রেলগাড়ির ভার সহ্য করতে না পারা রেল এবং

 

মাল বহন করা রেলগাড়ির চাপ সহ্য করতে না পেরে লাইনের রেল ফেটে ভেঙে গেছে। গত শনিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ রেলওয়ের চুয়াডাঙ্গা স্টেশনে বিকট শব্দে এ ঘটনা ঘটে। মাল বহন করা রেলগাড়িটি চুয়াডাঙ্গা স্টেশন অতিক্রমের সময় বিকট শব্দের কারণেই সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টিগোচর হয়। এরপরই রেললাইন স্থাপন প্রসঙ্গটি আলোচনায় উঠে আসে। দর্শনা-পোড়াদহ রেললাইন বাংলার প্রথম রেললাইন। স্থাপন করা হয় ১৮৬২ সালে। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন আমলে স্থাপিত রেললাইনের ধারণ ক্ষমতা নিয়েই সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন- কতোদিন আগে সংস্কার করা হয়েছে? এই তো কয়েক বছর আগে। তাহলে রেললাইনের রেল ফাটলো কেন? ভাগ্যিস প্রাণহানি হয়নি।

বাংলাদেশ রেলওয়ের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি। এ অভিযোগ পুরাতন। বিশ্বে যখন রেল যোগাযোগের অভাবনীয় সাফল্য, তখন আমাদের দেশে দিন দিন অবনতি। এর আড়ালে কি সরকারের শীর্ষ পদস্থদের দৃষ্টিহীনতা? নাকি অনিয়মের সাথে আপস? যেকোনো দেশের রেল যোগাযোগ উন্নয়নের অন্যতম সোপান। আর তা যদি হয় দুর্বল, নড়বড়ে তা হলে সে যোগাযোগের ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা বৃদ্ধি পাবে কীভাবে? এরপরও এখন পর্যন্ত রেলভ্রমণকারীর সংখ্যা কম নয়। মালামাল বহনেও রেলওয়ের দিক থেকে ব্যবসায়ীরা মুখ ফেরাননি। মালামাল পরিবহন বা ভ্রমণকে যদি নিরাপদ না রাখা যায় তা হলে কতো দিন আর আগ্রহ থাকবে? এমনিতেই একের পর এক স্টেশনের কার্যক্রম স্থগিত করার কারণে বহু সম্পদ সম্পত্তি বেদখল হয়েছে, হচ্ছে। রেলমাশুল আদায়কারীদের অনিয়ম নিয়ে তো বহু কৌতুকরসও বাংলায় প্রচলিত। এরপর যদি দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ে তা হলে রেলওয়ের ভবিষ্যত কোন দিকে তা অনুমান করা কঠিন নয়।

যে রেললাইন কয়েক বছর আগে সংস্কার করা হয়েছে, সেই রেললাইনের রেল মাল বহন করা রেলগাড়ির ভার সহ্য করতে না পারার মধ্যদিয়ে যে বিষয়টি ফুটে ওঠে তা হলো অনিয়ম। পুনর্সংষ্কার বা পুনর্স্থাপনের দায়িত্ব প্রাপ্ত ঠিকাদার বাড়তি লাভের জন্য অনিয়ম দুর্নীতি করতে পারে। তা প্রতিহত করার দায়িত্ব তো সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্তাদের। লাইন পরিবর্তন বা সংস্কার না করেই কি সংস্কার দেখানো হয়েছে? নাকি পুরাতন রেল অযত্নে ধারণ ক্ষমতা হারিয়েছে? মাল বহন করা রেলগাড়ির ভার সহ্য করতে না পেরে লাইনের রেল ফেটে বিচ্ছিন্ন হওয়ার ঘটনাকে কোনোভাবেই খাটো করে দেখা উচিত হবে না। এটা বড় ধরনের দুর্ঘটনার পূর্বাভাস ধরে নিয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া জরুরি।