স্টাফ রিপোর্টার: প্রেমের ফাঁদে ফেলে সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রীকে পতিতালয়ে বিক্রি করে দেয়ার অপরাধে গ্রেফতার করা হয়েছে মোশারফ হোসেন নামের এক গৃহশিক্ষক ও দু পতিতাকে। ওই ছাত্রী দু মাস পর গত বুধবার সেখান থেকে পালিয়ে এসে ঘিওর থানায় পুলিশের আশ্রয় নেয়। এ ঘটনায় মেয়ের পিতা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছে।
ঘিওর থানার ওসি আশরাফুল ইসলাম জানান, মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার এক দিনমজুরের সপ্তম শ্রেণি পড়ুয়া কন্যার সাথে একই এলাকার শফিজ উদ্দিনের ছেলে গৃহশিক্ষক মোশারফ হোসেনের (২৫) প্রেমসম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরপর ২১ জুন শুক্রবার প্রাইভেট পড়ানোর কথা বলে তাকে ঘিওর কফিল দরজি উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ে ডেকে আনে। পরে স্কুলছাত্রীকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে সাভারে এক বন্ধুর বাড়ি নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে প্রেমিক মোশারফ হোসেনসহ তার আরও দু বন্ধু ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করে। এভাবে একটি কক্ষে আটকে রেখে দিন-রাত ছাত্রীটির ওপর নির্যাতন চালায় তারা। এভাবে ১০-১২ দিন নির্যাতন চালানোর পর অসুস্থ হয়ে পড়ে ওই ছাত্রী। পরে প্রেমিক ও দুই বন্ধু মিলে সাভারের পতিতা রুবিনা বেগম ও তাছলিমা বেগমের কাছে বিক্রি করে দেয় তাকে। সেবা দিয়ে সুস্থ করার পর ওই দু পতিতা ছাত্রীটিকে পতিতাবৃত্তির কাজে আবদ্ধ করে ফেলে। এভাবে দু মাস একটি রুমে আটকে রেখে সপ্তম শ্রেণির এ ছাত্রীকে বাধ্য করা হয় খদ্দেরদের সাথে মেলামেশা করতে। দীর্ঘ দু মাস পর ওই ছাত্রী সেখান থেকে পালিয়ে মানিকগঞ্জের ঘিওর থানায় আশ্রয় নিয়ে ঘটনা খুলে বলে। এরপর পুলিশ রাতেই সাভারে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করে প্রতারক মোশারফ হোসেন (২৫), দু পতিতা রুবিনা বেগম (৩৫) ও তাছলিমা বেগমকে (২১)। গতকাল দুপুরে তাদের হাজির করা হয় মানিকগঞ্জ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে। পরে পুলিশ সুপার বিধান ত্রিপুরা এ ঘটনাটি স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন। এদিকে নির্যাতনের শিকার স্কুলছাত্রীকে ডাক্তারি পরীক্ষা শেষে গতকাল দুপুরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে হাজির করা হলে সে সাংবাদিকদের জানায়, আমি মোশারফ সারের কাছে প্রাইভেট পড়তাম। পড়ার ছলে মাঝে মাঝে আমাকে প্রেমের প্রস্তাব দিতো। আমি রাজি না হওয়ায় কান্নাকাটি করতো। পরে আমি তার প্রেম প্রস্তাবে সাড়া দিই। এভাবে চলে কয়েক মাস। এরপর গত ২১ জুন শুক্রবার। সে দিন প্রাইভেটে ছুটি। কিন্তু আমাকে ফোন করে নেয়া হয় স্কুলে। এরপর আজই বিয়ে করবে বলে আমাকে নিয়ে মানিকগঞ্জে রওনা হয়। মানিকগঞ্জে না নিয়ে সরাসরি সাভারে নিয়ে যায়। সেখানে আমাকে ওর দু বন্ধু তাদের বাসায় নিয়ে যায়। নিয়েই ওরা তিনজন মিলে আমার ওপর চালায় অমানুষিক নির্যাতন। আমি চিৎকার করলে মুখ আটকে দেয় কাপড় দিয়ে। আমি পায়ে ধরে ক্ষমা চাই কিন্তু ওদের মন গলেনি। এভাবে কয়েক দিন একটি ঘরে আটকে রেখে আমার ওপর কি যে অত্যাচার করা হয় তা ভাষায় বোঝানো যাবে না। এরপর আমকে নিয়ে যাওয়া হয় রুবিনা ও তাছলিমার কাছে। শুনেছি ওরা আমাকে বিক্রি করে দিয়েছে। ওদের নির্যাতনে আমি তখন অসুস্থ হয়ে পড়ি। পরে ওষুধপত্র খাইয়ে ওই দু মহিলা আমাকে সুস্থ করে। এরপর থেকে প্রতিরাতে আমার কাছে আনা হতো নানা বয়সের লোকজনকে। চালানো হতো নির্যাতন। এ কাজ না করলে মারপিট করা হতো। আমি কান্নাকাটি করলে মারপিটের মাত্র আরও বাড়িয়ে দিতো ওই দু মহিলা। দেখাতো অনেক লোভ-লালসা। এ কথা বলেই কাঁদতে থাকে স্কুলছাত্রীটি। ছাত্রীর পিতা জানান, এখন আমি কী করবো? মেয়েকে নিয়ে সমাজে কীভাবে থাকবো? যারা আমার মেয়ের সর্বনাশ করেছে আমি তাদের বিচার চাই। বলেই হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন তিনি।