দৌলতপুরে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে শহীদ মিনার নির্মাণের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

এলজিএসপির পৌনে ২ কোটি টাকা লোপাট

 

দৌলতপুর প্রতিনিধি: ২০১২-১৩ অর্থ বছরে এলজিএসপি-২ প্রকল্পের আওতায় উপজেলার ৭ নং হোগলবাড়িয়া ইউনিয়নের শহীদ রফিকনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য ১ লাখ টাকা বরাদ্দ থাকলেও বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে কোনো শহীদ মিনার দেখা যায়নি। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু নঈম তুহিন জানান, দু মাস আগে এখানে শহীদ মিনার তৈরি করা হবে বলে স্থানীয় ইউপি সদস্য এলেও অদ্যবধি আর কেউ কোনো খোঁজ নেননি। এরপরও ইউপি চেয়ারম্যান বিল্লাল হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি দাবি করেন, তার ইউনিয়নে এসজিএসপি’র শতভাগ কাজ হয়েছে। কোনো দুর্নীতি বা অনিয়ম হয়নি। চেয়ারম্যানের দাবির প্রেক্ষিতে ৩০ জুনের মধ্যে কাজ শেষ হওয়া শহীদ মিনারটি কোথায় জানতে চাইলে তিনি জানান, হয়তো কাজটি এখনো হয়নি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে জানাতে পারবো। একই ইউনিয়নের জয়রামপুর আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পুরাতন ঘর ঢেউটিনসহ মেরামতের ১ লাখ টাকা কাজ না করে আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে স্থানীয় বাসীন্দারা জানিয়েছে।

উপজেলার ১৪ ইউনিয়নের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কর্তৃক এলজিএসপি-২ প্রকল্পের আওতায় স্থানীয় সরকার বিভাগের মাধ্যমে বাস্তবায়নাধীন ইউনিয়নগুলোতে সরাসরি বরাদ্দকৃত প্রায় পৌনে ২ কোটি টাকার নামকাওয়াস্তে কাজ দেখিয়ে অধিকাংশ ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে একইভাবে আত্মসাৎ করেছে সংশ্লিষ্টর ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপ সদস্য, সংশ্লিষ্ট ট্যাক অফিসার ও কর্মকর্তারা।

