পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদে নোয়াখালী কালিয়াকৈর নওগাঁ নাটোর গাইবান্ধা ময়মনসিংহ ও ভালুকায় হরতাল আজ
মাথাভাঙ্গা ডেস্ক: ১৮ দলীয় জোটের ডাকা ৭২ ঘণ্টা অবরোধের দ্বিতীয় দিন রোববার চট্টগ্রাম, বরিশাল, কুড়িগ্রাম, কিশোরগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, দিনাজপুর, ভালুকা, সুনামগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ, ককটেল বিস্ফোরণ, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও রাস্তা অবরোধের ঘটনা ঘটেছে। এতে পুলিশসহ কমপক্ষে ৩০০ জন আহত হয়েছেন। রাজধানীতে বেশ কয়েকটি বাসে আগুন দেয়া হয়েছে। পুলিশের ওপর বোমা নিক্ষেপরও ঘটনা ঘটেছে গতকাল। চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরে গতকালও অবরোধকারীরা রাস্তায় আগুন ধরিয়েছে, ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। জীবননগরে পিকেটিঙের সময় শিবিরের একজনকে কারাদণ্ডাদেশ দেয়া হয়েছে। মেহেরপুরের ৭টি স্থানে অবরোধ করে রাখা হয়। গাংনী কুষ্টিয়া সড়কে গতরাতে একটি ট্রাকে আগুন দেয়া হয়। এছাড়া বেশ কয়েকটি ককটের বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে।
চুয়াডাঙ্গায় বেলা ১২টার দিকে কোর্টমোড়ে বাংলা মেডিকেলের সামনের রাস্তায় পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আগুন ধরানোর পর ছাত্রদল ঝটিকা মিছিল নিয়ে জীবননগর বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। সন্ধ্যায় চুয়াডাঙ্গা ঝিনাইদহ সড়কে টার্মিনালের অদূরে নূরনগর মোড়ে একটি অটো ভাঙচুর করা হয়। রাত ১১টার দিকে বেলগাছি মোড়ে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধকারীরা তাদের অবস্থান জানান দেয়। রাত সাড়ে ১১টার দিকে চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহ সড়কে চুয়াডাঙ্গা জাফরপুর-নূরনগরে নবনির্মিত স্টেডিয়ামের নিকট ব্র্যাকের অদূরে সড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ করে রাখা হয়। পরে পুলিশ গাছের গুঁড়ি অপসারণ করে। রাত ১০টার দিকে গুলশানপাড়া পলাশপাড়ার বলাকা মাঠের দিকে থেকে ভেসে আসে ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ। রাত ১১টার দিকে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের পোস্ট অফিসের অদূরে একটি ককটেল বিস্ফোরণ করা হয়। পুলিশ অবশ্য ককটেল বিস্ফোরণের কথা স্বীকার না করে বলেছে, ওগুলো পটকা। ঘটনাস্থলে ককটেলের আলামত পাওয়া যায়নি।
দেশের বিভিন্ন স্থানে নাশকতায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৬০ জনকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এদিকে দলের গ্রেফতারকৃত নেতাদের মুক্তি, তফশিল বাতিল ও পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদে আজ নোয়াখালী, গাজীপুরের কালিয়াকৈর, নওগাঁ, নাটোর, গাইবান্ধা, ময়মনসিংহ ও ভালুকায় হরতাল ডেকেছে স্থানীয় বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। কুমিল্লার দাউদকান্দিতে জাহাঙ্গীর সরকার (৩৫) নামে এক যুবদল নেতাকে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে। এ সময় স্থানীয়রা সজীব (২৩) নামে এক জনকে আটক করে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছে। রোববার রাত ৯টায় উপজেলার গৌরীপুর এলাকায় এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
মেহেরপুর অফিস/গাংনী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মেহেরপুরে বিচ্ছিন্ন ককটেল বিস্ফোরণ, সড়ক অবরোধ ও গাড়ি ভাঙচুরের মধ্যদিয়ে ১৮ দলের ডাকা ৭২ ঘণ্টা অবরোধের দ্বিতীয় দিন শেষ হয়েছে। ভোর থেকেই জেলার প্রধান সড়কগুলোর ৭টি স্থানে অবরোধ করা হয়। এ সময় ১০/১২টি ককটেল বিস্ফোরণ ও কয়েকটি ট্রাক ভাঙচুর করে বিক্ষুব্ধ অবরোধকারীরা।
