কলাবাড়ির করিমনচালক শাহাবুদ্দিন খুন : দ্বিতীয় স্ত্রী বিলকিসসহ গ্রেফতার তিন

চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদার রামনগর কলাবাড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অদূরবর্তী মাঠ থেকে রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার

 

স্টাফ রিপোর্টার: দামুড়হুদা কলাবাড়ি দক্ষিণপাড়ার করিমনচালক শাহবুদ্দিনকে (৩৭) এলোপাতাড়ি কুপিয়ে খুন করা হয়েছে। রামনগর-কলাবাড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অদূরবর্তী গোপালপুর গ্রামের অটলাচরা মাঠের রাস্তার নিকট থেকে তার লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল রোববার সকালে এলাকাবাসীর খবরের ভিত্তিতে দামুড়হুদা মডেল থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে।

নিহত শাহাবুদ্দিনের পিতা বিল্লাল হোসেন বাদী হয়ে দামুড়হুদা মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছেন। অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ শাহাবুদ্দিনের দ্বিতীয় স্ত্রী বিলকিস (৩০), শাশুড়ি চায়না খাতুন ( ৪৩) ও শ্বশুর বিল্লাল হোসেনকে (৫০) গ্রেফতার করেছে। গতকালই এদেরকে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে থানা কাস্টডিতে নিয়ে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ সময় বিলকিস বলেছে, স্বামী শাহাবুদ্দিনের সাথে কোনো বিরোধ ছিলো না। গত শনিবার বিকেলে আমার বাড়িতেই ছিলো। অজ্ঞাত স্থান থেকে অজ্ঞাত পরিচয়ের এক ব্যক্তি মোবাইলফোন করে। প্রথম দফায় ফোনটি না ধরলেও দ্বিতীয় দফায় ফোন ধরে। কথা বলে। কথা বলে অস্থির হয়ে ওঠে। কিছুক্ষণের মধ্যেই বাজারে যাচ্ছি বলে বের হয়। এরপর আর বাড়ি ফেরেনি। রাত সাড়ে ১০টার দিকে মোবাইলফোনে রিং করি। ফোনটি ওই সময় বন্ধ ছিলো। সকালে লাশ পড়ে থাকার খবর পাই।

2nd2

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদার জুড়ানপুর ইউনিয়নের কলাবাড়ি দক্ষিণপাড়ার বিল্লাল হোসেনের ছেলে শাহাবুদ্দিন ভ্যান চালাতো। পরে সে শ্যালোইঞ্জিনচালিত করিমন চালানো শুরু করে। ১৫ বছর আগে সে বিষ্ণপুরের মেয়ে আফরোজা খাতুনের সাথে বিয়ে করে। সংসার পাতে। এ সংসারে রয়েছে দু কন্যা। বড় মেয়ে রুমার বয়স ১২ ও ছোট মেয়ে ঝুমার বয়স এখন ৫ বছর। ঘরে স্ত্রী সন্তান থাকতেও করিমনচালক শাহাবুদ্দিনের সাথে একই গ্রামের বিল্লালে মেয়ে বিলকিসের সাথে প্রেমসম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিলকিসের পূর্বে বেশ কয়েকবার বিয়ে হয়। একাধিক স্বামী পরিত্যক্ত বিলকিসের সাথে চরমপন্থি কানেকশনের অভিযোগও বেশ পুরোনো। বছর খানেক আগে শাহাবুদ্দিনের সাথে বিলকিসের বিয়ে হয়। গ্রামের একাধিক ব্যক্তি বলেছেন, বিলকিসের এটা সম্ভবত সপ্তম স্বামী। বিলকিসের সাথে বিয়ের পর শাহাবুদ্দিন বিলকিসের পিতার বাড়িতেই থাকা শুরু করে। চলাফেরা দেখে অনেকেই সন্দেহও করতে থাকে। প্রথম স্ত্রীর সাথে শাহাবুদ্দিনের যোগাযোগ অনেকটাই বিছিন্ন হয়ে পড়ে। সম্প্রতি অবশ্য খোঁজখবর রাখতো। এতে বিলকিসের সাথে মাঝে মাঝে ঝগড়াও বাধে। এরই এক পর্যায়ে গতপরশু রাতে তাকে নৃশংসভাবে প্রাণ হারাতে হয়েছে। তাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে খুন করা হয়েছে। গলাতেও কোপ মারা হয়েছে। লাশ যেখানে পড়ে ছিলো সেখানেই তাকে খুন করা হয়েছে নাকি অন্য স্থানে খুনের পর সেখানে লাশ ফেলে রাখা হয়েছে তা নিয়ে অনেকের মধ্যেই সন্দেহ দানা বেধেছে।

পুলিশ বলেছে, শাহাবুদ্দিনের লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা তার নিকটজনদের খবর দেয়। পরে খবর দেয়া হয় পুলিশে। খবর পেয়ে দামুড়হুদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) আব্দুল মালেক, ইব্রাহিমপুর পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই আকরাম হোসেন সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান। তারা লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে নেন। দুপুরে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়। লাশ তার নিকটজনেরা গ্রহণ করেন। নিজ গ্রাম্য কবরস্থানে দাফন কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। শাহাবুদ্দিনের পিতা বাদী হয়ে গতকালই দামুড়হুদা মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার বাদী জানান, দ্বিতীয় স্ত্রী বিলকিসের সাথে চরমপন্থিদের যোগাযোগ রয়েছে। বিলকিসই তার পরিচিত চরমপন্থিদের দিয়ে শাহাবুদ্দিনকে খুন করিয়েছে। অপরদিকে গতরাতে মোবাইলফোনে অজ্ঞাত স্থান থেকে জনৈক ব্যক্তি নিজেকে পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টির (এমএল) আঞ্চলিক কমান্ডার রাসেল বলে পরিচয় দিয়ে এ খুনের দায় দায়িত্ব স্বীকার করেন। তিনি বলেন, সুমনের পক্ষে দায়িত্ব স্বীকার করা হলো। এলাকার খারাপ কিছু লোকের সাথে মিশে সে চাঁদাবাজি করতো, এ কারণেই তাকে মারা হয়েছে বলেও মোবাইলফোনে জানানো হয়।

দামুড়হুদা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ ইন্সপেক্টর আহসান হাবিব পিপিএম বলেছেন, লাশ উদ্ধারের পর পরই তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে নিহত শাহাবুদ্দিনের দ্বিতীয় স্ত্রী বিলকিস, বিলকিসের পিতা বিল্লাল ও মা চায়না খাতুনকে গ্রেফতার করে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এদের সাথে একই গ্রামের যদু এবং টোকনের সাথে বিশেষ সম্পর্কের প্রাথমিক তথ্য মিলতে শুরু করেছে। এদের অবস্থান সম্পর্কে খোঁজখবর নেয়ার পাশাপাশি সার্বিক দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।