বাংলাদেশ রেলওয়ের দর্শনা জংশনটি আন্তর্জাতিক। এ রেলরুট ব্যবহার করে মালামাল প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি-রপ্তানি করা হয়। রেলযোগাযোগই সাশ্রয়ী। সে ভ্রমণের ক্ষেত্রেই হোক, আর মালামাল আদান-প্রদানের ক্ষেত্রেই হোক। দর্শনা আন্তর্জাতিক জংশনে প্রায় প্রতিদিনই প্রবেশ করে প্রতিবেশী দেশ থেকে আনা হরেক রকমের মালামালবহন করা ট্রেন। প্রবেশের পরপরই এক শ্রেণির চোরচক্র মালবাহী ট্রেনের তালাবদ্ধ গাড়ি থেকে কৌশলে মালামাল চুরি করে। চুরি ঠেকাতে দর্শনা আন্তর্জাতিক রেলওয়ে জংশন ইয়ার্ডে বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীও নিযুক্ত করা হয়েছে। এরপরও চুরি বন্ধ হয়নি। মাঝে মাঝে চোরচক্র হয়ে ওঠে ভয়ঙ্কর লুটেরা। ওরা প্রকাশ্যেই লুটপাট শুরু করে। কখনো কখনো নিরাপত্তাকর্মীদের সাথে সংঘর্ষও হয়।
চোরচক্রের সাথে নিরাপত্তাকর্মীদের সংঘর্ষ! চোর তারপর আবার তাদের সাথে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। এতেই স্পষ্ট চোরচক্রের দাপট কতোটা। এ দাপট কি একদিনে হয়েছে? অবশ্যই না। অপরাধীচক্র একদিনে ভয়াবহ শক্তিধর হয় না। ধীরে ধীরে তারা শক্তি সঞ্চার করে। আধিপত্য বিস্তারে তারা কখনো কখনো কৌশলীও হয়। আইন প্রয়োগকারীদের নীরবতা বা বিশেষ সুবিধা নিয়ে অন্ধত্ববরণ করে দায়িত্বপালনে গড়িমশির সুযোগটা অপরাধীচক্রকে বেপরোয়া করে তোলে। দর্শনা রেলইয়ার্ডের চোরচক্রের বেপরোয়া হওয়ার দায় নিরাপত্তাকর্মীরা এড়াতে পারে কি? না, স্থানীয় সচেতন সমাজও এ দায় এড়াতে পারে না। বিদেশ থেকে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি ওই সীমান্ত দিয়েই মালামাল আমদানি বা রপ্তানি করে থাকেন, যেখানে নিরাপত্তা আছে। চুয়াডাঙ্গার দর্শনা রেলওয়ে জংশন ইয়ার্ডের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারলে এ রুট দিয়ে বিদেশ থেকে মালামাল আমদানিকারকরা যে আমদানি বন্ধ করে দেবেন তা বলাই বাহুল্য। চোরচক্রের অনেক সদস্যই চলন্ত ট্রেনে উঠে চুরি করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছে। অনেকেই অঙ্গ হারিয়ে পঙ্গু হয়েছে। এসব পরিবারের দিকে নজর দিলে দুটি বিষয় ফুটে ওঠে। একটি হলো মাদক, অপরটি দারিদ্র্য। দারিদ্র্যতার কষাঘাতে জর্জরিত অনেকেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চুরির পথে পা বাড়িয়ে ঝরে গেছে, কেউ কেউ হয়েছে পঙ্গু। এরপরও কি চুরি ও চোরকে সমর্থন করা যায়?
চুরিরোধে শক্ত পদক্ষেপই কাম্য। কোনোভাবেই চোরচক্রের সাথে আপস চলবে না। দারিদ্র্য দূর করতে কর্মসংস্থান গড়ে তোলার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ প্রয়োজন। মাদক উচ্ছেদ অপরিহার্য। নিরাপত্তাকর্মীদের শক্তি বৃদ্ধি করতে হবে। আর এ জন্য দরকার স্থানীয় প্রশাসনের আশু পদক্ষেপ। ঊর্ধ্বতন কর্তাদের দৃষ্টিগোচর করতে স্থানীয় কর্তাদের আন্তরিকতা প্রয়োজন। নিয়োজিত নিরাপত্তাকর্মীদেরও অনিয়ম দুর্নীতিমুক্ত করতে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা জরুরি। একই সাথে দরকার স্থানীয় সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টসসহ সচেতন মহলের চোরচক্রের বিরুদ্ধে শক্ত পদক্ষেপ নেয়ার মানসিকতা। যা হয়ে যাচ্ছে যাক, এ মানসিকতা পরিহার করতে না পারলে দর্শনার দিক থেকে আমদানি ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি মুখ ফিরিয়ে নেবে। তার নেতিবাচক প্রভাব থেকে দর্শনা মুক্ত হতে পারবে কি?