হাতুড়ের কাছে বাতের ব্যথার চিকিৎসা নিয়ে ওলির বাড়ি বিক্রির উপক্রম

 

স্টাফ রিপোর্টার: হাতুড়ের কাছে বাতের ব্যথার চিকিৎসা নিতে গিয়ে এখন বাড়ির জমিও বিক্রির উপক্রম হয়েছে। ‘ভারতের চিকিৎসা বাংলাদেশে’ প্রচার চালিয়ে একের পর এক সরলসোজা রোগীকে সর্বস্বান্ত করে ছাড়লেও অভিযুক্ত হাতুড়ে চিকিৎসক জীবননগর নতুনপাড়ার ইনতাজ আলীর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি স্বাস্থ্য বিভাগীয় প্রশাসন।

ইনতাজ আলী ভারত থেকে ওষুধ পাচার করে এনে ভারতীয় চিকিৎসার নামে দীর্ঘদিন ধরে যা করছে আসছেন তা ভয়াবহ। তার অপচিকিৎসায় বর্তমানে অসহনায় যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের বেগমপুর শৈলমারীর ওলি মহাম্মদ (৫৫)। তিনি মৃত শরিয়ত উল্লার ছেলে। চুয়াডাঙ্গার একটি ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ওলি মহাম্মদ। এছাড়া একই হাতুড়ের অপচিকিৎসায় সম্প্রতি রাজশাহী থেকে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন একই গ্রামের কদম আলী। তিনি ওই হাতুড়ের নিকট থেকে মাজায় ব্যথার ইনজেকশন নিয়ে ইনফেকশনে ভুগতে শুরু করেন। বহু হয়রানি আর কাড়ি কাড়ি টাকা খরচ করে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে কদম আলী বলেছেন, জীবনে যে শিক্ষা পেয়েছি আক্কেল থাকতে আর ওই ভুয়া ভারতীয় চিকিৎসকের ভাওতায় পড়বো না। ভাগ্যিস এ দফা বেঁচে গেছি।

ওলি মহাম্মদ অভিযোগ করে ঘটনার বর্ণণা দিতে গিয়ে বলেছেন, ইনতাজ আলী প্রতি শুক্রবার আমাদের গ্রামে চিকিৎসা দিতে আসতো। বলতো ভারতীয় চিকিৎসা সস্তায় এখন বাংলাদেশে দিচ্ছি। বাতের ব্যথা ছিলো। ওই ভণ্ড চিকিৎসকের ভাওতাবাজি বিশ্বাস করে চিকিৎসা নিলাম। সাড়ে তিনশ টাকা নিয়ে ভারতীয় ইনজেকশন দিলো উরুতে। ইনজেকশনের পর থেকেই শুরু হয় যন্ত্রণা। ৪ দিনের মাথায় ধরে পচন। ইনজেকশন দেয়া ওই জায়গায় যেমন দুর্গন্ধ হয়ে যায়, তেমনই অসহনীয় যন্ত্রণা হতে থাকে। তীব্র দুর্গন্ধের কারণে আপনজনও আর কাছে আসেন না। উপায় না পেয়ে চুয়াডাঙ্গার সার্জারি কনসালটেন্ট ডা. ওয়ালিউর রহমান নয়নের নিকট দেখান। তিনি প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করে বলেন, দ্রুত অপারেশন করাতে হবে। শরীরে রক্তেরও স্বল্পতা রয়েছে। সে কারণে রক্তও দিতে হবে। একটি ক্লিনিকে নিয়ে ভর্তি করানো হয়। অপারেশন করে পক্ষকাল ধরে ক্লিনিকেই চিকিৎসাধীন। অপারেশন আর ওষুধ পথ্য কিনেত ওলি মহাম্মদের খরচ হয়েছে কাড়ি কাড়ি টাকা। এখন প্রতিদিন খরচ হচ্ছে ২ হাজার ৭শ টাকা। ফলে বাড়ি বিক্রির উপক্রম। অবশ্যই ওলি মহাম্মদের অপচিকিৎসার বিষয়টি গ্রামে জানাজানি হলে ওই হাতুড়ে ইনতাজ ডাক্তার আর শৈলমারীমুখি হয়নি।

ওলি মহাম্মদ বলেছেন, দরিদ্র মানুষ। ভেবেছিলাম ভারত থেকে আনা ওষুধ ইনজেকশনে বাতের ব্যথাটা সেরে যাবে। কিন্তু বুঝিনি ওই হাতুড়ে ডাক্তার আমার এতোটা সবর্নাশ করে ছাড়বে। শুনেছি ইনতাজ ডাক্তার ওমাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হয়ে এভাবে ভণ্ড চিকিৎসক সেজে মানুষের সর্বনাশ করতে পারে কীভাবে সেটাই তো ভেবে পাই না।

ওলি মহাম্মদের সুচিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে তোলা চিকিৎসক ডা. ওয়ালিউর রহমান নয়ন বলেছেন, গ্রামে ওই ইনতাজ আলীদের মতো হাতুড়ের প্রতারণায় গ্রামের সরলসোজা বহু মানুষকেই পথে বসতে হচ্ছে। ওলি মহাম্মদের শরীরে যে ইনজেকশন দিয়েছেন সেটা ছিলো মাংসপেশীতে দেয়ার। সেটা যথাযথভাবে না দিতে পারার কারণে এমনটি হয়েছে। তাছাড়াও এ ধরনের ইনজেকশন কোনো হাতুড়ের দেয়ার তো এখতিয়ারও নেই। তারপরও হারহামেশাই গ্রামে এ ধরনের অপচিকিৎসা হচ্ছে। এ বিষয়ে আমাদের সকলকেই দায়িত্বশীল হওয়া দরকার।

অভিযুক্ত ইনতাজ আলীর সাথে মোবাইলফোনে চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসায় একের পর এক মানুষ ঠকানোর বিষয়ে জানাতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আপনার সাথে কোনো কথা হবে না, কথা হবে অফিসের সাথে।