হাসপাতালে বখশিশের নামে চাঁদাবাজি : জাগ্রত হোক বিবেক

 

ও আর কয় টাকা, দেশে হাজার হাজার কোটি টাকা তছরুপ হচ্ছে, হচ্ছে আত্মসাৎ। আর হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগের সেবিকা-আয়া এক দু হাজার টাকা বখশিশ নিলে দোষের কী? কেউ কেউ এ রকম উক্তি করলেও বখশিশের নামে চাঁদাবাজিকে কি সমর্থন করা যায়? সামর্থদের কাছে এক দু হাজার টাক হয়তো টাকাই নয়, খুশিতেই গচিয়ে দেন। কিন্তু দিন আনা দিন খাওয়া পরিবারের প্রসূতিকে হাসপাতালে নেয়ার পর বখশিশের নামে চাপাচাপি কতোটা কষ্টকর?

অভিযোগকারীদের অনেকেরই অভিমত, সন্ত্রাসীরা অস্ত্র ধরে চাঁদা দাবি করে, আর হাসপাতালের প্রসূতি ওয়ার্ডে প্রসূতি ও নবজাতককে জিম্মি করে আদায় করা হয় টাকা। সন্তান প্রসবের পর বখশিশের নামে টাকা আদায়ের সময় যেসব আজেবাজে উক্তি আওড়ে জোরাজুরি চলে, তাতে আত্মীয়স্বজনের সামনে প্রসূতির স্বল্প আয়ের স্বামীকে লজ্জায় পড়তে হয়। এ লজ্জার মানসিক কষ্ট স্বাস্থ্য বিভাগের প্রশাসনিক কর্তাদের ক’জনের বিবেককে নাড়া দেয়? উপলব্ধি প্রয়োজন। বকশিশের নামে অর্থ আদায়ের হীনমানসিকতা পরিবর্তনে উচিত শিক্ষার পাশাপাশি নৈতিকতা বোধ জাগিয়ে তোলা প্রয়োজন। কেননা, যারা সরকারি হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করেন তাদের সকলকেই বেতন দেয়া হয়। প্রসূতির সন্তান প্রসবে চিকিৎসা করা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাসহ যাবতীয় দায়িত্ব পালনের শর্তেই চাকরি নেয়া। তাহলে বকশিশের নামে জোরাজুরি তথা পিড়াপিড়ি কেন? কোথায় কে কতো কোটি টাকা আত্মসাৎ করছে, কোথায় লুটপাট হচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা, সেদিকে তাকিয়ে নিজের দায়িত্বে উদাসীনতা মানে সমাজের সর্বনাশ ডেকে আনা। কখনো কখনো নিজের পায়ে কুড়ুল মারার মতোই।

অবশ্যই কোনো অনিয়ম একদিনে বাসা বাঁধে না। বকশিশের নামে হাসপাতালের প্রসূতি ওয়ার্ডে যে স্বেচ্ছাচারিতা ফুটে উঠেছে তা একদিনের নয়। দীর্ঘদিন ধরেই বকশিশ দেয়ার প্রথা রয়েছে। বকশিশ নামে খুশি হয়ে স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে কিছু দেয়া। সেই প্রথা এখন যে রোগে রূপান্তর হয়েছে তা বলার অবকাশ রাখে না। এ রোগ দিন দিন প্রকট আকার ধারণ করছে। প্রতিকারে উদাসীনতা নয়, ও আর ক’টাকা বলে অবজ্ঞা নয়। বিবেক জাগিয়ে তোলার মতো পদক্ষেপ প্রয়োজন।