খোশ আমদেদ মাহে রমজান

 

প্রফেসর মুহাম্মদ ইউসুফ আলী: আজ ১২ রমজান। পবিত্র মাহে রমজানের মাগফেরাত, অর্থাৎ পাপমোচন দশকের আজ দ্বিতীয় দিন। রমজান মাস নেকি অর্জনের মাস। এ মাসে প্রতিটি নেক আমলের ছওয়াবকে কমপক্ষে ৭০ গুণ বৃদ্ধি করা হয়। এজন্য এই মাসে দান-খয়রাত করলে অথবা জাকাত দিলে অন্য মাসের চেয়ে অনেক গুণ বেশি সওয়াব পাওয়া জাবে। জাকাত দেয়ার সময় যদিও রমজানের সাথে সম্পর্কিত না, তার পরেও অনেকে বাড়তি সওয়াব হাসিলের জন্য এই মাসে জাকাত দিয়ে থাকেন। জাকাত হলো মালের ওপর গরিবের হক বা অধিকার, এটা কোনো অনুগ্রহ নয় যে দিলাম বা দিলাম না। এই হক মহান আল্লাহ জাল্লা শানুহই ঠিক করে দিয়েছেন। জাকাতকে আল্লাহ তায়ালা বিত্তবানদের ওপর ফরজ করেছেন। কোরআন শরিফে বার বার আদেশ করা হয়েছে নামাজ কায়েম করো, জাকাত আদায় করো। জাকাত আদায় করলে মাল পবিত্র হয়। আর জাকাত আদায় না করলে সম্পূর্ণ মালের ভেতর নাপাকি লেগে থাকে। আল্লাহপাক এরশাদ করেন, তাদের সম্পদ হতে জাকাত গ্রহণ করবে। এর দ্বারা তুমি তাদেরকে পবিত্র করবে এবং পরিশোধিত করবে (সূরা তওবা: ১০৩)। জাকাত দিলে যেমন মালের পবিত্রতা হাসিল হয়, ঠিক তেমনি দ্বিলের পবিত্রতাও হাসিল হয়। তাছাড়া জাকাতকে ইসলামের পাঁচটি বুনিয়াদ বা ভিত্তির একটি বলে হাদিসে উল্লেখ আছে। আমরা বিত্তবানরা যদি নিয়মিত জাকাত দিই তাহলে সমাজে কোনো অভাবী, গরিব থাকতে পারে না, কেউ না খেয়ে মরতে পারে না। আজ সারা পৃথিবীতে দরিদ্র মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে হইচই পড়ে গেছে। কিন্ত ইসলামের এই সুমহান জাকাত ব্যাবস্থা যদি চালু থাকে তাহলে সমস্ত দুনিয়ার মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। এর প্রমাণ হযরত সাহাবায়ে কেরামের যুগ। ইসলামপূর্ব যুগে তদানীন্তন আরব সমাজে ছিলো চরম অভাব-অনটন আর খাদ্যের জন্য হাহাকার। কিন্তু যখন জাকাত ব্যবস্থা চালু হল তখন সমাজ থেকে অভাব এমনভাবে দূর হলো যে আর গরিব লোক পাওয়া যাচ্ছিলো না যাকে জাকাত দেয়া যায়। তবে জাকাত দেয়া সবার জন্য ফরজ নয়। যে পরিমাণ ধন-সম্পদ হলে জাকাত ফরজ হয় তাকে নিসাব বলে। রৌপ্যের নিসাব সাড়ে ৫২ তোলা এবং স্বর্ণের নিসাব সাড়ে সাত তোলা। নিসাব পরিমাণ ধন-সম্পদ বা অর্থ কারো কাছে পূর্ণ এক বছর কাল থাকলে তার ওপর জাকাত ফরজ হয়ে যায়। জাকাত না দিলে পবিত্র কোরআনে ধমকি প্রদর্শন করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য পুঞ্জিভূত করে এবং তা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে না তাদেরকে চরম শাস্তির সংবাদ দাও। যেদিন জাহান্নামের আগুনে তা উত্তপ্ত করা হবে এবং তা দিয়ে তাদের ললাটে, পার্শ্বে ও পিঠে দাগ দেয়া হবে। সেদিন বলা হবে, এটাই তা যা তোমরা পুঞ্জিভূত করতে (বাকারা:৩৪-৩৫)।