিং অফিসার মো. আশরাফুজ্জামানের  সাথে কথা বলে জানা গেছে, ওই কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ হাজার ৭৯৫ জন। এর মধ্যে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ৫১১ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। বেলা ১টার সময় নিশ্চিন্তপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে গিয়ে প্রিসাইডিং অফিসার একেএম মহিবুল আলমের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বেলা ১টা পর্যন্ত  ২ হাজার ৯৩১ জন ভোটারের মধ্যে ৪৬৭ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। বেলা ২টার সময় পাকা প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে গিয়ে প্রিসাইডিং অফিসার মো. হাবিবুর রহমানের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ওই সময় পর্যন্ত ২ হাজার ১৬২ জন ভোটারের মধ্যে ৩৫০ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। বেলা ৩টার সময় জীবননগর পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গেলে প্রিসাইডিং অফিসার মোছা. নাজনিন নাহার  জানান, ওই কেন্দ্রে ৪ হাজার ৮৯ জন ভোটারের মধ্যে বেলা ৩টা পর্যন্ত ৪৮০ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন।

নির্বাচনকে ঘিরে প্রতিটি ভোট কেন্দ্রের বাইরে ও ভেতরে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার ছিলো। সুশৃঙ্খলভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত, সেনাবাহিনী, ৱ্যাব, পুলিশ, আনসারসহ একাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে কাজ করেছে।

ডাকবাংলা প্রতিনিধি জানিয়েছেন: ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ডাকবাংলা ভোটকেন্দ্রে শান্তিপূর্ণভাবে ভেটগ্রহণ হলেও উপস্থিত ছিলো খুবি কম। তবে বাদপুকুর কেন্দ্র বিকেল ৩টায় বোমা হামলা হলেও ভোটগ্রহণ চলছিলো বলে জানা গেছে। এদিকে সাগান্না ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক আনারসের সমর্থক মুসসি শাহিন রেজা সাঈদ জানান, এমপি শফিকুল ইসলাম অপুর লোকজন এ হামলা চালিয়েছে। অন্যদিকে অপুর লোকজন বিষয়টি অস্বীকার করেছে। ডাকবাংলা ভোটকেন্দ্রে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ হলেও ভোটারদের উপস্থিতি ছিলো কম। বাদপুকুর কেন্দ্র বিকেল ৩টার দিকে বোমা হামলা পাল্টাপাল্টি দোষারোপ করেছে।

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঝিনাইদহ-১ (শৈলকুপা) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত শৈলকুপা উপজেলা চেয়ারম্যান নায়েব আলী জোয়ারদার শেষ মুহূর্তে নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দিয়েছেন। গতকাল রোববার বিকেল ৩টার দিকে শৈলকুপা উপজেলার গাড়াগঞ্জ বাজারে তার প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে নির্বাচনে কেন্দ্র দখল, জালভোট প্রদান ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগ এনে তিনি নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ফুটবল মার্কা নিয়ে আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছিলাম। আমি আশা করেছিলাম বর্তমান সরকারের ঘোষণা অনুয়ায়ী স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ ভোট অনুষ্ঠিত হবে। কিন্ত এই নির্বাচন বিএনপির আমলে অনুষ্ঠিত মাগুরার প্রহসনের নির্বাচনকেও হার মানিয়েছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, শৈলকুপা উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে মোট ১১০টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ৯০টি ভোট কেন্দ্র থেকে তার পোলিং এজেন্টকে বের করে দিয়ে নৌকার সমর্থকরা দখল করে নেয়। দখল করা এ সব ভোটকেন্দ্রে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের দিয়ে ভোট প্রদান করা হয়েছে। নায়েব আলী আরো অভিযোগ করেন, শৈলকুপার নিত্যানন্দপুর ভোটকেন্দ্রে ৪টি ব্যালট পেপারে নিয়ে সিল মারার সময় র‌্যাব সদস্যরা নৌকা প্রতীকের ৬ জনকে আটক করেন। এ সব কারণে আমি নির্বাচন বয়কট করলাম। তিনি অভিযোগ করেন, আমার বিজয় ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। এমপি পদে বহাল থেকে আব্দুল হাই নির্বাচন করায় প্রশাসন তার বিরুদ্ধাচরণ করেনি।

