বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে আহত ৭০ : ১৫ জন গ্রেফতার

কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের মুক্তির দাবিতে চুয়াডাঙ্গাসহ সারাদেশে জামায়াতের বিক্ষোভ :

 

মাথাভাঙ্গা ডেস্ক: কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল সোমবার দেশব্যাপি বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে জামায়াত-শিবির। এ সময় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে দলটির নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে পুলিশসহ ৭০ জন আহত হয়েছে। এ সময় জামায়াত-শিবিরের ১৫ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লাসহ জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের ও ১৮ দলীয় জোটের নেতাকর্মী এবং আলেমদের মুক্তি, সরকারের নৈরাজ্য সৃষ্টি ও ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে সোমবার দেশব্যাপি বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে দলটি। চুয়াডাঙ্গায়ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে জামায়াত।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গতকাল সোমবার দুপুর ২টার দিকে রাজধানীর নিউমার্কেট থানা এলাকার নীলক্ষেতে পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মঞ্জুরুল ইসলাম ভুইয়ার নেতৃত্বে দলটির নেতাকর্মীরা মিছিল বের করলে পুলিশ বাধা দেয়। এতে ক্ষিপ্ত জামায়াত-শিবির কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটাতে থাকে। পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যানসহ বেশ কটি যানবাহনও ভাঙচুর করে জামায়াত-শিবির কর্মীরা। পুলিশও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কয়েক রাউন্ড টিয়ার শেল ও ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে। সংঘর্ষে দু পুলিশ সদস্যসহ ১০-১২ জন আহত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়ার পর ওই এলাকা থেকে জামায়াত-শিবিরের কর্মী সন্দেহে সাত-আটজনকে আটক করেছে পুলিশ। দুপুর আড়াইটার দিকে রাজধানীর মগবাজার এলাকায় জামায়াত-শিবির কর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করে। এ সময় পুলিশ তাদের ধাওয়া দিলে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে পালিয়ে যায়।

এদিকেব রাজশাহী নগরীতে শিবির কর্মীদের সাথে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে দু পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছে। সোমবার বেলা ১১টার দিকে সাহেব বাজারের গণকপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় শিবির ক্যাডাররা মুহুর্মুহু ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ অর্ধশতাধিক রাবার বুলেট, টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। তবে এ ঘটনায় কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ
সিলেটে ফের পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে জামায়াত-শিবির। নগরীর বন্দরবাজারে ঝটিকা মিছিল থেকে পুলিশের ওপর হামলা চালানো হয়। এ সময় তারা সিটি কর্পোরেশনের ময়লাবাহী গাড়িসহ অন্তত ২০টি গাড়ি ভাঙচুর করে। পুলিশ এসব ঘটনায় ১৬ শিবির নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে। সকালে নগরীরর বন্দর বাজারে ঝটিকা মিছিল বের করে শিবির। ময়লা-আবর্জনা নেয়ার জন্য অপেক্ষায় থাকা সিটি কর্পোরেশনের আবর্জনাবাহী একটি গাড়িসহ অন্তত ২০টি গাড়ি ভাঙচুর করে শিবির ক্যাডাররা। এ সময় শাহপরান থানার এএসআই হুমায়ুন কবির মোটরসাইকেলে ওই সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় শিবির কর্মীরা তার ওপর হামলা চালায়।

এদিকে কেন্দ্রীয় নেতাদের মুক্তির দাবিতে চুয়াডাঙ্গায় জামায়াতে ইসলামী বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। গতকাল সোমবার সকালে পৌর জামায়াতের উদ্যোগে চুয়াডাঙ্গা শহরের রেলবাজার থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে শহরের পুরাতন ঝিনাইদাহ বাসস্ট্যান্ডে শেষ হয়। পরে বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য দেন জেলা শুরা সদস্য অ্যাড. মসলেম উদ্দিন, অ্যাড. আসাদুজ্জামান, পৌর সেক্রেটারি অ্যাড. মাসুদ পারভেজ,  বায়তুল মাল সেক্রেটারি কামাল উদ্দিন প্রমুখ।

