অপরাধের মাত্রা অনুপাতে শাস্তি হোক অপরাধীর

 

হত্যা নাকি আত্মহত্যা? জবাব দেবে ময়নাতদন্ত করা চিকিৎসকদল। চুয়াডাঙ্গা শহরতলী দৌলাতদিয়াড় বঙ্গজপাড়ার বধূ খুশির অস্বাভাবিক মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ইতোমধ্যে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনও হাতে পেয়েছেন বলেছেন- তাতে হত্যা নয়, আত্মহত্যা বলে জানানো হয়েছে। এরপরও আত্মহত্যায় প্ররোচনা মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরের দাবি কেন? মহল্লাবাসীর দাবি, খুশির স্বামী-শাশুড়িরা খারাপ। ওরা দীর্ঘদিন ধরেই খুশিকে নির্যাতন করে আসছিলো। সমাজ তখন নিরব থেকেছে। প্রাণ ঝরেছে। সন্তান হারানোর পর খুশির মায়ের অভিযোগ, যৌতুকের দাবিতে অবর্ণনীয় নির্যাতন করতো ওর স্বামীসহ স্বামীর পরিবারের সদস্যরা। খুশি ফিরবে না, আর যেন কোনো খুশিকে ওভাবে ঝরে যেতে না হয় সে জন্যই দরকার দৃষ্টান্তমূলক বিচার।

হত্যাকাণ্ডকে যে আত্মহত্যা বলে চালানো হয় না, হচ্ছে না তা নয়। হত্যাকাণ্ড তখনই আত্মহত্যা বলে ধামাচাপা দিতে পারে যখন অস্বাভাবিক মৃত্যুর কারণ জানতে ময়নাতদন্ত না করেই দাফন কাজ সম্পন্ন করা হয়। চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের আলুকদিয়া ইউনিনের হাতিকাটার মেয়ে  পার্শ্ববর্তী বঙ্গজপাড়ার বধূ খুশির ক্ষেত্রে তেমনটি হয়নি। ময়নাতদন্ত হয়েছে। এরপরও মহল্লাবাসীর মনে নানা সন্দেহ দানা বেঁধেছে। কেন? পুলিশের ওপর আস্থাহীনতা? কিছুটা তো আছেই। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন নিয়েও সন্দেহ? তাতে সন্দেহ থাকলে অন্য মর্গে পৃথক চিকিৎসকদল দিয়ে ময়নাতদন্ত করানোরও সুযোগ আছে। অবশ্য সেক্ষেত্রে আদালতের আদেশ পেতে হবে। আদালত সে আদেশ কখন দেন? পেশকৃত আর্জি-আবেদনে আইনগত যুক্তি থাকে। না, খুশির ক্ষেত্রে পুনঃময়নাতদন্তের বিষয়টি এখনও আসেনি। যে বিষটি এখন আলোচিত তা হলো- পুলিশ প্রথমেই কেন হত্যামামলা নিলো না, কেন অপমৃত্যু নিয়ে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো? একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সহযোগিতায় কেনই বা আত্মহত্যায় প্ররোচনা মামলা করা হলো? হত্যা নয় হেতু আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ? হয়রানির চেয়ে যার যতোটুকু অপরাধ, তার অপরাধের মাত্রা বুঝেই বিচারের মুখোমুখি করে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে পারলে সমাজ উপকৃত হবে।

অস্বাভাবিক মৃত্যু মানেই যেমন হত্যা নয়, তেমনই আত্মহত্যাও নয়। আরো নানাভাবেই অপমৃত্যু হতে পারে। হয়, হচ্ছেও। পুলিশের দায়িত্ব প্রথমে সুরতহাল রিপোর্ট প্রণয়ন করা। মৃত্যুর কারণ জানতে ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি থানায় প্রয়োজনীয় বিষয়টি নথিভুক্ত করেই থামলে হয় না, প্রাথমিক তদন্তও করতে হয় পুলিশের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারকে। মহল্লাবাসী বলছে বলেই আত্মহত্যাকে হত্যা মামলা হিসেবে রেকর্ডের যেমন সুযোগ নেই, তেমনই মহল্লাবাসীর দাবি-দাওয়াও অবজ্ঞা দায়িত্বের প্রতি অবহেলারই বহির্প্রকাশ। দীর্ঘদিন ধরে নির্যাতনের শিকার খুশির অস্বাভাবিক মৃত্যুর প্রকৃত কারণ উন্মোচনে ত্রুটি কাম্য নয়। মনে রাখা দরকার, দায়ীদের তথা অপরাধীদের অপরাধের মাত্রা অনুপাতে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে না পরার খেসারত সমাজকেই দিতে হয়।