কতোটা বাস্তব তা দেখেই টাকে চুল গজানো তেল কেনা উচিত

 

অঙ্কের জোরেরই মঙ্গলগ্রহে নিরাপদে নামছে মিস কিউরসিটি। আবার সেই অঙ্কেরই ধন্ধে ফেলে অনেকেই পাতছে প্রতারণার ফাঁদ। অঙ্কের কিছু সূত্রেই বোঝা যায়, শেষটা কতোটা বড়। ডেসটিনি-২০০০’র যখন দেশ জুড়ে রমরমা তখন দেশের গণিত সমিতির ত্রৈমাসিক সাময়িকীতে ডাস্টবিন-২০০০’র উল্লেখ করে একটি অঙ্ক দেখানো হয়। তাতে বোঝানো হয়, অঙ্কের এ ফর্মূলায় হাইহাই কোম্পানি থেকে বহু কোম্পানিই প্রতারণা করেছে। এরপরও তখন অবশ্য সরকারের দায়িত্বশীলদের টনক নড়েনি। বিলম্বে নড়েছে, যখন প্রতারিতের সংখ্যা অনেক। তবুও সরকারের পদক্ষেপকে সাধুবাধ জানাতেই হয়। শেষ পর্যন্ত আইনও হলো। এখন যথাযথ তার প্রয়োগ থাকলেই মঙ্গল।

 

ধরুন, আপনার এক টাকাও নেই। একমাস মেয়াদে ঋণ করে বছরভর এক লাখ টাকা নিজের কাছে রাখতে চান। তাহলে ঋণের বছর শেষে ঋণের বোঝা কতোটা বড় হবে একটু ভেবে দেখেছেন? যেমন প্রথম ব্যক্তির নিকট থেকে এক লাখ টাকা ঋণ নিলেন, সেই ঋণ পরিশোধ করেও এক লাখ যদি নিজের কাছে রাখতে হয়, তাহলে ঋণ করতে হবে দু লাখ। পরবর্তী মাসে? তিন লাখ। তার পর চার লাখ। এক বছরেই ঘাড় ঋণের বোঝা কতো হবে? আর সেই ঋণ যদি হয় সুদে বা লাভে, তাহলে অবস্থাটা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? এখন কেউ তো আর এমনি এমনি ঋণ দেয় না, তাই তো কোটাচাঁদপুরের সেই কাজল মোটা অঙ্কের সুদের প্রলোভনেই ওই অঙ্কের সূত্রে পেতেছিলেন প্রতারণার ফাঁদ। আর এমএলএম ফর্মূলা? সেটাও বেশ গোলকধাধার। যখন কেউ বোঝাবে ডান হাত আর বাম হাতের চক্রবৃদ্ধি হারে ক্রেতা সংগ্রহ আর সেই হারেই বেড়ে যাওয়া কমিশনের বহর, তখন যেকোনো বেকারই লোভ সামলাতে পারবেন না। কারণ দেশে বেকার সমস্যা প্রকট। কিন্তু যখন ঘোর ওই বুঝের ঘোর কাটবে তখন বড্ড দেরি হয়ে গেছে বলে মনে হবে। যেমনটি এখন ভাবেন ডেসটিনি, নিউওয়ে, ইউনেপেটুসহ নানা নামের বহু কোম্পানির সাথে যুক্ত হয়ে প্রতারিত হওয়া অসংখ্য তরুণ-তরুণী। শুধু কি তাই? নতুন করেও কিছু কোম্পানি বাজারে এসেছে যারা ভাগ্য পরিবতনের কথা বলে দেদারছে প্রকাশে টিভিতে প্রচার চালিয়ে মানুষের সাথে প্রতারণা করছে। এটাকে অবশ্য শুধু প্রতারণা বললে ভুল হবে, মানুষকে ভাগ্য নির্ভরশীল করতেও উদ্বুব্ধ করা হচ্ছে। যা ব্যাপকতা পেলে শিশু-কিশোরদের ভবিষ্যত গুঁড়িয়ে যাবে। কারণ ‘পরিশ্রম সৌভাগ্যের চাবিকাঠ’ এটা অবিশ্বাস্য হয়ে উঠলে আর যাই হোক উঠতী বয়সীদের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে না। ভাগ্যের ওপর নির্ভলশীলতা নয়, নয় ওইসব তাবিজ-কবজ, কোনো বিশেষ চাবি বা মানুষ ঠকানো প্রতারণামূলক কোম্পানির সাথে সম্পৃক্ততা নয়। বাস্তবমুখি হতে হবে।

 

অঙ্কের ধন্ধে পড়ে ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে গিয়ে জীবনটাই স্থবির করার অপর নাম কিন্তু বোকা। দু একবার বোকা হলেও সুধরে নেয়া যায়। বারবার বোকামি বিষণ্ণতায় গ্রাস করে ভবিষ্যত, ঘুরে দাঁড়ানোর সাহস কেড়ে নেয়। নিজেকে খুব ছোট করে তোলে। যার কুফল নিজেকেই বহন করতে হয়। সুন্দর ধরিত্রীও হয়ে ওঠে অসুন্দর। চলার পথে সর্বদা সতর্কতা হোঁচট রোধে সহায়ক। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখেই হুমড়ি খেয়ে পড়ার আগে নিয়োগদাতা সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানতে হয়। কতোটা বাস্তবিক, কতোটা অবাস্তব তা দেখেই টাকে চুল গজানো তেল কেনা উচিত! ঘরে বিশেষ চাবি রাখলেই যেমন ধন-সম্পদে গৃহ ভরে না, তেমনই অতি লোভে পতন অনিবার্য ওঠে। ফলে সাবধান!