স্টাফ রিপোর্টার: রাজধানীতে এক নারী প্রতারকের খপ্পরে পড়ে কুপোকাত হয়েছেন সেনা বাহিনীর একজন মেজর। ওই প্রতারক নারীর কারণে ধ্বংস হয়ে গেছে তার সংসার। দেশের শীর্ষ পর্যায়ের ডজনখানেক জাঁদরেল রাজনৈতিক নেতাও রেহাই পাননি ওই নারীর নাগপাশ থেকে। কেউ ৫০ লাখ, আবার কেউবা কোটি টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড দিয়ে অনেক কষ্টে বেরিয়ে আসেন ওই ছলনাময়ীর মায়াজাল থেকে। তবে এদের মধ্যে এক নেতার সংসার হয়ে গেছে ছারখার। বর্তমানে ওই নেতা তীব্র মানসিক যন্ত্রণা নিয়ে একাকী দুঃসহ জীবন কাটাচ্ছেন।
সুন্দরী ওই নারী প্রতারকের নাম কেশোয়ারা সুলতানা ওরফে সালমা। তার কাছে ১৪ লাখ টাকা পাওনা ছিলো সেনাবাহিনীর সদস্য মেজর সুমন আহমেদের। ফেরত দিয়েছিলেন ৭ লাখ টাকা। অভিযোগ পাওয়া গেছে, বাকি ৭ লাখ টাকার দেনা থেকে বাঁচতে সালমা ভুয়া কাবিননামা তৈরি করে মেজর সুমনকে স্বামী বানিয়ে তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করে বসেন। সালমার বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগ ব্যাপক অনুসন্ধান চালিয়ে নিশ্চিত হয় যে, মেজর সুমনের বিরুদ্ধে করা সালমার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। ৭ লাখ টাকা ফেরত না দেয়ার জন্যই সালমা এ বিয়ের নাটক সাজান। তার বিরুদ্ধে প্রতারণা মামলা দায়ের করার জন্য সেনাবাহিনী থেকে মেজর সুমনকে পরামর্শ দেয়া হয়। গত বছরের ৩ নভেম্বর সালমার বিরুদ্ধে উত্তরা (পূর্ব) থানায় মেজর সুমন বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। মামলায় তার স্বামী, বোনসহ অন্য সহযোগীদেরও আসামি করা হয়। আদালতেও মেজর সুমনকে জাল কাবিননামায় স্বামী বানানোর প্রতারণা প্রমাণিত হয়। সালমা যুব মহিলা লীগের নেত্রী সেজে অনেকের সাথেই প্রতারণা করে আসছেন বলে জানা যায়। আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের জানান, সালমা একজন প্রতারক। তার প্রতারণা ধরা পড়ায় তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। কিন্তু কয়েকজন শীর্ষ স্থানীয় রাজনৈতিক নেতার সাথে সালমার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। এ সম্পর্কের কারণে সালমা মেজর সুমনকে হয়রানি করে যাচ্ছেন।
জানা গেছে, মেজর সুমন ৱ্যাব-১’র দায়িত্বে থাকাকালে একটি অপহরণের ঘটনা নিয়ে সালমার সাথে তার পরিচয় হয়। সালমা তখন থেকেই তাকে প্রতারণার কৌশল আটেন। মেজর সুমনের একমাত্র সন্তান অটিজমের শিকার। তাকে চিকিত্সার জন্য কানাডা যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন মেজর সুমন। ওই সময় সালমা দু মাসের মধ্যে মেজর সুমন ও তার পরিবারকে কানাডায় ইমিগ্রেন্ট করতে পারবেন বলে তাকে নিশ্চয়তা দেন। এ জন্য ১৪ লাখ টাকা দিতে হবে। একমাত্র ছেলের চিকিত্সার কারণে ২০১২ সালে মেজর সুমন এলপিআরে যান। ২০০৯ সালে সেপ্টেম্বর মাসে মেজর সুমন তার স্ত্রী মিম্মী নিশরাতের পিতার মিল বিক্রির ১৪ লাখ টাকা এনে সালমার হাতে তুলে দেন। পরে সালমার প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পারেন মেজর সুমন। টাকা ফেরত দেয়ার জন্য তিনি সালমাকে চাপ দেন। ২০১১ সালে ১৪ লাখ টাকার মধ্যে সালমা ৭ লাখ টাকা মেজর সুমনকে ফেরত দেন। বাকি ৭ লাখ টাকা ফেরত না দিতে সালমা বিভিন্নভাবে মেজর সুমনকে হয়রানি করতে শুরু করেন। গুলশান থানায় ২০১২ সালের ৬ নভেম্বর সালমা বাদী হয়ে মেজর সুমনের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। গত ৭ জুলাই ক্যান্টনমেন্ট থানায় সালমা আরও একটি মামলা করে মেজর সুমনের বিরুদ্ধে। মামলা করার সুবিধার্থে সালমা পুলিশের বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও শীর্ষ কর্মকর্তা সালমার বাসায় রাত যাপন করেছেন- অনুসন্ধানে গোয়েন্দা সংস্থা এমন প্রমাণও পায়। তবে ওই সব মামলা দিয়ে মেজর সুমনকে জেল খাটাতে ব্যর্থ হন সালমা। প্রমাণিত হয়ে যায় তার নানা প্রতারণা। কিন্তু অবশেষে সিএমএম আদালতে মামলা করে সফল হয় সালমা। মেজর সুমনকে জেলহাজতে পাঠাতে সক্ষম হয় সে। তবে ২২ ঘণ্টা পর একই আদালত মেজর সুমনকে জামিন প্রদান করে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের দু শীর্ষ নেতা বলেন, সালমার নাম শুনলে তারা ভয় পান। এ দু নেতা আক্ষেপ করে বলেন, কতিপয় নারীলোভী নেতার কারণে এসব সুন্দরী প্রতারক দলীয় নেতা সেজে দলের বারোটা বাজাচ্ছে।
উপপুলিশ কমিশনার গুলশান (জোন) লুত্ফুল কবীর বলেন, সালমা কর্তৃক ওই মামলা সম্পর্কে তিনি অবহিত নন। তবে তিনি অনুসন্ধান করে বিষয়টি দেখবেন বলে জানান।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, সালমার স্বামী ঝালকাঠিতে থাকে। সুন্দরী স্ত্রী সালমা গুলশানে একটি বাসা ভাড়া করে ঢাকায় থাকছে দীর্ঘদিন যাবত। সালমার ছোট বোনও প্রতারণামূলক কাজে জড়িত। তার অনুরূপ প্রতারণার শিকার হয়েছেন অপর এক সেনা কর্মকর্তা। সালমা মেজর সুমনের সাথে তার বিয়ের ভুয়া কাবিননামায় উল্লেখ করেছেন, তার স্বামী নেই এবং তিনি বিধবা। সালমার পাসপোর্ট নম্বর এবি ৫১৪৫৯৮১। ২০১৬ সালের আগস্ট পর্যন্ত এর মেয়াদ রয়েছে। এ পাসপোর্টে তার স্বামীর নাম মো. সলিম মৃধা। তার জাতীয় পরিচয়পত্রেও একই স্বামীর নাম উল্লেখ রয়েছে। তার স্বামী প্রায়ই ঢাকায় আসেন বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা নিশ্চিত হয়েছেন।
সালমার বক্তব্য: এ ব্যাপারে গতকাল বুধবার সালমার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মেজর সুমন আমার সাথে প্রতারণা করেছে। তার জীবন শেষ করে ফেলেছে। তার দাবি তিনি এখনও যুব মহিলা লীগের নেত্রী এবং তাকে বহিষ্কার করা হয়নি। তার বিরুদ্ধে অন্যান্য প্রতারণার অভিযোগ সত্য নয় বলে তিনি দাবি করেন।