ঝিনাইদহে বিলবোর্ড-সাইনবোর্ড দখলের প্রতিযোগিতা : আগামী ৫ অক্টোবর ঝিনাইদহে আসছেন প্রধানমন্ত্রী

ঝিনাইদহ অফিস: এবার বিলবোর্ড দখল চলছে ঝিনাইদহে। দখল করা হচ্ছে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডও। গত এক সপ্তায় শহরের বিভিন্ন মোড়ে থাকা বিলবোর্ড ও দোকানের সাইনবোর্ডগুলো সরকার দলীয় বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা দখল করে নিয়েছেন। এ দখল করা বোর্ডের লেখা ঢেকে তারা প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি তাদের ব্যক্তিগত পরিচিতি ও ছবি দিয়ে ব্যানার-বোর্ড সাটিয়েছেন। এ দখল অব্যাহত রয়েছে।

আগামী ৫ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঝিনাইদহে আসবেন, তার এ আগমন সামনে করে শুরু হয়েছে বোর্ড দখলের হিড়িক। আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের পাশাপাশি স্থানীয় অন্য নেতারাও এ বোর্ড দখল অব্যাহত রেখেছেন। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এভাবে তাদের ব্যবসার প্রচারণার ক্ষতি করা হচ্ছে। আর পৌরসভা কর্তৃপক্ষ বলছেন, এ সকল বিলবোর্ড সাটানোর ক্ষেত্রে তাদের কাছ থেকে কোনো অনুমোদন নেয়া হয়নি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ঝিনাইদহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে এই বোর্ড দখল করা হয়েছে। শহরের পোস্ট অফিস মোড়, পাঁয়রা চত্বর, চুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড এলাকা, ওয়াজির আলী স্কুল এলাকা, হামদহ, আরাবপুর এলাকায় চলছে এই দখল প্রক্রিয়া। ইতোমধ্যে ওই সকল এলাকার বেশির ভাগ সাইনবোর্ড ও বিলবোর্ড দখল হয়ে গেছে। সেখানে ইতঃপূর্বে সাটানো আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাদের কিছু বোর্ড রয়েছে। আর গত সপ্তা থেকে শুরু হয়েছে সরকার দলীয় নেতাদের ব্যক্তিগত পরিচিতির বোর্ড-ব্যানার।

শহরের পোস্টঅফিস মোড়ে বেশি চোখে পড়ছে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও ঝিনাইদহ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জেডএম রশিদুল ইসলামের বোর্ড ও ব্যানার। এখানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আব্দুল হাই এমপি, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক কনক কান্তি দাস, জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক হারুন-অর রশিদসহ ছাত্রলীগ, যুবলীগ, শ্রমিকলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের প্রচারণার বোর্ড ও ব্যানার রয়েছে। এ স্থানে মোবাইল কোম্পানি ও বাটারফ্লাই’র বেশ কয়েকটি বৃহৎ আকৃতির বিলবোর্ড দখল করে নেয়া হয়েছে। দখল করা ওই বোর্ডগুলোর ওপর ডিজিটাল ব্যানার সাটানো হয়েছে। শহরের চুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে চোখে পড়ার মতো আছে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. আজিজুর রহমান, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান কনক কান্তি দাস ও পৌর মেয়র সাইদুল করিম মিন্টুর বোর্ড। পাশাপাশি রয়েছে ভাইস চেয়ারম্যান জেডএম রশিদুল ইসলামের বোর্ড ও ব্যানার। ওয়াজির আলী স্কুলের সামনে রয়েছে সরকার দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের প্রচারণার বোর্ড ও ব্যানার।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে অভিযোগ করেছেন, তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড দখল করে নেতারা ব্যানার সাটিয়ে দেন, এতে তাদের ব্যবসার মারাত্মক ক্ষতি হয়। কারণ প্রচারে প্রসার বলে একটা কথা আছে। তারা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পরিচিতি ও প্রচারের জন্য এ সাইনবোর্ড দিয়ে থাকেন। কিন্তু বছরের বেশির ভাগ সময় তাদের সেই সাইনবোর্ডগুলো থাকে রাজনৈতিক নেতাদের দখলে। এক ওষুধ ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, একবার এগুলো সাটানোর পর নেতারা সেগুলো আর খুলতে চান না। জাতীয় কোনো নেতার এ জেলায় আগমন ঘটলে এগুলো বেশি সাটানো হয়। সেই নেতার প্রস্থানের পরও আর বোর্ড ব্যানার খোলা হয় না। ব্যবসায়ীরা ভয়ে পরবর্তীতেও এগুলোতে হাত দেন না। এটা সরকার দল ও বিরোধীদল উভয়ই করে থাকেন বলে ওই ব্যবসায়ী জানান।

এ ব্যাপারে জেলা শ্রমিকলীগের সভাপতি আক্কাচ আলী জানান, তারা যে বিলবোর্ডে বোর্ড বা ব্যানার সাটান ওই বিলবোর্ড কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে সাটান। তাছাড়া ক্ষণিকের জন্য এগুলো সাটানো হয়, এতে ব্যবসায়ীদের খুব বেশি ক্ষতি হয় না। তিনি জানান, পুরাতন কয়েকটি বোর্ড তার ছবিসহ সাটানো আছে। তবে প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে আরো কিছু বোর্ড ইতোমধ্যে তৈরি করেছেন। যেগুলো সাটাবেন।

ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান জানান, দলীয়ভাবে কোনৌ বোর্ড তারা এখনও দেননি। যারা দিয়েছেন তারা ব্যক্তিগতভাবে দিয়েছেন। তবে দলের পক্ষ থেকে কিছু বোর্ড দেয়া হবে। সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড প্রচারে এগুলো তৈরির কাজ চলছে। এগুলো দেয়ার ক্ষেত্রে স্ব-স্ব কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করা হবে।

বিলবোর্ড দখল হয়েছে এমন একটি প্রতিষ্ঠান বাটারফ্লাই। শহরের পোস্টঅফিস মোড়ে দেয়া তাদের বিশাল আকৃতির বিলবোর্ড দখল হয়ে গেছে। এ বিষয়ে বাটারফ্লাই’র স্থানীয় শো’রুমের ব্যবস্থাপক শাহ আলম জানান, তাদের সাথে কথা বলে কেউ এগুলোর ওপর ছবি সাটাননি। তারা তাদের ইচ্ছায় করেছেন।

ঝিনাইদহ পৌরসভার সচিব আজমল হোসেন জানান, পৌর এলাকার মধ্যে কেউ কোনো বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য বোর্ড দিলে পৌরসভাকে নির্ধারিত ফিস দিতে হয়। সেটা সবার ক্ষেত্রে সমান আইন। কিন্তু রাজনৈতিক নেতারা সাধারণত এটা দেন না। গত দু দিনে যে বোর্ড ও ব্যানার দেয়া হয়েছে সেগুলোর ক্ষেত্রেও পৌরসভার কোনো অনুমোদন নেই। যারা পৌরসভা থেকে অনুমোদন নিয়ে বোর্ড সাটিয়েছেন তাদের বোর্ড দখলের বিষয়ে পৌরসভার করণীয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, কেউ অভিযোগ দিলে তারা পদক্ষেপ নেবেন। তবে এখনও কেউ অভিযোগ নিয়ে আসেননি।