জিকা ভাইরাস মোকাবেলায় প্রস্তুতি নিতে হবে

বাংলাদেশেও জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত একজন রোগীর অস্তিত্ব মিলেছে। ৬৭ বছর বয়সী ওই রোগী চট্টগ্রামের বাসিন্দা। গত ফেব্রুয়ারিতে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা জিকা ভাইরাস নিয়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। ওই ঘোষণার পর থেকে এ বিষয়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ সরকার। সতর্কতার অংশ হিসেবে ২০১৪ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত ৪টি হাসপাতালে জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে একটি রক্তের নমুনায় জিকা ভাইরাস পাওয়া যায়। এ রক্তের নমুনাটি ২০১৪ সালের আগস্টে সংগ্রহ করা হয়। বর্তমানে ওই রোগীটি সুস্থ আছেন। প্রথম একজনের দেহে জিকা ভাইরাস পাওয়ায় এটা নিশ্চিত হওয়া গেলো আমাদের দেশেও জিকা ভাইরাস প্রবেশ করেছে এবং সেটা বছর কয়েক আগেই। এ ঘটনাটি জিকা ভাইরাসের ব্যাপারে আমাদের নতুন করে ভাববার ও ব্যবস্থা নেয়ার তাগিদ দিচ্ছে।

সারাবিশ্বে একটি বহুল আলোচিত নাম জিকা ভাইরাস। সর্বপ্রথম ব্রাজিল ও লাতিন আমেরিকায় শনাক্ত হয় জিকা ভাইরাস। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে আফ্রিকা ও অন্যত্র। ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও শনাক্ত হয়েছে এ ভাইরাসটি। জিকা ভাইরাস মানব দেহে বড় ধরনের ক্ষতিসাধন করার ক্ষমতা রাখে। জিকা ভাইরাস আক্রান্ত মায়ের গর্ভে সন্তানের ওপর প্রভাব রাখতে পারে জিকা ভাইরাস। এরকম ক্ষেত্রে সন্তানের মাথার আকৃতি স্বাভাবিকের চেয়ে ছোট হয়ে যায়, শিশু মানসিক প্রতিবন্ধী হতে পারে। কাজেই বোঝা যাচ্ছে জিকা নিয়ে শঙ্কার যথেষ্ট কারণ আছে। জিকা ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটে এডিস মশার মাধ্যমে। আমাদের জন্য এ ব্যাপারটা আরো বেশি ঝুঁকি তৈরি করছে। কারণ মশার উপদ্রব আমাদের শহর-গ্রাম সর্বত্রই ব্যাপক। বিশেষ করে রাজধানীসহ নগরাঞ্চলে মশা প্রধান একটি নাগরিক সমস্যা। এডিস জাতীয় মশাও বংশবৃদ্ধি হচ্ছে যেখানে সেখানে। এডিসের মাধ্যমে ছড়ানো আরেকটি মারাত্মক রোগ হলো ডেঙ্গু। আমাদের দেশেও ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ মাঝে মাঝেই দেখা দিচ্ছে। আক্রান্ত হচ্ছেন শিশু থেকে বৃদ্ধ বিভিন্ন বয়সী মানুষ। ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে কার্যকর টিকা আজ পর্যন্ত না পাওয়া গেলেও সময়োপযোগী সুচিকিৎসার মাধ্যমে ডেঙ্গু রোগ নিয়ন্ত্রণে আনা অনেকটাই সম্ভব হয়েছে। কিন্তু জিকা ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ এখনো অনায়ত্ত। এটাই শঙ্কার কথা। জিকা ভাইরাস বিশ্বে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়িয়েছে। এ সময়ে আরেক আতঙ্ক হিসেবে দেখা দিয়েছিলো ইবোলা ভাইরাস। ইবোলার আতঙ্ক এখনো বিশ্বকে তাড়িয়ে বেড়ায়। ইবোলার ক্ষেত্রে জরুরি পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে ‘হু’। জিকা ভাইরাসের ক্ষেত্রে ইবোলার মতো একই ব্যর্থতার পুনরাবৃত্তি ঘটলে বিশ্বে এর মারাত্মক পরিণতি দেখা দিতে পারে। একটি প্রজন্ম দেখা দিতে পারে যাদের মধ্যে লাখ লাখ মানুষ জিকা ভাইরাসের কারণে মানসিক প্রতিবন্ধী।

এ অবস্থায় জিকা ভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কার এখন সময়ের দাবি। ভাইরাসটি মহামারীর পর্যায়ে পৌঁছার আগেই এর বিরুদ্ধে সব ধরনের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। জিকা ভাইরাস নিয়ে আমাদের দেশেও নিরুদ্বেগ থাকার আর সুযোগ নেই। এই ভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবেলায় আমাদেরও যথোপযুক্ত প্রস্তুতি দরকার। ইতোমধ্যে সরকারিভাবে বিভিন্ন প্রস্তুতি গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। ভাইরাস নির্ণয়ের জন্য কিট সংগ্রহ করা হয়েছে। এই ভাইরাসে যেন নতুন করে কেউ আক্রান্ত না হয় সে বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। মশক নিধন অভিযান জোরদার করতে হবে। এ ভাইরাস আক্রান্তের লক্ষণ, প্রাথমিক পর্যায়ে করণীয় সম্পর্কেও চিকিৎসকদের ওয়াকিবহাল করতে হবে। আতঙ্ক নয় বরং সতর্কতা, সচেতনতা ও প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিই আমাদের নিরাপদ রাখতে পারে।