স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা শহরে গতকাল শনিবার বিকেলে কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শামসুল আবেদীন খোকন চুয়াডাঙ্গায় পথ সভা করবেন খবরে উত্তেজনা দানা বাধে। দু পক্ষ পৃথক স্থানে অবস্থান নিলেও শেষ পর্যন্ত মুখোমুখি হতে দেয়নি পুলিশ। ফলে ভয়ঙ্কর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ থেকে রক্ষা পেয়েছে উভয় পক্ষ।
জানা গেছে, শনিবার সকাল থেকেই চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরে খবর ছড়াই চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি আলী আহম্মেদ, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা হাবিবুর রহমান লাভলু ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওবাইদুর রহমান চৌধুরী জিপুর নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা শামসুল আবেদীন খোকন চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরে প্রবেশ করবেন। চুয়াডাঙ্গা শহীদ হাসান চত্বর মোড়ে পথসভায় বক্তব্য দেবেন। বিকেল ৫টায় চুয়াডাঙ্গায় খোকন আসার কথা জেনে স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা তারেক-রাজু তাদের পক্ষের নেতাকর্মী সমর্থকদের সাথে নিয়ে চুয়াডাঙ্গা পৌরসভা মোড়ে ও চুয়াডাঙ্গা একাডেমী মোড়ে মোহড়া জোরদার করে। এছাড়া শহরের প্রতিটি মোড়ে আলী আহম্মেদ-জিপু ও দুদু-লাভলু গ্রুপের সদস্যরা অবস্থান নেয়। আওয়ামী লীগ সমর্থিত দু গ্রুপের এ পাল্টাপাল্টি মহড়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজনা তীব্র হয়ে ওঠে। পুলিশ শহরের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে শক্ত অবস্থান নেয়। মাঠে নামে ডিএসবি, ডিবি পুলিশসহ রণসাজে সজ্জিত পুলিশ সদস্যরা। বিকেল ৩টা পার হওয়ার সাথে সাথে শহরের প্রধান সড়কের দোকানপাট আস্তে আস্তে বন্ধ হতে থাকে। সেইসাথে দু গ্রুপের শক্তি ও জনবল বাড়তে থাকায় শহরব্যাপি উত্তেজনার উত্তাপ ছড়াতে থাকে। ঘড়ির কাটায় তখন বিকেল ৫টা। তখনও শামসুল আবেদীন খোকন চুয়াডাঙ্গা শহরে প্রবেশ করেননি। এভাবে বেশ কিছুটা সময় অতিবাহিত হয়। প্রধান সড়কের দোকানদারা এতোক্ষণে দোকান বন্ধ করে বাইরে অবস্থান নিয়ে ঘটনা প্রত্যক্ষ করার জন্য রাস্তার পাশে ভীড় জমায়। কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা খোকন চুয়াডাঙ্গায় আসচ্ছেন না বলে গুঞ্জন উঠলে দোকানদাররা আবার তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা শুরু করে। কিন্তু সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটের দিকে মাগরিবের নামাজের কয়েক মিনিট আগে শামসুল আবেদীন খোকনের গাড়িবহর দৌলাতদিয়াড় ব্রিজ পেরিয়ে চুয়াডাঙ্গা শহীদ হাসান চত্বর হয়ে বড়বাজারে বেঙ্গল টাউয়ারের সামনে থামায়। সাথে সাথে আবার শহরে উত্তেজনা বেড়ে যায়। পুলিশ সদস্যরা নড়ে-চড়ে বসেন। মুহূর্তের মধ্যে আবার দোকান-পাট বন্ধ হতে থাকে। এ সময় বড়বাজার