বেতন দিতে হিমশিম খাচ্ছে বেশির ভাগ পৌরসভা

প্রয়োজনের তাগিদেই এক সময় শহর কমিটি বা টাউন কমিটি গঠন করতে হয়েছিলো। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি পরিকল্পিত নগরায়ণের উদ্দেশে গড়া সেই কমিটিই এখন পৌরসভা। বড় শহরে সেই কমিটি কালক্রমে নাম পেয়েছে সিটি করপোরেশন। সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা কর্মচারিদের বেতন ভাতা নিয়ে সমস্যা না হলেও পৌরসভাগুলোর অধিকাংশেরই করুণ দশা।
স্থানীয় সরকারে পৌরসভার দায়িত্ব অনেক। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণি মিলিয়ে দেশে এখন ৩২৭টি পৌরসভা রয়েছে। এসব পৌরসভার নিজস্ব আয় যেমন আছে, তেমনই একটি অংশ আসে সরকারের বরাদ্দ থেকে। এসব পৌরসভায় উন্নয়ন ও রাজস্ব খাতে লোকবল নিয়োগ দেয়া হয়। স্থানীয় সরকারের এ প্রতিষ্ঠানে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নিয়োগ যে রাজনৈতিক বিবেচনায় হয়ে থাকে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। পৌরসভার আয়ের নির্ধারিত কিছু খাত আছে। সব পৌরসভার আয় সমান নয়। ফলে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারীদের বেতন দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে বেশির ভাগ পৌরসভা। দেশের ৭৬ শতাংশ পৌরসভা তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়মিত বেতন দিতে পারছে না। পৌরসভাগুলোর ৩২ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন পরিশোধ করতে প্রয়োজন ৯৪৭ কোটি টাকা। এই অর্থের সামান্যই পাওয়া যায় সরকারের তহবিল থেকে। বাকি টাকা পৌরসভাকে উপার্জন করার কথা। কিন্তু যেখানে কোনো আয় নেই, সেখানে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন পরিশোধ করবে কী করে? পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাকি পড়েছে ৫১৬ কোটি টাকা। গত এক বছরে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবসরকালীন পাওনা ১২৫ কোটি টাকা অর্থের অভাবে পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। আর এ সব কিছুর প্রধান দায় রাজনীতির। পৌরসভা গঠন থেকে শুরু করে নিয়োগ সব ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক বিবেচনা প্রাধান্য পেয়েছে। একটি পৌরসভা গঠন করতে হয় নিয়ম মেনে। কোনো এলাকা পৌরসভা ঘোষণা করতে হলে সেই এলাকার জনসংখ্যা কমপক্ষে ৫০ হাজার হওয়া বাঞ্ছনীয়। স্থানীয় সরকার আইনেই এ কথা স্পষ্ট বলা আছে। কিন্তু এমন অনেক পৌরসভা আছে, যেগুলোর জনসংখ্যা এর অর্ধেকেরও কম। আবার এসব পৌরসভায় অনেক নিয়োগই দেয়া হয়েছে রাজনৈতিক বিবেচনায়। অন্যদিকে সব পৌরসভারই আয়ের বেশিরভাগ আসে কর থেকে। অনেক পৌরসভায় মেয়ররা রাজনৈতিক বিবেচনায় পৌর কর কমিয়ে দেন বা মওকুফ করে দেন। ফলে পৌরসভার আয় অনেক কমে যায়। কিন্তু সব পৌরসভারই নির্দিষ্ট ব্যয় আছে। আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হয়ে গেলেই নিজস্ব তহবিলে টান পড়ে, তখন পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীর জীবনযাত্রার ব্যয় তো থেমে থাকে না। মাসের পর মাস বেতন না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হয় তাদের। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য কৌশল বের করতে হবে। পৌরসভার আয় বৃদ্ধির পথ তৈরির পাশাপাশি স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করা গেলে হয়তো পৌরসভাগুলো নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতে পারতো। কিন্তু সে সুযোগ দেয়া হচ্ছে না।
পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঘোষিত কর্মসূচি নিয়ে সরকারকে যেন নির্বাচনের বছর নতুন করে বিব্রত হতে না হয় সেদিকে দৃষ্টি দেয়া দরকার। বেতনভাতা ঠিকমতো না পেলে নিযুক্তরা কাজ করবে কীভাবে? ফলে বেতনভাতা মাসান্তর পরিশোধের পাশাপাশি তাদের ভবিষ্যত তহবিলও গঠন করা প্রয়োজন। দেশজুড়ে পৌর কর্মচারিদের চলমান আন্দোলন মূলত সেই তাগিদই দেয়।