মানুষ মানুষের কাছে কতোটা মূল্যহীন গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে তা সমাজেরই কিছু দৃশ্য দৃষ্টিগোচর হলে ভাবতেই খেই হারায়। কিছু দৃশ্য বোকা বানায় যেন বিবেকবান সকলকে। শিউরে ওঠে শরীর, শরীরের রোম। চমকে যায় হৃদপিণ্ড। নিজেকে নিজের সামনে নিয়ে প্রশ্ন করতে ইচ্ছে হয়, কেমন আছিস হতভাগা? কবির কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে প্রশ্ন তুলতে ইচ্ছে করে- এ উপত্যকা কি এমন হওয়ার কথা ছিলো?
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে একের পর এক অজ্ঞাত পরিচয়ের নারী ও পুরুষকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় ভর্তি করা হচ্ছে। তাদের অধিকাংশই চিকিৎসা পেয়ে অথবা না পেয়ে মারা যাচ্ছে। অধিকাংশেরই পরিচয় মিলছে না। অজ্ঞাত পরিচয়ের বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে দাফন কাজ সম্পন্ন করা হচ্ছে। গত রোববারও মধ্যবয়সী এক নারীকে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে দাফন করা হয়েছে। অথচ তার অসুস্থতা সম্পর্কে খোঁজখবর নেয়া হয়নি। তাকে যখন হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তখন তার সাথে থাকা লোকটিও মহিলার পরিচয় দিতে পারেননি। লোকটি তার নিজের পরিচয়ও বিস্তারিত দেননি। একজন মানুষ অমানবিকভাবে পোকার আক্রমণের শিকার হচ্ছেন অথচ কারণ জানা হচ্ছে না। কে জানবে তাও যেন বুঝে উঠতে পারছে না সমাজের দায়িত্বশীলেরা। এসব দেখে বিবেকবান যেকোনো ব্যক্তিরই প্রশ্ন জাগতে পারে, কেউ কি তাকে হত্যার জন্যই নারকীয় কোনো যন্ত্রণার মধ্যে ফেলে রেখেছিলো? জবাব নেই। জবাব খোঁজার জন্য নিয়োজিতদের দস্তাবেজে এসব বেওয়ারিশ লাশের পরিসংখ্যান দূরাস্ত। অবস্থাদৃষ্টে বিবেকবানের প্রশ্ন জাগতেই পারে, আমরা কোথায় আছি, কেমন আছি? মানুষ আছি তো?
গত শুক্রবার দুপুরে মধ্যবয়সী নারীকে হাসাপাতালে ভর্তি করা হয়। পরদিন মারা যান তিনি। ভর্তির সময়ও মানুষটার চোখে ও মাথায় থকথকে পোকা ছিলো। সংজ্ঞাহীন নারীর শেষ পর্যন্ত পরিচয় মিললো না কেন? কোথা থেকে এলো, কে তাকে হাসপাতালে নিলো? মৃত্যুর পরও কেনইবা পুলিশি তদন্ত হলো না? মানুষের সমাজে মানুষ অতো মূল্যহীন হয়ে পড়লে নিজেকে কি মানুষ বলে দাবি করা চলে?