ঝিনাইদহ অফিস: বিজ্ঞাননির্ভর আধুনিক সভ্যতায় যখন বিশ্ব মানুষের হাতের মুঠোয়, তখন বিদ্যুতের অভাবে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার সাধুহাটি উপস্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণকেন্দ্রটি এখন নিজেই মুমূর্ষু। ৬৮ বছর বয়সী এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির জরাজীর্ণভবন এবং পানি ও বিদ্যুতহীন পরিবেশেই চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছেন চিকিৎসকেরা। ১৯৮০ সালে নির্মিত পাকাভবনেও ফাটল ধরছে। ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দায়িত্ব পালন করছেন।
সাধুহাটি উপস্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার মো. আব্দুল মান্নান জানান, আনুমানিক ১৯৪৫ সালে সাধুহাটির জমিদার গীর্জা ভুষণ ব্যাণার্জী এলাকার হতদরিদ্র মানুষের চিকিৎসার জন্য এই উপস্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণকেন্দ্রটি স্থাপন করেন। সাধুহাটি ইউনিয়নের রাঙ্গিয়ারপোতা গ্রামের দানশীল ব্যক্তি কানাই মণ্ডল স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জন্য এক একর ৫২ শতক জমি দান করেন। ১৯৮০ সালে উপস্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণকেন্দ্রটির পাকাভবন নির্মিত হয়।
তিনি আরো জানান, তারপর ৩৩ বছর পার হলেও ভবনের কোনো সংস্কার করা হয়নি। পুরাতন ভবনটিতে ফাটল ধরেছে। ইট-বালি খসে খসে পড়ছে। জানালা-দরজার বেশির ভাগ ভাঙা। নেই আয়া, নাউটগার্ড ও ঝাঁড়ুদার। নিরাপত্তা ব্যবস্থা নাজুক। পানিপানেরও কোনো ব্যবস্থা নেই এ কেন্দ্রে। সাধুহাটী উপস্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণকেন্দ্রের সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার সালাহ উদ্দীন জানান, প্রতিষ্ঠার পর থেকে ভবনে বিদ্যুত সংযোগ নেই। নেই পানি ও উন্নত স্যানিটারি ব্যবস্থা। কেন্দ্রটির ফার্মাসিস্ট সানোয়ার হোসেন জানান, সীমানা পাঁচিল না থাকায় সব সময় ভয়ে তটস্থ থাকতে হয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। জমি বর্গা দিয়ে কেন্দ্রটি রাতে পাহারা ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সাধুহাটী ইউনিয়নের বংকিরা গ্রামের আবেদ আলী নামে এক রোগী অভিযোগ করেন, উপজেলা ও জেলা কর্মকর্তারা তাদের অফিসে আরাম আয়েশে কাজকর্ম করলেও সাধুহাটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দিকে তাদের নজর নেই। অসুস্থ রোগীরা একটু ফ্যানের বাতাস পর্যন্ত পান না। পানি নেই, নেই উন্নত টয়লেট। এলাকাবাসীর অভিযোগ, শাসকদলের নেতাকর্মীরা টিআর কাবিখাসহ নানা প্রকল্পের টাকা লুটেপুটে খেলেও উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র নিয়ে তাদের কোনো মাথা ব্যথা নেই।
বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা. রাশেদা সুলতানা বলেন, এ আধুনিক যুগে সাধুহাটি উপস্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণকেন্দ্রে বিদ্যুত সরবরাহ নেই শুনে আমি আশ্চর্য্য হয়েছি। বিষয়টি নিয়ে আমি বিদ্যুত বিভাগের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেবো। ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন নার্গিস সুলতানা বলেন, ভবনটি সরকারি বিধায় সরকারের ইচ্ছা অনুযায়ী চলতে হবে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করা যায়, তড়িৎ বিদ্যুত সংযোগের ব্যবস্থা হবে।