স্টাফ রিপোর্টার: দিন যাওয়ার সাথে সাথে চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরের ৪টি আসনে প্রার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। আওয়ামী লীগ ও জাতীয়পার্টি এবং ওয়ার্কার্স পার্টি মনোনীতদের পাশাপাশি বেশ কয়েকজন স্বতন্ত্রপ্রার্থী হচ্ছেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। এদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রতাশী ছিলেন। মনোনয়ন না পেয়ে শেষপর্যন্ত স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবেই ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হবেন বলে জানিয়েছেন তারা। অপরদিকে মেহেরপুর-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জয়নাল আবেদীন মনোনয়ন বঞ্চিত হলেও তিনি স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে ভোটযুদ্ধে নামার লক্ষ্যে মনোনয়নপত্র কিনেছেন। মেহেরপুর পৌরমেয়র মোতাচ্ছিম বিল্লা মতুও সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীদের তালিকায় উঠে এসেছেন।
চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত হয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন। দলীয় মনোনয়ন চেয়ে না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার কথা জানিয়েছেন আলমডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য জামজামি ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আয়ুব হোসেন। যুবলীগের কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের একজন ছিলেন। তিনি অবশ্য গতকাল পর্যন্ত ভোটযুদ্ধে নামার কথা জানাননি। জাসদ প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন গ্রহণ করেছেন আলমডাঙ্গা পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এম সবেদ আলী। তিনি গত নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগে যোগদান করলেও বছরখানেক ধরে জাসদে ফিরে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। গতকাল তিনি মনোনয়নপত্র কিনেছেন। জাতীয় পার্টি (এরশাদ) মনোনীত হয়েছেন অ্যাড. সোহরাব হোসেন।
চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে আওয়ামী লীগের পুনর্মনোনীত হয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য হাজি আলী আজগার টগর। তার পক্ষে ইতোমধ্যেই মনোনয়নপত্র কেনা হয়েছে। এ আসনে দলীয় মনোনয়ন চেয়ে না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতার ঘোষণা দিয়ে মাঠে নেমেছেন মীর্জা শাহারিয়ার মাহমুদ ও দর্শনা পৌর আওয়ামী লীগ নেতা দর্শনা পৌরসভার সাবেক মেয়র মতিয়ার রহমান। মীর্জা শাহরিয়ার মাহমুদ গতকাল মনোনয়নপত্র কেনেন। এছাড়া বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি মনোনীত চুয়াডাঙ্গা জেলা সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম শেখ গতকাল মনোনয়নপত্র কিনেছেন। জাতীয় পার্টি (এরশাদ) মনোনীত হয়েছেন আকবর আলী।
চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের জন্য চুয়াডাঙ্গা জেলা জাসদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলমডাঙ্গা পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগে যোগদানকারী নেতা সবেদ আলী মনোনয়নপত্র উত্তোলন করেন। সবেদ আলী আলমডাঙ্গার গোবিন্দপুরের ছেলে। অপরদিকে চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের জন্য মনোনয়নপত্র উত্তোলন করেন জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম শেখ। তিনি দামুড়হুদা উপজেলার ইব্রাহীপুরের ছেলে। সংসদ সদস্য প্রার্থী আলমডাঙ্গার সবেদ আলী জানান, আওয়ামী লীগে যোগদান করলেও কোনো কমিটির সদস্য নন তিনি। এছাড়া গত এক বছর যাবত আওয়ামী লীগের সাথেও যুক্ত নেই তিনি। তিনি এক বছর কেন্দ্রীয় জাসদের সাথে রয়েছেন। কেন্দ্রীয় সভাপতির সাথে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগদানও করেছেন বলে তিনি জানান। জেলা জাসদের নতুন কমিটিতে আহ্বায়কের দায়িত্ব দেয়া হতে পারে বলেও তিনি দাবি করেছেন। চুয়াডাঙ্গা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেনের নিকট থেকে চুয়াডাঙ্গা জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম শেখ মনোনয়নপত্র সংগ্রহের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে গত ২৮ নভেম্বর চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন ও চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক আলী আজগার টগর মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন।
মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মেহেরপুর-১ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য গতকাল শনিবার মেহেরপুর সদর উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে ৪টি মনোনয়নপত্র বিক্রি হয়েছে। মনোনয়নপত্র সংগ্রহকারীরা হলেন- মেহেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য জেলা আ.লীগের সভাপতি আলহাজ মো. জয়নাল আবেদীন, শহর আ.লীগের সভাপতি অ্যাড. ইয়ারুল ইসলাম, আ.লীগের দলীয় মনোনীত প্রার্থী কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক ঢাকা সিটি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ফরহাদ হোসেন দোদুল ও কাওসার আলী। এদিকে গত বৃহস্পতিবার মেহেরপুর পৌর মেয়র আলহাজ মো. মোতাচ্ছিম বিল্লাহ মতু জাতীয় পার্টির (নাজিউর-মঞ্জু) পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। তবে কাওসার আলী কোন দল থেকে তিনি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন তা জানা যায়নি।
গাংনী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, আসন্ন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৭৪ মেহেরপুর-২ (গাংনী) আসনে ৪ জন প্রার্থী গতকাল শনিবার মনোনয়ন ফরম তুলেছেন। এদের মধ্যে একজন জেপি মনোনীত ও বাকি প্রার্থীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। এরা হচ্ছেন জেপি (মঞ্জু) মনোনীত প্রার্থী জেলা জেপির সভাপতি আব্দুল হালিম, গাংনীর সাবেক এমপি মকবুল হোসেন, জেলা কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক ভিপি জিএস ওয়াসিম সাজ্জাদ লিখন ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মকলেছুর রহমান মুকুল। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাহিদুজ্জামান খোকন আজ রোববার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পত্র উত্তোলন করবেন বলে তিনি জানিয়েছেন।
জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মকবুল হোসেন ১৯৯৬ সালে দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে টেলিভিশন প্রতীকে স্বতন্ত্র নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে এমপি নির্বাচিত হন মকবুল হোসেন। এ আসনটি নিয়েই মুলত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী আব্দুল গনির কাছে পরাজিত হন মকবুল হোসেন। সর্বশেষ ২০০৮ সালের নির্বাচনেও বিএনপি প্রার্থী আমজাদ হোসেনের কাছে প্রায় আড়াই হাজার ভোটে হেরেছিলেন মকবুল হোসেন। মকবুল হোসেনের নেতৃত্বেই উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানসহ অনেকেই রাজনীতি করছেন। আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক ছাত্রনেতা ওয়াসিম সাজ্জাদ লিখনের রয়েছে বেশ রাজনৈতিক ক্যারিয়ার। ছাত্রলীগের নেত্বত্ব দিয়েছেন তিনি। বর্তমানে জেলা কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদ। মেহেরপুর সরকারি কলেজের নির্বাচিত ভিপি জিএস ছিলেন। তরুণদের মধ্যে তার বেশ গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হলেও নেতৃবৃন্দের অনুরোধ সরে আসেন।
এদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মকলেছুর রহমান মুকুল রাজনৈতিক জীবনে অনেক সংগ্রাম করে আসছেন। এবারের নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার জন্য আগে থেকেই মাঠে কাজ করে আসছেন। রাজনৈতিক জীবনে তিনি সংগ্রামী নেতা। জেপির আব্দুল হালিম একক প্রার্থী হিসেবেই আছেন।
উল্লেখ্য, সাবেক এমপি মকবুল হোসেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাহিদুজ্জামান খোকন, সম্পাদক এমএ খালেক, উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম শফিকুল আলম, পৌর মেয়র আহম্মেদ আলী, নারী নেত্রী নুর জাহান বেগম ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সেলিনা মমতাজ কাকলীসহ ৮ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ফরম জমা দিয়েছেলেন।