ঝিনাইদহের মহেশপুর ও কোটচাঁদপুর উপজেলার অন্তত ২৫টি ভোটকেন্দ্রে ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এ সব ভোটকেন্দ্রে দুর্বৃত্তরা হামলা চালিয়ে আগুন ধরিয়ে ব্যাটল পেপার পুড়িয়ে দেয়। ফলে দুই উপজেলার ২০টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করেছে প্রশাসন। মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সহকারী রিটার্নিং অফিসার নাসিমা বেগম এবং কোটচাঁদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার দেব প্রসাদ ভোটগ্রহণ স্থগিতের তথ্য নিশ্চিত করেন।

স্থগিত হওয়া কেন্দ্রগুলোর মধ্যে রয়েছে মহেশপুর উপজেলার নওদাপাড়া, সামন্তা, রামচন্দ্রপুর, কোলা ও গাড়াবাড়িয়া, সামন্তা, গৌরীনাথপুর, ইসলামপুর, সামন্তা ইসলামপুর, সামন্তা চারাতলা, পান্তাপাড়া, আলামপুর, মান্দারবাড়িয়া, শ্রীরামপুর কোটচাঁদপুর উপজেলার দুইটি মামুনশিয়া, পাশপাতিলা ও বলাবাড়িয়া।

মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সহকারী রিটার্নিং অফিসার নাসিমা বেগম জানান, মহেশপুর পৌরসভা এলাকার গাড়াবাড়িয়া ভোটকেন্দ্রে রোববার সকাল ৬টার দিকে ভোট বিরোধীরা হামলা চালিয়ে ভোট কেন্দ্রটি পুড়িয়ে দেয়। একই উপজেলার নওদাপাড়া, আজমপুর ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর, কাজিরবেড় ইউনিয়নের কোলা ও সামন্তা দাখিল মাদরাসায় হামলা চালিয়ে ভোট বিরোধীরা ব্যালট পেপার পুড়িয়ে দেয়। ফলে সকালে এই পাঁচটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। এছাড়া মহেশপুর উপজেলার গৌরীনাথপুর, ইসলামপুর, সামন্তা ইসলামপুর, সামন্তা চারাতলা, পান্তাপাড়া, আলামপুর, মান্দারবাড়িয়া ও শ্রীরামপুর কেন্দ্রে হামলা চালায় ভোট বিরোধীরা। ফলে বিকেলে আরও ১২টি ভোটকেন্দ্রের ভোট স্থগিত করা হয়।

কাটচাঁদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সহকারী রিটার্নিং অফিসার দেব প্রসাদ জানান, উপজেলার দুইটি মামুনশিয়া, পাশপাতিলা ও বলাবাড়িয়া কেন্দ্রে হামলা চালিয়ে ব্যালট পেপারসহ নির্বাচনী সরঞ্জাম পুড়িয়ে ফেলায় ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়।

বিরোধীদলবিহীন ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনা, র‌্যাব, পুলিশ ও বিজিবি দিয়ে কঠোর বলয় গড়ে তোলার পরও ঝিনাইদহবাসী একদলীয় নির্বাচন প্রত্যাখান করেছে। সর্বনিম্ন ভোটারের উপস্থিতির মধ্যদিয়ে রোববার ঝিনাইদহের চারটি সংসদীয় আসনে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত জেলার বেশির ভাগ ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের কোনো ভিড় ছিলো না।

নিরাপত্তার জন্য প্রশাসনের ব্যাপক আন্তরিকতার পরও অজানা আতঙ্কের কারণে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে আসেননি বলে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মনে করেন। ভোটের দিন ঝিনাইদহ শহরের বেশির ভাগ ভোটকেন্দ্র ফাঁকা ছিলো। ভেতরে পোলিং অফিসারসহ অন্যান্য কর্মকর্তা আর বাইরে আনসার ও পুলিশ সদস্যদের খোশগল্প করে সময় কাটাতে দেখা গেছে। সকাল ৮টার দিকে শহরের প্রধান প্রধান ভোটকেন্দ্রে কোনো ভোটারকে ভোট দিতে দেখা যায়নি। সকাল ৯টায় ওয়াজির আলী স্কুলের ভোটকেন্দ্রে পুরুষ বুথে মাত্র একজন ভোটার ভোট দেন। দুপুর ১২টার দিকে একই কেন্দ্রে এক হাজার ৯৯৭ জন ভোটারের মধ্যে মাত্র ১৪৭ জন ভোটার ভোট দেন। বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে একই কেন্দ্রে ভোট দেন ২৫০ জন। দুপুর ১২টার দিকে ওয়াজির আলী স্কুলের ভোটকেন্দ্রে ঝিনাইদহ-২ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সফিকুল ইসলাম অপু ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. আজিজুর রহমান ভোট দেন। তারা ভোটারদের উপস্থিতি দেখে কোনো মন্তব্য না করলেও ভোটকেন্দ্রে শান্তিপুর্ণ পরিবেশে বিরাজ করছে বলে সাংবাদিকদের জানান।