বেঙ্গল টাউয়ার ও রয়েল কাউন্টারের মাঝামাঝি জায়গায় দাঁড়িয়ে শামসুল আবেদীন খোকন বক্তব্য দিতে শুরু করেন। এ বারে উত্তেজনার বারুদ দ্বিগুন গতিতে উত্তাপ ছড়াতে থাকে। পুলিশ সদস্যরা ফাতেমা প্লাজা থেকে শুরু করে গ্রীনফুড এলাকা পর্যন্ত কঠোর নিরাপত্তা বেস্টনির চাঁদর গড়ে তোলে। দু পক্ষের সন্দেহভাজন কাউকে একে অপরের দিকে যেতে চাইলে পুলিশ বাধ সাধে। বড়বাজার এলাকা থেকে জয়বাংলা স্লোগান হুঙ্কার দিয়ে ভেসে আসে আওয়াজ। পৌরসভা মোড় থেকেও ভেসে আসে জয়বাংলার স্লোগান। এভাবে মিনিট ১৫ মতো বক্তব্য রাখেন শামসুল আবেদীন খোকন। মাগরিবের আজান শুরু হয়ে যাওয়ায় শামসুল আবেদীন খোকনের বক্তব্যের মূল কথাগুলো ভালোভাবে বোঝা না গেলেও প্রত্যক্ষ নিকটবর্তী শ্রোতারা জানিয়েছেন, তিনি চুয়াডাঙ্গা আওয়ামী লীগে পারিবারিক তন্ত্র বাদ দিয়ে গণতান্ত্রিক ধারা চালু করার মাধ্যমে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর হাতকে আরো শক্তিশালী করে নির্বাচনে আবারো বিজয় নিশ্চিত করতে কাজ করার আহ্বান জানান।
বক্তব্য শেষে স্থানীয় জিপু গ্রুপের নেতৃবৃন্দের সাথে সংক্ষিপ্ত আলাপ করে সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটের দিকে বিলাসবহুল গাড়িতে চড়ে শহীদ হাসান চত্বর হয়ে দৌলাতদিয়াড় ব্রিজ পার হয়ে ভালাইপুর মোড় হয়ে আলমডাঙ্গার দিকে যাত্রা করেন যুবলীগ নেতা খোকন। এ সময় শামুসল আবেদীন খোকনের গাড়িবহর চলে যাওয়ার সাথে সাথে পুলিশ সদস্যরা পৌরসভা মোড়ের দিকে যেতে থাকে। পুলিশের মোবাইল ফোনে খবর আসে অপর পক্ষের মিছিল নিয়ে চৌরাস্তার দিকে আসছে। দ্রুত অ্যাকশন নিয়ে পুলিশ সদস্যরা প্রধান সড়কের প্রিন্সপ্লাজার সামনে মিছিল আটকে দেয়। পুলিশ চলে যাওয়ায় বেঙ্গল টাউয়ারের সামনে জিপু গ্রুপের সদস্যরা মিছিলের মোকাবেলা করার জন্য প্রয়োজনীয় সাজে সজ্জিত হয়ে শক্ত অবস্থান গড়ে তোলে। তবে পুলিশ সদস্যদের জোরালো ভূমিকায় দু পক্ষ মুখোমুখি হতে পারেনি। বেঙ্গল টাউয়ারের সামনে অবস্থানকারীরা শহীদ হাসান চত্বরে ইট নিক্ষেপ করে। ব্যবসায়ীরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে। পুলিশ মসজিদ প্রাঙ্গণে অবস্থান নিলে বেঙ্গল টাউয়ারের সামনের অবস্থাকারীরা ভিজে স্কুল সড়ক হয়ে কোর্টের দিকে রওনা হয়। কিছুক্ষণ পর পৌরসভা মোড় থেকে মিছিল নিয়ে অপর পক্ষ শহীদ হাসান চত্বরে পৌঁছায়। সেখানে থাকা জিপুর কিছু পোস্টার বিলবোর্ড ভাঙচুর করে। পুলিশি বাধার মুখে এ মিছিলটি অবশ্য কোর্টের দিকে যেতে পারেনি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা (ডিবি, ডিএসবি) শহরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে শাদা পোশাকে অবস্থান নিয়ে সার্বক্ষণিকভাবে উত্তেজনার অবস্থান জানিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি ঘটিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছেন। না হলে বড় ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে থাকতে পারতো।