শিশু-কিশোর অপহরকচক্রের সদস্য মিয়াজান পাকড়াও : উত্তমমধ্যম শেষে পুলিশে সোপর্দ

চুয়াডাঙ্গার ভালাইপুর মোড়ের চা দোকান কর্মচারী স্কুলছাত্র অপহরণের পর তিনদিনের মাথায় মুক্ত হয়ে বাড়ি ফিরে দেয় চাঞ্চল্যকর তথ্য

 

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের পীরপুরের মিয়াজান ওরফে মিয়াকে (৩০) ভালাইপুরের জনগণ ধরে হালকা পিটুনির পর পুলিশে দিয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে তাকে আটক করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে ডেগার (চাকু) উদ্ধার করা হয়। সে কৌশলে এক কিশোরকে অপহরণ করে। অপহৃত কিশোর ভেড়ামারার প্রত্যন্ত অঞ্চলের মাঠের কুড়ে ঘর থেকে মুক্ত হয়ে বাড়ি ফিরে মিয়াজানের বিরুদ্ধে অপহরণের অভিযোগ তোলে। এরপর থেকেই তাকে ধরতে ফাঁদ পাতা হয় বলে জানিয়েছেন ভালাইপুর মোড়ের চা দোকানি এনামুলসহ কয়রাডাঙ্গার অনেকে।

মিয়াজানকে প্রথমে গোকুলখালী পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। গতকাল শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সে কিশোর অপহরণের কথা সরাসরি স্বীকার করেনি। তবে পুলিশ বলেছে, বেশ কিছু তথ্য উদ্ধার হয়েছে। আটক মিয়াজান চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের আলুকদিয়া ইউনিয়নের পীরপুর গ্রামের মনছার মণ্ডলের ছেলে।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার চিৎলা ইউনিয়নের কয়রাডাঙ্গা গ্রামের দরিদ্র জুমাত আলীর ছেলে আকরাম গোকুলখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্র। পড়াশোনার ফাঁকে সে ভালাইপুর মোড়ের চা দোকানে কাজ করে। দেড়মাস আগে ভালাইপুর মোড়েরই এনামুলের চা দোকানে চাকরি নেয়। সেখানেই পরিচয় হয় পীরপুরের মিয়াজানের সাথে। গত মঙ্গলবার তথা ১৩ আগস্ট সকালে একটি কাজে চুয়াডাঙ্গার উদ্দেশে রওনা হয়। এরপর বাড়ি ফেরেনি তিনদিন। কিশোর আকরাম হোসেন নিখোঁজ হলে খোঁজাখুজি শুরু হলেও নালিশ পুলিশে গড়ায়নি। তিনদিন পর কিশোর আকরাম বাড়ি ফেরে। সে জানায়, তাকে পীরপুরের মিয়াজনসহ চারজন একটি মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। চুয়াডাঙ্গা নিচের বাজারের রাস্তা থেকে তাকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায় বহুদূর। নির্জন মাঠের একটি কুড়ে ঘরে আটকে রাখে। সেখানে আরো কয়েক শিশু ছিলো। তিনদিন বন্দি থাকার এক পর্যায়ে সুযোগ বুঝে কুড়ে ঘর থেকে পালিয়ে রেললাইন ধরে হাটতে শুরু করি। হাঁটতে হাঁটতে পাকশি-ভেড়ামারা স্টেশনের মাঝামাঝি মাঠে একটি ট্রেন ক্রসিঙে করার সময় ওই ট্রেনযোগে পোড়াদহ স্টেশনে গিয়ে নামে। সেখানে কয়েকজনকে ঘটনা বলি। এক পর্যায়ে মুন্সিগঞ্জের একজনের সাথে দেখা হয়। তিনিই আমাকে পোড়াদহ থেকে ফিরিয়ে আনেন। বাড়ি পৌঁছে দেন।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বাড়ি ফিরে কিশোর আকরাম যে বর্ণণা দেয় তার সত্যতা যাচাইয়ের পাশাপাশি অভিযুক্ত মিয়াজানকে খুঁজতে থাকেন স্থানীয়রা। পুনঃঅপহরণের ভয়ে আকরাম বাড়ি থেকে আর বের হতে রাজি হয় না। অবশেষে গতকাল মঙ্গলবার সকালে ভালাইপুর মোড়ের ওই চা দোকানের আশে পাশে ঘুর ঘুর করতে থাকে মিয়াজান। সেখানে কৌশলে ডাকা হয় কিশোর আকরামকে। তাকে দিয়ে অপহরক মিয়াজনকে শনাক্ত করিয়ে স্থানীয়রা আটক করে। আটকের পর শুরু হয় উত্তমমধ্যম। পরে তাকে দেয়া হয় পুলিশে।

মিয়াজান কি শিশু পাচারচক্রের সদস্য? এলাকার জনসাধারণের মাঝে এ প্রশ্ন জেগেছে। পুলিশ প্রকৃত নেপথ্য উন্মোচনে তদন্ত শুরু করেছে।