ঝিনাইদহ সরকারি কেশবচন্দ্র মহাবিদ্যালয় কেন্দ্রে মহিলা ভোটার ছিলো এক হাজার ৮২৬। এদিকে সদর উপজেলার ধননঞ্জয়পুর ভোটকেন্দ্রে দুপুর পর্যন্ত দু হাজার ৩৫০ ভোটের মধ্যে ৩শ ভোট, ফুরসন্দি কেন্দ্রে দু হাজার ৭০০ ভোটরে মধ্যে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত দুটি ভোট পড়ে।

দুপুর দুটার পর টিকারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও টিকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র দখল করে নৌকার পক্ষে জালভেটোর উৎসব চলে। শৈলকুপার বেশির ভাগ ভোটকেন্দ্র দখল করে নেয় নৌকার সমর্থকরা। ফলে এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী নায়েব আলী নির্বাচন বর্জন করেন। শৈলকুপার শৈখপাড়া, ত্রীবেনি, শ্রীরামপুর ও পশ্চিমপাড়া ভোটকেন্দ্রে সকালে কোনো ভোটারের উপস্থিতি না থাকলেও বিকেলে কেন্দ্র দখল করে নেয় নৌকার সমর্থকরা। মহেশপুর উপজেলার সুন্দরপুর, পুরন্দপুর, সড়াতলা, গোয়ালহুদা, ফতেপুর ও শিশু তলা ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের কোনো উপস্থিতি চোখে পড়েনি।

মহেশপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন,  মহেশপুরে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের মধ্যদিয়ে ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ব্যালট বাক্স ছিনতাই, অগ্নিসংযোগের কারণে ১৮টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বন্ধ ঘোষণা করা হয়। একজন আ.লীগ কর্মীর পায়ের রগ কর্তন ও বাড়িতে হামলা, জামায়াত নেতার বারিতে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

প্রাপ্তসূত্রে প্রকাশ, ঝিনাইদহ-৩ (মহেশপুর-কোটচাঁদপুর) আসনের ১৪৭টি কেন্দ্রে ভোটারের সংখ্যা তিন লাখ ১৭ হাজার ৭১৩। ভোটের আগের দিন রাতে ককটেল নিক্ষেপ ও অগ্নিসংযোগ করে মহেশপুরে ৫টি, কোটচাঁদপুরে ২টি কেন্দ্র থেকে ব্যালেট বাক্স ছিনতাই হয়ে যায়। সকালে ভোট শুরু হলে ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে আরো ১২/১৩টি কেন্দ্রে অগ্নিসংযোগ ও ব্যালট বাক্স ছিনতাই  ও অগ্নিসংযোগের ফলে কেন্দ্রগুলোতে ভোটগ্রহণ বন্ধ হয়ে যায়। কেন্দ্রগুলো হলো- সামন্তা মাদরাসা, কোলা প্রাথমিক বিদ্যালয়, নওদাগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয়, রামচন্দ্রপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়, গাড়াবাড়িয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, শিবানন্দপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়, সাড়াতলা প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোয়ালহুদা স্যাটালাইট বিদ্যালয়, বলিভদ্রপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়, গরিনাথপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় নাটিমা বিদ্যালয়, চাদরতনপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়, আলামপুর ২ ও ৪ নং কলোনি, শ্রীরামপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়। বামনগাছা গ্রামের ওয়ার্ড আ.লীগের সভাপতি আ. আলীকে কুপিয়ে জখম ও পায়ের রগ কেটে দেয় ১৮ দলের নেতাকর্মীরা এবং রাতেই বলিভদ্রপুর গ্রামের ইউপি মেম্বার আশাদুলের বাড়িতে ১৮ দলের কর্মীরা হামলা করে। এ সময় স্থানীয় লোকজন জামায়াতকর্মী মাহাফুজকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। সকাল ১১টায় জামায়াতের পৌর আমির মগবুল হোসেনের বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটছে পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যৌথবাহিনী অভিযান চালানোর সময় অগ্নিসোংযোগে ঘটায়। এছাড়া উপজেলা আমির আ. হাইয়ের বাড়িতে ভাঙচুর করে।

