সড়ক নিরাপত্তায় সুপারিশ বাস্তবায়ন করুন

 

ঈদুল আজহায় কর্মস্থলে ফিরতি পথে সড়ক-মহাসড়কে একাধিক দুর্ঘটনা এবং প্রাণহানি সর্বমহলে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। সড়ক-মহাসড়কে এ ধরনের মর্মান্তিক দুর্ঘটনা রোধে প্রায় পাঁচ বছর আগে সরকার গঠিত কমিটি-উপকমিটি স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদি ৫০টির বেশি গুরত্বপূর্ণ সুপারিশ করেছিলো। এর কোনোটিই বাস্তবায়নের ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেই সংশ্লিষ্টদের। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে চালকরা যাতে সড়কে বেপরোয়া ও দ্রুতগতিতে গাড়ি না চালায় সে ব্যাপারে সতর্ক নজরদারি রাখার জন্য সুপারিশ করা হয়েছিলো সরকার গঠিত কমিটির পক্ষ থেকে। কিন্তু এবারের ঈদুল আজহার আগে ও পরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রায় ২৬৫ প্রাণ ঝরে যাওয়ার পেছনে বেপরোয়া গতিই ছিলো মূল কারণ।

সড়ক দুর্ঘটনায় এক একটি মৃত্যু মানে একটি প্রাণহানিই নয়, এর সাথে ধসে পড়ে একটি পরিবারের সব স্বপ্ন। ধুলোয় মিশে যায় একটি পরিবারের সচ্ছলতা। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির অকাল মৃত্যু একটি পরিবারকে পথে বসিয়ে দেয়- এমন ঘটনা অতীতে বহুবার ঘটেছে। এছাড়াও রাষ্ট্রের সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে সরকার গঠিত কমিটি ও উপকমিটি বিভিন্ন মেয়াদে যে ৫০টি সুপারিশ করে এর অন্যতম একটি হলো, গাড়িচালক যেন কোনোভাবেই দ্রুতগতিতে ও বেপরোয়া গাড়ি না চালায় তা নিশ্চিত করা। এমন কি চালককে কোনোভাবেই দ্রুতগতিতে গাড়ি চালানোর ব্যাপারে প্ররোচিত করা যাবে না। চালক কিংবা মালিক যেই হোক দুর্ঘটনার জন্য দোষী ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আনতে হবে। যাত্রীদের সচেতন হওয়ার বিষয়টিও সুপারিশে বিশেষ গুরুত্ব পায়। ট্রাফিক আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ, যথাযথ মনিটরিঙের ব্যবস্থা রেখে রোড মার্কিংসহ স্বল্প মেয়াদি সুপারিশে স্থান পায়। কিন্তু এর কোনোটিই বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগ নেই। সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে বা কমিয়ে আনতে ৫০টিরও বেশি মহাসড়ক চার কিংবা এরচেয়ে বেশি লেনে উন্নীত করার পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে এবং সড়ক নির্মাণ ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে সমন্বিত সড়ক সুশাসন প্রতিষ্ঠার চিন্তা-ভাবনা চলছে- নির্ভরযোগ্য সূত্রের বরাতে প্রকাশিত সংবাদে এমন তথ্যও তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিটি মৃত্যুই দুঃখজনক। সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু কিংবা অঙ্গহানির ঘটনা মেনে নেয়া কঠিন। দুর্ঘটনার পর পরই দায়িত্বশীল মহল থেকে ক্ষতিপূরণের যে ঘোষণা দেয়া হয় তা কতোটা যৌক্তিক তা নিয়ে নানা মহলে বিতর্কও রয়েছে। কারণ প্রাণ বা অঙ্গহানির ক্ষতি কোনো কিছু দ্বারাই পূরণ করা সম্ভব নয়। ঘোষিত ক্ষতিপূরণের অর্থ সংশ্লিষ্টরা আদৌ পান কি-না এ নিয়েও সংশয় রয়েছে নানা মহলে। তবে ক্ষতিপূরণ নয় ক্ষতি যাতে না হয় সে ব্যবস্থা গ্রহণই অধিকতর যৌক্তিক বলে মনে করি।

আমাদের দেশে নানা রকম আইন রয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু এর প্রয়োগ নেই বললেই চলে। ফলে আমাদের মাঝে আইন মানার প্রবণতা কম। সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনা রোধে সরকার গঠিত কমিটি-উপকমিটির সুপারিশ দ্রুত বাস্তবায়ন হোক- এমনটি আমরা সবাই চাই। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের তৎপরতাই আমাদের কাম্য।