উপজেলা নির্বাহী কমকর্তার কার্যালয়সূত্রে জানা গেছে, ২০১২-২০১৩ অর্থ বছরে স্থানীয় সরকার বিভাগের মাধ্যমে বাস্তবায়নাধীন এলজিএসপি-২ প্রকল্পের আওতায় উপজেলার প্রাগপুর ইউনিয়নে বরাদ্দকৃত ১৭ লাখ টাকার বিপরীতে ১৭টি, মথুরাপুর ইউনিয়নে বরাদ্দকৃত ১৪ লাখ টাকার বিপরীতে ১৬টি, ফিলিপনগর ইউনিয়নে বরাদ্দকৃত ১৬ লাখ টাকার বিপরীতে ১৮টি, রামকৃঞ্চপুর ইউনিয়নে বরাদ্দকৃত ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকার বিপরীতে ১৩টি, হোগলবাড়িয়া ইউনিয়নে বরাদ্দকৃত ২০ টাকার বিপরীতে ১৮টি, পিয়ারপুর ইউনিয়নে বরাদ্দকৃত ১৬ লাখ টাকার বিপরীতে ১১টি, রিফাইতপুর ইউনিয়নে বরাদ্দকৃত ১৫ লাখ টাকার বিপরীতে ১৭টি, দৌলতপুর ইউনিয়নে বরাদ্দকৃত ১৬ লাখ টাকার বিপরীতে ১৭টি, আদাবাড়িয়া ইউনিয়নে বরাদ্দকৃত ৬ লাখ ৫০হাজার টাকার বিপরীতে ৫টি, বোয়ালিয়া ইউনিয়নে ১৩ লাখ টাকার বিপরীতে ১২টি, খলিশাকুণ্ডি ইউনিয়নে ১৪ লাখ টাকার বিপরীতে ২০টি এবং আড়িয়া ইউনিয়নে বরাদ্দকৃত ১৩ লাখ টাকার বিপরীতে ১২টি প্রকল্প গৃহীত হয়। তবে, গত বছরে দুর্নীতি প্রমাণিত হওয়ার কারণে চিলমারী এবং মরিচা ইউনিয়নে এবার ২য় কিস্তির বরাদ্দ আসেনি। সরেজমিনে মথুরাপুর ইউনিয়নের তথ্য সেবাকেন্দ্রে একটি ফটোস্ট্যাট মেশিন ছাড়া অন্যান্য প্রকল্পের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। রিফাইতপুর ইউপির বিন্দিপাড়া পাতানের বাড়ি থেকে মমিন মণ্ডলের জমি পর্যন্ত রাস্তা মাটি দ্বারা পুনঃনির্মাণ বাবদ দেড় লাখ টাকা বরাদ্দ করা হলেও কোনো কাজের অস্তিত্ব সেখানে খুঁজে পাওয়া যায়নি।          ফিলিপনগর ইউনিয়নে ১৮টি প্রকল্পের মধ্যে সিংহভাগ প্রকল্পের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। প্রাগপুর ইউনিয়নের ১৭টি প্রকল্পের মধ্যে দু একটির অস্তিত্ব পাওয়া গেলেও সেখানে সামান্য কাজ হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। বোয়ালিয়া ইউনিয়নের কিশোরীনগর হায়েতের বাড়ি থেকে ঈদগা পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণের জন্য ৭৫ হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলেও সেখানে কোনো কাজই হয়নি বলে গ্রামবাসী জানিয়েছে। কথিত আছে ওই ইউনিয়নের ট্যাক অফিসার ফারুক আহমেদ প্রতি লক্ষ লাখ টাকার প্রকল্পের জন্য ১০ হাজার টাকা নিয়ে অফিসে বসে কাগজপত্রে স্বাক্ষর করে দেন। দৌলতপুর ইউনিয়নের দৌলতখালী মাধ্যমিক বিদ্যলিয়ের জন্য ১ লাখ টাকা বরাদ্দ থাকলেও সেখানে ৪০ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে বলে ওই বিদ্যলিয়ের শিক্ষকগণ জানিয়েছেন।

এছাড়া ১৪টি ইউনিয়নে নলকূপ ও স্যানিটেশন সামগ্রী বিতরণ খাতে প্রায় ৭৭ লাখ টাকার প্রকল্প দেখানো হলেও দু-একটি নলকূপ স্থাপন করে তার সিংহভাগই আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসী জানিয়েছে। ১৪ ইউনিয়নে মানবসম্পদ উন্নয়ন, প্রশিক্ষণ ও দক্ষ জনশক্তি খাতে প্রায় ২০ লাখ টাকা ব্যয় দেখানো হলেও এ কাজের কোনো ধরনের প্রমাণ চেয়ারম্যানগণ দেখাতে পারেননি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ইউপি সদস্য জানান, তাদের নামে প্রকল্পের বরাদ্দকৃত অর্থের ৪০-৬০ ভাগ টাকা সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন চেয়ারম্যান কেটে নিয়েছেন। এর কারণ হিসেবে ওই সদস্য জানান, ওই অর্থ চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন সচিব, ইউএনও অফিস, ইঞ্জিনিয়ার ও ট্যাক অফিসারদের কমিশন হিসাবে কেটে রাখা হয়েছে। এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা প্রকৌশলী জিল্লুর রহমান জানান, এলজিএসপি প্রকল্পের টাকা সরাসরি ইউনিয়নে আসে তাই শুধুমাত্র প্রাক্কলন ছাড়া তার কিছু জানার বা করার নেই। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অরুন কুমার মণ্ডল জানান, এ সংক্রান্ত তিনি কোনো অভিযোগ পাননি। অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখা হবে বলে তিনি জানান।