যৌথবাহিনীর কমান্ডার কোটচাদপুর এএসপি সার্কেল জানান, তারা ওই বাড়িতে অভিজান চালাতে গেলে দেখে আগুন জ্বলছে ফলে তারা আর ওই বাড়িতে প্রবেশ করেনি। এদিকে মহেশপুর থানার ওসি আকরাম হোসেন জানান, রাতে নাশকতা ঠেকাতে গিয়ে পুলিশ ২৫ রাউন্ড গুলি ছুড়েছে। মহেশপুরে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ ও ভ্রাম্যমাণ আদালত নির্বাচন চলাকালীন সময়ে দায়িত্ব পালন করেছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিকেল ৩টায় ভোটগ্রহণ চলছিলো।

কোটচাঁদপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, কোটচাঁদপুরে ভোটকেন্দ্রগুলোতে দুর্বৃত্তরা হামলা, ভাঙচুর, ককটেল বিস্ফোরণ ও অগ্নিসংযোগ করেছে। এ সমস্ত ঘটনায় পুলিশ ও আনসারের ৩ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে মারাত্মক আহত পুলিশের এসআই মিলন কুমার ঘোষের অবস্থা সঙ্কটাপন্ন হওয়ায় তাকে যশোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। স্থগিত করা হয়েছে ৩টি ভোটকেন্দ্রের ভোটগ্রহণ। উপজেলার মামুনসিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুর্বৃত্তরা ককটেল ফাটিয়ে কেন্দ্রের নিরাপত্তায় নিয়োজিত এসআই মিলন কুমার ঘোষ, কনস্টেবল জামিরুল ইসলাম ও আনসার বাহিনীর পিসি অহিদুল ইসলামকে কুপিয়ে জখম করে। দুর্বৃত্তরা এ সময় কেন্দ্রের আসবাবপত্র ভাঙচুর করে নির্বাচনী সরঞ্জামে আগুন দেয়। একই সময় বলাবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে হামলা করে দুর্বৃত্তরা কেন্দ্রের নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশকে জিম্মি করে নির্বাচনী সরঞ্জামে আগুন দেয়। এদিকে গতকাল রোববার বেলা ১২টার দিকে ভোটগ্রহণ চলাকালে পাশপাতিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুর্বৃত্তরা হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে ব্যালট বাক্স ও ব্যালট পেপারে আগুন দেয়। এ সমস্ত ঘটনার পর এই তিনটি কেন্দ্রে প্রশাসন ভোটগ্রহণ স্থগিত করে। এছাড়া গোবিন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও তালসার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গোলযোগের কারণে সাময়িকভাবে এ কেন্দ্র দুটিতে ভোটগ্রহণ স্থগিত থাকে। পরে প্রায় ১ ঘণ্টা পর এ কেন্দ্রগুলোতে আবার ভোটগ্রহণ শুরু হয়। ভোটগ্রহণের আগের রাত শনিবার থেকে ভোটগ্রহণ চলাকালীন সময়ে কোটচাঁদপুরে মোট ৪৭টি কেন্দ্রের মধ্যে অধিকাংশ কেন্দ্রে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ফলে ভোট কেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতি ছিলো কম।

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানিয়েছেন, কুষ্টিয়া দৌলতপুরে দুটি কেন্দ্র থেকে ব্যালট পেপার ছিনতাই করেছে সন্ত্রাসীরা। সূত্রে জানা যায়, প্রিসাইডিং অফিসারকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ব্যালট পেপার ছিনতাই করেছে সন্ত্রাসীরা। পূর্ব তারাগুনিয়া কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার আশরাফুল ইসলাম জানান, গতকাল রোববার দুপুরের পরে জেলার ১ নং আসনের ৬৫ ও ৭৯ নং কেন্দ্রে হঠাৎ করে সন্ত্রাসীরা কেন্দ্রে হামলা চালিয়ে ব্যালেট পেপার ছিনতাই করে নিয়ে যায়। পরে র‌্যাব ও পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ কারণে এ দুটি কেন্দ্রে ৩ ঘণ্টা ভোট বন্ধ রাখে প্রশাসন।