ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের দাবিতে গার্মেন্টস শিল্পে আবারও শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। যেখানে আট হাজার টাকা মজুরি বাড়ানোর দাবি করা হচ্ছে শ্রমিকদের পক্ষ থেকে, সেখানে মালিকপক্ষ মাত্র ৬০০ টাকা মজুরি বৃদ্ধির কথা বলেছে। ফলে মজুরি নিয়ে মালিক-শ্রমিক দ্বন্দ্ব এখন প্রকাশ্য রূপ নিয়ে তীব্র আকার ধারণ করেছে। এরই মধ্যে রাজধানীসহ সাভার-গাজীপুর-টঙ্গীতে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের সাথে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের সংঘর্ষ হয়েছে। এ পরিস্থিতি নিয়ে সোমবার সচিবালয়ে একটি ত্রিপক্ষীয় বৈঠকও হয়েছে। বৈঠক শেষে নৌপরিবহনমন্ত্রী শ্রমিকদের কাজে ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন। আজ থেকে সব গার্মেন্ট কারখানা খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
আট হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরির দাবিতে সোমবার টানা তৃতীয় দিনের মতো সড়কে নেমে বিক্ষোভ শুরু করে গাজীপুরের বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। তাদের অবরোধের কারণে সোমবার সকাল সাড়ে আটটা থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানচলাচল বন্ধ থাকে। বিশৃঙ্খলা এড়াতে ছুটি ঘোষণা করা হয় শতাধিক কারখানায়। বিক্ষুব্ধ পোশাক শ্রমিকরা টঙ্গীতে কয়েকটি বাসে ভাঙচুর চালায়। গাজীপুরের ভোগরা বাইপাস এলাকায় আনসার ক্যাম্পে হামলা চালিয়ে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা রাইফেল পুড়িয়ে দিয়েছে।
বিদেশে ইতিবাচক বাংলাদেশের ব্র্যান্ড ইমেজ সৃষ্টিতে এ দেশের গার্মেন্টস শ্রমিকদের অবদান খাটো করে দেখার কোনো উপায় নেই। বিদেশে বাংলাদেশের গার্মেন্টসের চাহিদা রয়েছে। দেশের পোশাক শ্রমিকদের একনিষ্ঠ শ্রমেই এ ইতিবাচক অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে; কিন্তু এটাও মেনে নিতে হবে, এ দেশের গার্মেন্টস শ্রমিকদের উন্নত জীবন নিশ্চিত করা যায়নি। বিষয়টি আন্তর্জাতিক ক্রেতা গোষ্ঠীতে আলোচিত হয়েছে। দেশের গার্মেন্টস শ্রমিকদের জীবনমান উন্নত করতে নানা কথা শোনা গেলেও তাদের বেতন বৃদ্ধির ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এর আগে একটি মজুরি বোর্ড গঠন করা হয়েছিলো। সেই মজুরি বোর্ড ন্যূন্যতম মজুরি তিন হাজার টাকা ধার্য করেছিলো। নতুন মজুরি বোর্ডের পঞ্চম সভায় মালিকপক্ষ থেকে ৬০০ টাকা বেতন বৃদ্ধির যে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে, তা মেনে নিতে পারেনি শ্রমিকপক্ষ। ফলে যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে, তারই সংক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে রাজপথে।
গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধির বিকল্প নেই। দেশে যে হারে খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি ঘটছে, তাতে ন্যূনতম বেতনে কোনো গার্মেন্টস শ্রমিকের দিনাতিপাত সম্ভব নয়। এদিকে দৃষ্টি দিয়ে শ্রমিকদের জন্য একটি সম্মানজনক মজুরি নির্ধারণ করা উচিত। পাশাপাশি নিশ্চিত করতে হবে শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ। সম্প্রতি দেশের গার্মেন্টস শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে তাজরিন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ড ও রানা প্লাজা ধসের ঘটনা গার্মেন্টস শ্রমিকদের কর্মপরিবেশকে আলোচনায় নিয়ে এসেছে। মানতে হবে, আমাদের দেশের গার্মেন্টস শ্রমিকরা দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখার পাশাপাশি বিদেশে দেশের পণ্যের চাহিদা সৃষ্টি করছে। কাজেই তাদের জীবনমানের বিষয়টি আমাদের মাথায় রাখতে হবে। শ্রমিকদের দাবির প্রতি সম্মান দেখাতে হবে। কারখানা বন্ধ করে কিংবা ছুটি ঘোষণা করে সমস্যার সমাধান হবে না। আমরা আশা করবো, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সংকটের মূলে হাত দেবে।