টিকেটের জন্য যুদ্ধ : নির্বিঘ্ন হোক উৎসবযাত্রা

উৎসব উপলক্ষে ঘরমুখি যাত্রায় প্রতিবছর একই পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি ঘটে। এটা খুবই পরিতাপের বিষয় যে, ঘরে ফেরার টিকেটের জন্য টিকেট প্রত্যাশীদের রাতযাপন করতে হয় ট্রেন কিংবা বাস-স্টেশনে। প্রতিবছর নিয়মানুযায়ী অগ্রিম টিকেটের ঘোষণা দেয়া হয় বাস-মালিক সমিতি এবং রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান রেলওয়ে থেকে। কিন্তু অবস্থা তথৈবচ। বিক্রি শুরুর পরপরই অগ্রিম টিকেট উধাও হয়ে যায়। তবে অধিক মূল্যে সেসব টিকেট মেলে কালোবাজারিদের কাছে। পরিবহন খাতের অব্যবস্থাপনা কোন স্তরে গিয়ে ঠেকলে এমনটি হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। অথচ একটি রাষ্ট্রের কর্তব্য হওয়া দরকার উৎসবযাত্রাসহ নাগরিকের সব ধরনের গমনাগমন নির্বিঘ্ন ও নিশ্চিত করা। কিন্তু রাষ্ট্র যে এক্ষেত্রে বরাবরই ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে চলেছে তা নতুন করে বলার কিছুই নেই। উচ্চপর্যায় থেকে যখন বলা হয় সব কিছুই সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তখন বাস্তবতার নিরিখে এসব বক্তব্য-বিবৃতি হাস্যকর ছাড়া আর কিছুই মনে হয় না। আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, এভাবে আর কতোদিন চলবে?

 

বরাবরের মতোই উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে ট্রেনের অগ্রিম টিকেট সংগ্রহে। অনেকে রেলস্টেশনে রাতযাপন করেও বিফল মনোরথে ফিরে এসেছেন প্রত্যাশিত টিকেট না পেয়ে। আবার দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর টিকেট পেয়ে অনেকের মুখেই ফুটেছে হাসি। তবে টিকেট বিক্রির ধীরগতি নিয়ে অনেকেই আপত্তি এবং অভিযোগ করেছেন। এবার ঈদুল আজহা এবং শারদীয় দুর্গোৎসব প্রায় একই সময় অনুষ্ঠিত হওয়ার কারণে ঘরেফেরা মানুষের চাপ স্বাভাবিক অর্থেই বেশি। এ পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন ও নিশ্চিত করতে প্রতিটি ক্ষেত্রেই আগের চেয়ে বেশিমাত্রায় সতর্কতা অবলম্বন করা। এ সতর্কতা হতে হবে যেমন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তেমনি বাস-লঞ্চ-ট্রেন অর্থাৎ গণপরিবহন খাতেও। আমরা অতীতে লক্ষ্য করেছি, ঈদ-পূজা উপলক্ষে ঢাকাসহ সারাদেশে অজ্ঞান বা মলমপার্টি, ছিনতাইকারী ও দুষ্কৃতকারীর অপতৎপরতা বহুলাংশে বেড়ে যায়। ঢাকাতে ভেঙে পড়ার উপক্রম হয় ট্রাফিক ব্যবস্থা। সারাদেশে সড়ক-মহাসড়কের দুর্ভোগও চরম আকার ধারণ করে। এ দুরবস্থার মধ্যদিয়ে একটি রাষ্ট্রের নেতিবাচক দিকটিই প্রকাশিত হয়।

 

সঙ্গত কারণে এসব বিষয়ে সরকার তথা সংশ্লিষ্ট বিভাগকে আগে থেকেই পরিকল্পনা করতে হয়। কিন্তু প্রতি বছর নেতিবাচক বাস্তবতার মাঝ দিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগের ব্যর্থতাই ফুটে ওঠে। যা ঘরমুখি জনগণকে আরো বেশি দুর্ভোগের মুখোমুখি করে। গত রমজানের ঈদের সময় দেখা গিয়েছিল বাস, লঞ্চ ও ট্রেনের টিকেটের মতো যে পথে বেশি হুড়োহুড়ি থাকার কথা নয়, সেই উড়ালপথ অর্থাৎ আভ্যন্তরীণ রুটে উড়োজাহাজের টিকেটও পায়নি যাত্রীরা। প্রতি বছর যেহেতু টিকেট নিয়ে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে, তাই আগে থেকেই এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়াটাই সঙ্গত। সারা বছর অক্লান্ত পরিশ্রমের পর মানুষ যখন উৎসবে গ্রামমুখি হওয়ার চেষ্টা করে তখন যাত্রাপথের অব্যবস্থাপনা তাদের মানসিক এবং আর্থিক উভয়ভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত করে। নানা অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির কারণে সংশ্লিষ্ট বিভাগ তথা সরকারের আন্তরিকতাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। আমরা ভেবে পাই না, অগ্রিম টিকেট যদি বিক্রি শুরুর সাথে সাথেই শেষ হয়ে যায়, জনগণকে যদি বিড়ম্বনায় পড়তে হয়, তাহলে অগ্রিম টিকেট বিক্রির এমন চমকপ্রদ ঘোষণারই বা দরকার কী? নির্দিষ্ট মূল্যের চেয়ে বেশি দামে কালোবাজারে বিক্রিই যদি মালিক পক্ষের উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, তা হলে যাত্রীসেবার নামে এ প্রতারণার অর্থ বোঝা কঠিন কিছু নয়। উৎসবে শিকেড়ের টানে মানুষের ঘরে ফেরার একটা তাগিদ থাকেই। এতে যানবাহনের সংখ্যাও বেশি দেখা যায়, যা স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে যাত্রী নিরাপত্তার দিকটিই সর্বাগ্রে গুরুত্ব দেয়া দরকার। সার্বিক বিবেচনায় আমরা বলতে চাই- সড়ক, রেল কিংবা নৌপথ, প্রতিটি রুটের টিকেট প্রাপ্তি নিশ্চিত করা জরুরি। পাশাপাশি জনগণকে যাতে কোনো পথেই বিড়ম্বনার শিকার হতে না হয় সে ব্যাপারে নিতে হবে কার্যকর উদ্যোগ। আমরা যাত্রী হয়রানি ও ভোগান্তির ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুবিবেচনা ও সুচিন্তিত সিদ্ধান্তের দ্রুত বাস্তবায়ন প্রত্যাশা করি।