দামুড়হুদা অফিস জানিয়েছে, দামুড়হুদায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে জামায়াত। জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মাও. আজিজুল হকের নেতৃত্বে গতকাল সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে দামুড়হুদার দেউলী মোড় থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি দামুড়হুদা ব্রিজ পার হয়ে শহরের ভেতর ঢোকার চেষ্টা করলে ব্রিজ মোড়েই পুলিশি বাধার মুখে পড়ে। এ সময় জামায়াতের নেতাকর্মীরা সেখানেই সংক্ষিপ্ত পথসভা শুরু করলে সেটিও পুলিশ করতে দেয়নি। তখন জামায়াতের নেতাকর্মীরা মিছিলটি সেখান থেকে আবার দেউলী মোড়ে ফিরে এসে সংক্ষিপ্ত এক পথসভা করে। বক্তব্য রাখেন জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মাও. আজিজুল হক, দামুড়হুদা থানা আমির নায়েব আলী, সেক্রেটারি আব্দুল গফুর ও দামুড়হুদা সদর ইউনিয়ন আমির দামুড়হুদা আব্দুল ওদুদ শাহ্ ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক সদর ইউপি চেয়ারম্যান শরীফুল আলম মিল্টন প্রমুখ।

দর্শনা অফিস জানিয়েছে, ফজরের নামাজের পরপরই দর্শনায় জামায়াতের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। দেশব্যাপি জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল সোমবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে জামায়াতের দামুড়হুদা উপজেলা শাখার উদ্যোগে দর্শনা বাসস্ট্যান্ড থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিল শেষে দর্শনা রেলবাজারের বটতলা চত্বরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেছে বলে জানিয়েছেন জামায়াত নেতৃবৃন্দ। সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য দেন পৌর জামায়াতের আমির আব্দুল কাদের, সেক্রেটারি গোলজার হোসেন, জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি হাফেজ বেলাল, থানা সভাপতি অপু, জামায়াত নেতা আশকার আলী, রাসেল প্রমুখ। এ সময় বক্তারা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, আব্দুল কাদের মোল্লাসহ আটক কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ সকল রাজবন্দীর মুক্তি ও আ.লীগ সরকারের পদত্যাগপূর্বক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন দাবি করে। এদিকে জামায়াত-শিবিরের মিছিল ও সমাবেশের খবর পেয়ে দর্শনা আইসি পুলিশ ছুটে এলেও পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছুনোর আগেই মিছিল ও সমাবেশ সম্পন্ন হয়ে যায়। তবে পুলিশ রয়েছে তৎপর।

সরোজগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, জামায়াতে ইসলামীর আটক নেতৃবৃন্দের নিঃশর্ত মুক্তি ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে চুয়াডাঙ্গা সদর থানা জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে গতকাল সোমবার সরোজগঞ্জ বাজারে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি সরোজগঞ্জ বাজারের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে মসজিদ মার্কেটের নিকট সমাবেশে আয়োজন করা হয়। বক্তব্য রাখেন খুলনা বিভাগীয় সহসম্পাদক মাও. আব্দুল মোতিন চুয়াডাঙ্গা জেলা আমির আনারুল হক মালিক, জেলা শুরা সদস্য অ্যাড. আসাদুজ্জামান, চুয়াডাঙ্গা সদর থানা আমির আব্দুর রউফ মিয়া, পদ্মবিলা ইউনিয়ন আমির ছানোয়ার হোসেন, শঙ্করচন্দ্র ইউনিয়ন আমির ওসমান গনি, তিতুদহ ইউনিয়ন আমির রেজাউল করিম, বেগমপুর ইউনিয়ন আমির হুমায়ূন কবির, কুতুবপুর ইউনিয়ন আমির আব্দুল জব্বার, সদর থানা ছাত্রশিবির পশ্চিম সভাপতি কবির হোসেন, সরোজগঞ্জ আঞ্চলিক শাখা জমায়াতের সভাপতি মাজাহারুল ইসলাম প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন মকলেচুর রহমান লিটন।

জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, দেশব্যাপি জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল সোমবার সকালে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা জীবননগরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। ভোর ৬টার দিকে উপজেলা শহরের পেট্রোল পাম্প থেকে শুরু হয়ে বাসস্ট্যান্ড চৌরাস্তা মোড়ে এসে মিছিলটি শেষ হয়। মিছিল শেষে সমাবেশে বক্তারা বলেন, অবিলম্বে মাও. দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, আব্দুল কাদের মোল্লাসহ আটক সকল কেন্দ্রীয় নেতার মুক্তি ও আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগপূর্বক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে হবে।