বাংলাদেশের ক্রিকেটে তার অবদান অমরত্বই দিচ্ছে তাকে

জগমোহন ডালমিয়ার মৃত্যু ধাক্কা হয়ে এসেছে সবার জন্য। বাংলাদেশ ক্রিকেট চিরঋণী হয়ে আছে বাংলার এই ক্রিকেট সংগঠকের কাছে। বিশ্ব ক্রিকেটেরও অনেক ঋণ ডালমিয়ার কাছে। তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি ক্রিকেটকে অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক প্রমাণ করেছিলেন। অনিয়ম দুর্নীতিমুক্ত করতেও তিনি চমৎকার ধারা সৃষ্টি করে রেখে গেছেন অনন্য উদাহরণ।

বাংলাদেশকে ঠিকই চিনতে পেরেছিলেন জগমোহন ডালমিয়া। ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন উপমহাদেশের চতুর্থ ক্রিকেট-শক্তি হয়ে ওঠার সব উপাদানই বাংলাদেশের আছে। ১৯৯৭ সালে বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা আইসিসির সভাপতি পদে নির্বাচিত হন ডালমিয়া। ক্রিকেটকে নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে ছড়িয়ে দিতে হবে বিশ্বময়। তার সেই মন্ত্রের জোরেই ক্রিকেট দুনিয়ায় নিজেদের অবস্থান করে নিলো বাংলাদেশ। ২০০০ সালে আইসিসির সভাপতি পদে থাকা অবস্থায় তারই প্রচ্ছন্ন মদদে বাংলাদেশ অধিষ্ঠিত হলো একটি টেস্ট খেলুড়ে দেশের মর্যাদায়। দ্বিতীয় দফায় ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর ক্রিকেটে শ্রীনি-রাজত্বে আঘাতও হেনেছিলেন তিনিই। পরিকল্পনা করছিলেন আইপিএলকে দুর্নীতিমুক্ত করার। কিন্তু তার আকস্মিক এ মৃত্যু ভারতীয় ক্রিকেটকে আবারও করে তুলেছে অস্থিতিশীল। সবার মনেই প্রশ্ন, ডালমিয়ার পরে ভারতীয় ক্রিকেটের মসনদে বসছেন কে! ক্রিকেট দুনিয়ায় সবচেয়ে শক্তিশালী ক্রিকেট বোর্ড এই বিসিসিআই। আরও নির্দিষ্ট করে বললে ক্রিকেটের অর্থনৈতিক প্রতিপত্তির প্রায় পুরোটাই ভারতকে ঘিরে। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতির লোভনীয় পদে আসীন হতে তাই হুমড়ি খেয়ে পড়বে সবাই। শ্রীনি ইস্যুতে এমনিতেই টালমাটাল ভারতীয় ক্রিকেট অঙ্গন। ক্ষমতার টানাপোড়েনে কিছু দিন আগে থেকেই উত্তাল ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। এর মাঝে সভাপতির মৃত্যুতে বিপাকেই পড়লো বিসিসিআই। নিয়মানুযায়ী একজন সভাপতির মৃত্যুর তিন সপ্তাহের মধ্যেই বিশেষ সাধারণসভা ডেকে পরবর্তী সভাপতি নির্বাচন করতে হয়। বোর্ড সচিব অনুরাগ ঠাকুরকেই ডাকতে হবে এই সাধারণসভা। কিন্তু এখন আদালতের নির্দেশাবলী ছাড়া বোর্ডের সভা ডাকাও সম্ভব হচ্ছে না তার পক্ষে। ফাঁক তালে নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসন না আবার গ্যাঁট হয়ে বসে পড়েন মসনদে এ আশঙ্কাও করছেন অনেকে। সব মিলিয়ে ভালো ঝামেলায় পড়েছেন ভারতীয় ক্রিকেট কর্তাব্যক্তিরা।
ডালমিয়ার হস্তক্ষেপে ভারতীয় ক্রিকেটে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন শ্রীনিবাসন। কিন্তু ডালমিয়ার মৃত্যুতে নিজের রাজ্যপাট উদ্ধারের পথ খুঁজে পাচ্ছেন শ্রীনি। ভারতের অন্যান্য কর্তাব্যক্তিরা কি শ্রীনিকে সেই সুযোগ দেবেন, নাকি নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেবেন ক্রিকেটের সবচেয়ে লোভনীয় পদটি, দেখার বিষয় এখন সেটিই। তবে বাংলাদেশের ক্রিকেটে তার অবদান তাকে অমরত্বই দিচ্ছে এ দেশের ক্রিকেট ইতিহাসে।