এবিএম মূসা এবং শওকত হোসেন হিরনের স্মৃতির প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা

অন্যসব দিনের মতো গতকাল বুধবারের দিনটি শুরু হলেও অল্প সময়ের ব্যবধানে দুটি মৃত্যু সংবাদে আমরা বিচলিত-বেদনাহত। গতকাল দুপুরে ইন্তেকাল করেন প্রবীণ সাংবাদিক এবিএম মূসা (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নাইলাইহে রাজেউন।) তার আগে খবর পাওয়া যায়, বরিশালের জনপ্রিয় নেতা জাতীয় সংসদ সদস্য শওকত হোসেন হিরন আর বেঁচে নেই (ইন্নালিল্লাহি…রাজেউন)। টানা ঊনিশ দিন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থেকে গতকাল ভোরে তিনি চলে গেছেন না ফেরার দেশে। এই দুজন দু জগতের মানুষ, দু প্রজন্মের প্রতিনিধি। কিন্তু মৃত্যুর দূত এসে তাদের তুলে নিয়ে গেলো একই দিনে। মৃত্যুকালে এবিএম মূসার বয়স হয়েছিলো তিরাশি। বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ুর বিবেচনায় তিনি আমাদের ছেড়ে গেলেন বলতে গেলে পরিণত বয়সেই। কিন্তু হিরন পরপারে গেলেন তুলনামূলক বিচারে অনেক কম বয়সে। শওকত হোসেন হিরনের বয়স হয়েছিলো মাত্র ৫৮ বছর। একজন উদ্যমী মানুষের জন্য এই আয়ুষ্কাল হরস্বই বলতে হবে। সহিষ্ণুতার সুনাম রয়েছে তার। বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র থাকাকালে তিনি এ শহরটিকে নয়নাভিরাম করে তুলার চেষ্টা করেছেন। সফলও হয়েছেন অনেকাংশে। ১৯৮৮ সালে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার মধ্যদিয়ে তিনি নেতা এবং সংগঠক হিসেবে সুধীসমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ২০০৮ সালে তিনি নির্বাচিত হন বরিশাল সিটির মেয়র। গত সাধারণ নির্বাচনে তিনি বরিশাল-৫ আসন থেকে নির্বাচিত হন জাতীয় সংসদ সদস্য।

অন্যদিকে মহীরূহ সাংবাদিক এবিএম মূসা জীবনের সোনালি সময় অতিবাহিত করেছেন গণমাধ্যমের সাথে। ১৯৫০ সালে দৈনিক ইনসাফ পত্রিকায় যোগদানের মধ্যদিয়ে যে পেশাজীবন তিনি বেছে নিয়েছিলেন, সেই জীবনকেই বহন করে নিয়ে গেছেন শেষ দিন পর্যন্ত। ১৯৭১ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন তত্কালীন পাকিস্তান অবজারভার পত্রিকার বার্তা সম্পাদক। পরবর্তীতে তিনি বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট ও বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব পালন করেন দক্ষতার সাথে। জাতীয় প্রেসক্লাবের তিনি অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। একাধিকবার তিনি সাংবাদিকদের এ প্রিয় প্রতিষ্ঠানের সভাপতি নির্বাচিত হন। দীর্ঘ সাংবাদিক জীবনে উচ্চতর মেধা ও মননের যে পরিচয় তিনি রেখে গেছেন উত্তর প্রজন্মের জন্য তা স্মরণীয়। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তিনি বিভিন্ন পত্রিকায় নিয়মিত কলাম লিখতে শুরু করেন। কলামিস্ট হিসেবেও তিনি অর্জন করেন পাঠকপ্রিয়তা। সত্যভাষণে তিনি ছিলেন অকপট। এবিএম মূসা তার কর্ম সাধনার মধ্যদিয়ে নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠেন। তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, আবদুস সালাম, জহুর হোসেন চৌধুরী, সিরাজুদ্দিন হোসেন প্রমুখ মনীষাদীপ্ত সম্পাদক-সাংবাদিকের ত্যাগ ও সাধনায় এ পেশার যে উচ্চতর নৈতিক মানদণ্ড রচিত হয়, এবিএম মূসা সেই ধারাটিকে সমুন্নত রাখতে সচেষ্ট ছিলেন জীবন সায়াহ্নে এসেও। রাজনীতির সাথে ছিলো তার গভীর সংযোগ। তিনি জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ১৯৭৩ সালে। তার মৃত্যুর মধ্যদিয়ে সাংবাদিক সমাজ হারালো একজন অভিভাবককে।

এবিএম মূসা এবং শওকত হোসেন হিরনের স্মৃতির প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা। তাদের শোকসন্তপ্ত স্বজন-পরিজনের প্রতি জানাই আন্তরিক সমবেদনা। মাগফেরাত কামনা করি তাদের বিদেহী আত্মার।