জেলা বিএনপির সভাপতি আমজাদ হোসেনের উদ্যোগে ভোর সাড়ে ৫টার দিকে গাংনী শহরে ঝটিকা মিছিলের মধ্যদিয়ে অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়। নেতৃত্বে ছিলেন পৌর বিএনপি যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মকবুল হোসেন মেঘলা। গাংনী শহরে বিএনপি নেতাকর্মীদের ঝটিকা মিছিলটি রাজনৈতিক অঙ্গনের একটি বড় মাইলফলক হিসেবে দেখছেন বিভিন্নমহল। এ নিয়ে চলছে চুলছেড়া বিশ্লেষণ। গত কিছুদিনের অবরোধের মতোই ভোর থেকেই রাজনগর মোড়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা। সেখানে জামায়াতের নারীকর্মীরা মিছিল সমাবেশ করেন। নেতৃত্বে রয়েছেন আমঝুপি ইউনিয়ন জামায়াতের সেক্রেটারি আব্দুল জাব্বার। একই সময়ে মেহেরপুর-মুজিবনগর সড়কের বন্দর পিটিআই’র সামনে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেক এমপি মাসুদ অরুনের নেতৃত্বে অবরোধ করা হয়। উপস্থিত ছিলেন জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি ফারুক হোসেনসহ নেতৃবৃন্দ।
সকাল ৭টার দিকে মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কের বাওট থেকে ছাতিয়ান পর্যন্ত জেলা বিএনপি সভাপতি মেহেরপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য আমজাদ হোসেনের উদ্যোগে গাংনী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বাবলুর নেতৃত্বে অবরোধ করা হয়। সড়কের ওপরে গাছের গুঁড়ি ফেলে টায়ারে আগুন দিয়ে বিক্ষোভ করেন ১৮ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা। সকাল ৮টার দিকে বাওট বাজার থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি প্রধান সড়ক হয়ে বামন্দী বাসস্ট্যান্ডে আসে। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে আসাদুজ্জামান বাবলু ও জামায়াত নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। একই সময়ে জেলা বিএনপিসহ সভাপতি জাভেদ মাসুদ মিল্টনের নেতৃত্বে একটি বিক্ষোভ মিছিল বামন্দীবাজার প্রদক্ষিণ করে। ভোর থেকেই জাভেদ মাসুদ মিল্টনের নেতৃত্বে বামন্দী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় টায়ারে আগুন দিয়ে অবরোধ করা হয়। এ সময় ১টি ককটেল বিস্ফোরণ ও কয়েকটি ট্রাকে ভাঙচুর করা হয়। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে জাভেদ মাসুদ মিল্টনসহ নেতাকর্মীরা প্রধান সড়কের ওপরে বসে বিক্ষোভ করেন। উপস্থিত ছিলেন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো ও বামন্দী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল আওয়ালসহ নেতৃবৃন্দ।
এদিকে ভোর সাড়ে ৬টার দিকে মেহেরপুর-কাথুলী সড়কের কায়েম কাটারমোড়ে জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি তারিক মহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ও জেলা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে অবরোধ করা হয়। বিক্ষোভ সমাবেশকালে ১০টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। অপরদিকে গাংনী-কাথুলী সড়কের নওপাড়াবাজার এলাকায় অবরোধ করেন জোটের নেতাকর্মীরা। নেতৃত্বে ছিলেন গাংনী উপজেলা যুবদলের সভাপতি আক্তারুজ্জামান ও জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দাল হক। এদিকে অবরোধের কারণে গতকাল থেকেই আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার সকাল প্রকার বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।
সরোজগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, চুয়াডঙ্গা সরোজগঞ্জ ১৮ দলের উদ্যোগে অবরোধের ২য় দিন গতকাল রোববার সরোজগঞ্জ বাজারে বিক্ষোভ মিছিলি বের করা হয়। মিছিলটি সরোজগঞ্জ বাজারের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে মসজিদ মার্কেটের নিকট রাস্তা বন্ধ করে সমাবেশ করে। