সাঈদীর অপরাধ কাদের মোল্লার চেয়েও ভয়ানক

স্টাফ রিপোর্টার: যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার চেয়ে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মানবতাবিরোধী অপরাধ বেশি ভয়ানক ছিলো বলে যুক্তি দিয়েছেন সরকারের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলম। গতকাল বৃহস্পতিবার সাঈদীর মৃত্যুদণ্ড বহাল চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের শেষ দিনে আপিল বিভাগে তিনি এ যুক্তি দেন। প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে ৫ বিচারপতির বেঞ্চে এই শুনানি হয়। আগামী রোববার পরবর্তী শুনানির দিন রাখা হয়। ওই দিন আসামিপক্ষ রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্যের জবাব দিবে। এরপর রাষ্ট্রপক্ষ চাইলে আসামিপক্ষের সর্বশেষ বক্তব্যের জবাব দিতে পারে। তারপরই রায়ের জন্য অপেক্ষমান রাখা হতে পারে বহুল আলোচিত এ মামলা।

শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এক মোমেনার সাক্ষীতে কাদের মোল্লাকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে। মোমেনার মতো নির্ভরযোগ্য সাক্ষী এখানেও রয়েছে। এ সাক্ষীদের বক্তব্য দেখলে দেখবেন, কতোটা ন্যাচারাল সাক্ষ্য তারা দিয়েছেন। তাদের বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, সাঈদীর অপরাধ আরো ঘৃণ্য ও মারাত্মক। হত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণ, পাক বাহিনীকে আমন্ত্রণ ও অভ্যর্থনা, অগ্নিসংযোগসহ সব ধরনের অপরাধ তিনি করেছেন। সাঈদীর মানবতাবিরোধী অপরাধ নিয়ে মাহবুবে আলম বলেন, হত্যার চেয়েও ভয়ানক আরেকটি অপরাধ তিনি করেছেন। সেটা হচ্ছে, মানুষকে জোর করে ধর্ম পরিবর্তন।

তিনি বলেন, ‘আমাকে যদি জোর করে অন্য ধর্মে নিয়ে যাওয়া হয় তাহলে আমার জীবন বলে কি কিছু থাকবে? জবরদস্তি করে অন্য ধর্মে নিয়ে গেলেতো আত্মার মৃত্যু হয়। আত্মার মৃত্যু শারীরিক মৃত্যুর চেয়েও কঠিন।’ এ সব অপরাধ সংঘঠনের সময় সাঈদী ঘটনাস্থলে ছিলেন কি-না আদালতের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সকল স্থানেই তিনি উপস্থিত ছিলেন। তিনি উপস্থিত থেকে উর্দুতে বলছিলেন, আর রাজাকার ও পাকিস্তান আর্মিরা গুলি করছিলো। ‘আবার মুখে বলছিলো, সালকে গুলি কর, কখনো কখনো জড়ো করা হিন্দুদের উদ্দেশ্য করে বলছিলো, তোমরা মুসলমান হও, নয়তো জীবন থাকবে না। এর চেয়ে বড় অপরাধ আর কী হতে পারে?’ এ মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদণ্ডের রায় যথার্থ হয়েছে মন্তব্য করে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ন্যায়বিচারের স্বার্থে অবশ্যই এ রায় আপিল বিভাগে বহাল থাকা উচিত। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের আনা ২০টি অভিযোগের মধ্যে ইব্রাহিম কুট্টি ও বিসাবালীকে হত্যা এবং হিন্দুদের বাড়ি-ঘরে আগুন দেয়ার দুটি অভিযোগে তার মৃত্যুদণ্ড হয়। আরো ছয়টি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে আদালতে প্রমাণিত হলেও এরমধ্যেই ফাঁসির আদেশ হওয়ায় সেগুলোতে কোনো দণ্ড দেয়নি আদালত। এ রায়ের বিরুদ্ধে গত ২৮ মার্চ আপিল করেন সাঈদী। অন্যদিকে প্রমাণিত হলেও সাজা না হওয়া ছয় অভিযোগে এই জামায়াত নেতার শাস্তি চেয়ে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর এ মামলার আপিল শুনানি শুরু হয়। প্রথমে আসামিপক্ষের সাক্ষ্য ও জেরার পর গত ২৯ জানুয়ারি যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হয়। আসামিপক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এসএম শাহজাহান। আসামিপক্ষের পর গত ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে এ মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করছে রাষ্ট্রপক্ষ। ট্রাইব্যুনাল যে ১২টি অভিযোগ থেকে সাঈদীকে অব্যাহতি দিয়েছে সেগুলোতেও আপিলে ‘ন্যায়বিচার’ চায় রাষ্ট্রপক্ষ।

মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রথম রায়ে গত ২১ জানুয়ারি জামায়াতের সাবেক রুকন আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির আদেশ আসে। পলাতক থাকায় তিনি এর বিরুদ্ধে আপিল করতে পারেননি। ৫ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় রায়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। তবে আপিল শুনানি শেষে সুপ্রিম কোর্ট গত ১৭ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত রায়ে কাদের মোল্লাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। ১২ ডিসেম্বর ওই দণ্ড কার্যকর হয়। ট্রাইব্যুনালের তৃতীয় রায়ে সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। এরপর মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে আরো ছয়টি মামলার রায় হয়।