স্টাফ রিপোর্টার: জিল্লুর রহমান মিন্টু হত্যার কূলকিনারা হয়নি। পুলিশ এ হত্যাকাণ্ডের কোন ক্লু এখনও উদ্ধার করতে পারেনি। হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার পরপরই ডিবি পুলিশকে সাময়িকভাবে এ খুনের ক্লু উদ্ধারে মাঠে নামানো হয়।
যশোর জেলার চৌগাছা উপজেলার সিংহঝুলি ইউপি চেয়ারম্যান তরুণ যুবলীগ নেতা জিল্লুর রহমান মিন্টু পরশু খুন হন। গতকাল শুক্রবার থেকে চৌগাছায় শুরু হয়েছে হরতাল। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রকাশ্য দিবালোকে সন্ত্রাসীরা তাকে ইউপি ভবনের সামনে গুলি করে খুন করে পালিয়ে যায়। নিহত মিন্টুর স্বজনরা হত্যাকাণ্ডের পর থেকে চৌগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার আচরণকে রহস্যজনক বলে মনে করছেন। তাদের দাবি, ওসি গোলাম রহমানকে চৌগাছায় রেখে এ মামলার তদন্তে কোন অগ্রগতি আশা করা যায় না। কারণ খুনি চক্রের গডফাদারের একজন আশ্রিত হিসেবে ইতিমধ্যে তিনি নিজেকে পরিচিত করে তুলেছেন। তা ছাড়া খুনি শামীম ও নান্নুর সঙ্গে ওসির রয়েছে বিশেষ লেনদেনের সম্পর্ক।
নিহত ইউপি চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান মিন্টু ৯০’র দশকে যশোর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। তার পিতা মরহুম আতিউর রহমান ছিলেন চৌগাছা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও ডেইলি স্টারের সাবেক যশোর প্রতিনিধি। এর আগে গত ১৬ জুন ঝিনাইদহ শহরের আল-ফালাহ্ হাসপাতালের সামনে সন্ত্রাসীরা সদর উপজেলার নলডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমিনকে গুলি করে ও কুপিয়ে খুন করে। গত ১৮ মে সকালে খুলনা জেলার রূপসা উপজেলার আমদাবাদ স্কুলের সামনে বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট সদর উপজেলা ইউপি চেয়ারম্যান ও স্থানীয় উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক খান জাহিদ হাসান এবং তার মোটরসাইকেল চালক মুন্না শিকদারকে গুলি করে হত্যা করে। এর দু মাস আগে ২৪ মার্চ বিকালে যশোর জেলার শার্শা উপজেলার পুটখালি ইউপি চেয়ারম্যান ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রাজ্জাককে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়। তিনদিন আগে ২১ মার্চ রাতে সন্ত্রাসীরা মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর উপজেলা বিএনপির যুগ্মসম্পাদক ডা. হামিদুর রহমান হেলালকে কুপিয়ে ও বোমা মেরে হত্যা করে। পিতাকে বাঁচাতে গিয়ে তার কলেজ পড়ুয়া মেয়ে সেতুও (১৭) সন্ত্রাসীদের বোমা হামলায় নিহত হন। এর আগে গত বছরের ২৮ আগস্ট দুর্বৃত্তরা প্রকাশ্য দিবালোকে কুষ্টিয়া জেলার খোকসা উপজেলার আমবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম এবং তার দুই সঙ্গী আফজাল ও ভুট্টোকে পার্শ্ববর্তী কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহের কাছে পদ্মানদীর মাঝ বরাবর খেয়া নৌকার ওপর দেড় শতাধিক যাত্রীর সামনে গুলি করে হত্যা করে। এক সময়ের রক্তাক্ত জনপদখ্যাত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে একের পর এক ইউপি চেয়ারম্যান খুন হওয়ায় তাদের মধ্যে চরম নিরাপত্তাহীনতার সৃষ্টি হয়েছে। অনেক ইউপি চেয়ারম্যান জীবন বাঁচাতে জেলা শহরে আশ্রয় নিয়েছেন। ফলে এলাকার উন্নয়ন কাজ মারাত্মাকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অনেক ইউপি চেয়ারম্যান আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আরো হত্যাকাণ্ডের আশঙ্কা করছেন।
মাঠ পর্যায়ের উন্নয়ন কাজের মূল দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ইউপি চেয়ারম্যান। ইউপি চেয়ারম্যান হত্যাকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, গ্রাম্য কোন্দল, এলাকায় প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা, স্থানীয় রাজনৈতিক বিরোধ, হাট-বাজার ও ঘাট ইজারা গ্রহণ, চিংড়ি ঘের দখল, চোরাচালান এবং চরমপন্থিদলের সাথে সম্পর্ক ও বিরোধে জড়িয়ে পড়া এসব কারণ বিদ্যমান। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পরাজিত প্রার্থী কিংবা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক ব্যক্তিরা নিজেদের অবস্থানকে পাকাপোক্ত করার জন্যও ক্ষমতাসীন চেয়ারম্যানকে হত্যা করে। জীবন রক্ষার্থে ইউপি চেয়ারম্যানসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অনেক জনপ্রতিনিধি জেলা শহরে গিয়ে বসবাস করছেন। সেখানেও তারা সন্ত্রাসীদের টার্গেট হচ্ছেন। সিংহঝুলি ইউপি চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান মিন্টু হত্যাকাণ্ড এ অঞ্চলের জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে আতঙ্ক বাড়িয়ে দিয়েছে। অবিলম্বে এ অঞ্চলে যৌথবাহিনীর অভিযানের দাবি জানিয়েছেন তারা।