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন চুয়াডাঙ্গা সদর থানা আমির আব্দুর রউফ মিয়া, থানা বিএনপি একাংশের সহসভাপতি সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক, থানা জামায়াতেরে সেক্রেটারি খাইরুল ইসলাম, সদর থানা যুবদল একাংশের যুগ্মআহ্বায়ক আমিরুল ইসলাম লাল, কুতুবপুর ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি জয়নাল আবেদিন, শঙ্করচন্দ্র ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রমজান আলী, সরোজগঞ্জ বাজার কমিটির সহসভাপতি জামায়াত নেতা হাজি আব্দুর রহমান সব্দুল, পদ্মবিলা ইউনিয়ন আমির ছানোয়ার হোসেন, শঙ্করচন্দ্র ইউনিয়ন আমির ওসমান গনি, তিতুদহ ইউনিয়ন আমির রেজাউল করিম, বেগমপুর ইউনিয়ন আমির হুমাউন কবির, কুতুবপুর ইউনিয়ন আমির আব্দুর জব্বার, সদর থানা ছাত্রশিবির (পশ্চিম) সভাপতি কবির হোসেন, সরোজগঞ্জ আঞ্চলিক শাখা জামায়াতের সভাপতি মাজাহারুল ইসলাম প্রমুখ। সমাবেশটি পরিচালনা করেন মকলেচুর রহমান লিটন। এ সময় চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহ সড়কে সরোজগঞ্জ মসজিদ মার্কেটের সামনে একঘণ্টা ১৮ দলের নেতাকর্মীরা রাস্তার ওপর বসে পড়ে অবরোধ করে।
জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, জীবননগরে ভ্রাম্যমাণ আদালত রাসেল (১৯) নামে এক শিবিরকর্মীকে ১৫ দিনের কারাদণ্ড দিয়েছেন। গতকাল রোববার বিকেল ৪টার দিকে জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাজেদুর রহমান শিবিরকর্মী রাসেলকে এ কারাদণ্ডাদেশ দেন। পরে তাকে চুয়াডাঙ্গা জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।
পুলিশ জানায়, গতকাল রোববার বেলা ১২টার দিকে জীবননগর-হাসাদহ সড়কের বাকা ব্রিক্স ফিল্ড নামক স্থানে রাস্তার ওপর টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ ও গাড়ি ভাঙচুরের সময় পুলিশ জীবননগর উপজেলার চোরপোতা গ্রামের ছুন্নত বিশ্বাসের ছেলে শিবিরকর্মী রাসেলকে আটক করে। পরে বিকেলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাদণ্ডাদেশ দেয়া হয়।
আমঝুপি প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কের আমঝুপি থেকে বারাদী পর্যন্ত ১৮ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা রাস্তার ওপরে গাছের ডালপালা ফেলে ও টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবোরধ করে রাখে। ভোর থেকে আমঝুপি কার্যসংলগ্ন রাস্তা এআরবি কলেজ মোড় রাজনগর ও মোমিনপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় সড়কে অবোরধসহ জোটের নেতাকর্মীরা পৃথক বিক্ষোভ মিছিল করে। এছাড়া রাজনগরে মহিলা জামায়াতের একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মাঝে মাঝে ওই সড়কে পুলিশি টহল লক্ষ্য করা যায়।
দর্শনা অফিস জানিয়েছে, দর্শনা-দামুড়হুদা সড়কের লোকনাথপুরে টাইয়ার জ্বালিয়ে অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে দলীয় নেতাকর্মীরা। গতকাল সন্ধ্যায় লোকনাথপুর ফুটবলমাঠের সামনের প্রধান সড়কে টায়ার জ্বালায় অবরোধকারীরা। খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় দামুড়হুদা থানা ও দর্শনা আইসি পুলিশ। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে অবরোধকারীরা পালিয়ে যায়। এলাকাবাসীর সহযোগিতায় পুলিশ আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে এ ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
গাংনী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মেহেরপুর-কুষ্টিয়া প্রধান সড়কে গাংনী উপজেলার শুকুরকান্দি নামক স্থানে ট্রাকে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় ও পুলিশসূত্রে জানা গেছে, কুষ্টিয়া থেকে মেহেরপুরগামী একটি খালি ট্রাক ঘটনাস্থলে এলে বাধায় পাড়ে। সেখানে আগে থেকেই গাছ ফেলা ছিলো। ট্রাকটি থামলে কয়েকজন তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। খবর পেয়ে বামন্দী পুলিশ ক্যাম্পের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভান। পরে দমকবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে আসেন। বামন্দী পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ সামসুল আলম জানিয়েছেন, ট্রাকের সামনের কিছু অংশ যাওয়ার ছাড়া তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাছুদুল আলম জানিয়েছেন অবরোধকারীরা এ ঘটনাটি ঘটিয়েছে বলে ধারণা করছে পুলিশ।