আবদুর রহমান বয়াতির মৃত্যু : শোক

BOYATIস্

দীর্ঘদিন রোগে ভুগে আজ সোমবার সকাল সাড়ে সাতটায় ‘মন আমার দেহ ঘড়ি’খ্যাত জনপ্রিয় লোকসংগীতশিল্পী আবদুর রহমান বয়াতি মারা গেছেন। রাজধানীর জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে চিকিত্সাধীন অবস্থায় মৃত্যু ঘটে তাঁর। দীর্ঘদিন ধরেই উচ্চরক্তচাপ, কিডনি, ফুসফুসের সমস্যাসহ বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। আবদুর রহমান বয়াতির মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন তাঁর সহকর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষী শিল্পীরা।

রাষ্ট্রীয়ভাবে তাঁকে কোনো ধরনের সম্মান দেওয়া হয়নি: কুদ্দুস বয়াতি
আবদুর রহমান বয়াতির সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় ১৯৮৭ সালে। সেই থেকে একসঙ্গে আমরা দেশের বিভিন্ন জায়গায় গান করেছি। এটা অব্যাহত ছিল তাঁর অসুস্থ হওয়ার আগ পর্যন্ত। টেলিভিশন অনুষ্ঠানেও আমরা একসঙ্গে অনেকবার উপস্থিত হয়েছি। বাউল গানে তাঁর অবদান অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। অথচ রাষ্ট্রীয়ভাবে তাঁকে কোনো ধরনের সম্মান দেওয়া হয়নি। দেশের উচ্চপর্যায়ে যাঁরা আছেন, তাঁদের সবার প্রতি বিনয় রেখে বলতে চাই, দয়া করে আপনারা সবাই বেঁচে থাকতে একজন মানুষকে তাঁর প্রাপ্য সম্মানটুকু বুঝিয়ে দিন। মারা যাওয়ার পর তাঁকে শহীদ মিনার কিংবা রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করে কী লাভ? যাঁকে নিয়ে এত আয়োজন, সেই মানুষটাই যদি বেঁচে থাকতে শুধু কষ্টই পেয়ে যান, তাঁর জন্য মারা যাওয়ার পর বড় আয়োজন রাখার কোনো মানেই হয় না। কয়েক বছর ধরেই হাসপাতালের বিছানায় দিন কাটাচ্ছিলেন আবদুর রহমান বয়াতি। আমি সময়-সুযোগ পেলে প্রায়ই হাসপাতালে ছুটে যেতাম। তাঁর সঙ্গে কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে আসতাম। আবদুর রহমান বয়াতি একজন বাউল সাধকই শুধু নন, তিনি একজন ভালোমানুষও ছিলেন। তাঁর মতো নির্লোভ-নির্মোহ মানুষ আমি খুব কমই দেখেছি। তাঁর মৃত্যুর সংবাদটি অনেক বেশি কষ্ট দিয়েছে আমাকে। তাঁর মৃত্যুতে বাংলাদেশের বাউল গানের অনেক বড় একটা ক্ষতি হয়ে গেল।

 

মানুষটা মৃত্যুর আগে নানা দুঃখ-কষ্টের মধ্যে ছিলেন: হানিফ সংকেত

১৯৯৬ সালে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ইস্যুর ওপর ভিত্তি করে আবদুর রহমান বয়াতিকে নিয়ে ‘সুখের স্বপ্ন’ নামের একটি অনুষ্ঠান করি। এটিই তাঁর সঙ্গে প্রথম কাজ। মা ও শিশুর যত্নে কী করা উচিত তারই প্রচারণার অংশ হিসেবে কাজটি করেছিলাম। এরপর একুশে টেলিভিশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আবদুর রহমান বয়াতির অংশগ্রহণে একটি গান করি। তাঁর সঙ্গে আমার সম্পর্কটা ছিল খুবই চমত্কার। কষ্ট লাগে এই ভেবে যে, মানুষটা মৃত্যুর আগে নানা দুঃখ-কষ্টের মধ্যে ছিলেন। অর্থাভাবে ঠিকমতো চিকিত্সার ব্যয়ভার নির্বাহ করতে পারেননি তিনি। স্মৃতিচারণা না করে আমাদের ভাবতে হবে জীবিত থাকা অবস্থায় আবদুর রহমান বয়াতিদের জন্য কী করণীয়।