যশোর মেডিকেল কলেজের ৪ শিক্ষার্থী হোস্টেলে অবাঞ্ছিত

স্টাফ রিপোর্টার: শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে যশোর মেডিকেল কলেজের ৪ শিক্ষার্থীকে হোস্টেলে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা গতকাল রোববার একজোট হয়ে তাদের হোস্টেল ছাড়ার আল্টিমেটাম দিয়েছে। শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগও দেয়া হয়েছে। নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র তথ্য গুলো নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানিয়েছে, যশোর মেডিকেল কলেজের ২য় ব্যাচের শিক্ষার্থী (২০১১-২০১২ শিক্ষাবর্ষ) ও কলেজ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জুবায়ের আহমেদের নেতৃত্বে অপর ৩ শিক্ষার্থী বায়েজিদ হাসান বাধন, কাউছার হোসেন রমি ও রকিবুল হাসান বাপ্পী দীর্ঘদিন ধরে শৃঙ্খলা ভঙ্গসহ নানা অপরাধ কর্মের সাথে জড়িত রয়েছে। তারা মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের ভাড়া করা শহরের টিবি ক্লিনিক মোড়ের ১ নম্বর ছাত্র হোস্টেলে থেকে অপরাধ কর্ম করছে। ছাত্রলীগ নেতা পরিচয় দিয়ে জুবায়ের আহমেদের নেতৃত্বে চলা অপরাধ কর্মকাণ্ড কোনভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিলো না সাধারণ শিক্ষার্থীরা। কলেজ ছাত্রলীগের নেতাদের হুশিয়ারিও তোয়াক্কা করেনি জুবায়ের।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, জুবায়েরের নেতৃত্বে হোস্টেলে নেশার আড্ডা বসতো প্রতিনিয়ত। তাদের অসভ্যতায় অতিষ্ঠ হয়ে অন্য শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় ব্যাঘাত ঘটতে থাকে। গত বছরের শেষ দিকে কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করা হয়। হোস্টেল সুপারের দায়িত্বে থাকা সহকারী অধ্যাপক ডাক্তার এএইচএম আব্দুর রউফ অভিযুক্তদের শৃঙ্খলা বজার রাখার নির্দেশ দেন। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। সম্প্রতি হোস্টেল পরিচালনা কমিটি অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। অসদাচরণ ও নানা অপরাধ কর্মে জড়িত থেকে শিক্ষার্থীদের মাঝে ভ্রান্ত ধারণা সৃষ্টির কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে কলেজ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জুবায়ের আহমেদের বিষয়েও কঠোর হয়েছে সংগঠনটির অন্যান্য নেতারা।
দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে, কলেজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের অভিযোগ ও অসন্তোষের কারণে জুবায়ের আহমেদকে সংগঠন থেকে গত ১৬ জানুয়ারি বহিষ্কারের নির্দেশ দিয়েছেন যশোর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বিপুল।
এদিকে, জুবায়েরের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করায় তার অন্য ৩ সহযোগী বায়েজিদ হাসান বাধন, কাউছার হোসেন রমি ও রকিবুল হাসান বাপ্পি’র বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়ার দাবি ওঠে। হোস্টেলে বসবাসকারী সাধারণ শিক্ষার্থীরা অপরাধ কর্মের সাথে জড়িত উল্লেখিত ৪ শিক্ষার্থীকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে। একই সাথে তাদের হোস্টেলের সিট বাতিলের জন্যে দাবি জানানো হয়েছে। ১৬ জানুয়ারি শনিবার রাত ৯টা থেকে গতকাল দুপুর পর্যন্ত মেডিকেল কলেজের ১ নম্বর হোস্টেলে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজের খবর পাওয়া গেছে। তবে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
হোস্টেলের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, জুবায়ের আহমেদসহ অভিযুক্ত অন্য ৩ শিক্ষার্থী ২দিন ধরে হোস্টেলে নেই। তাদের অবস্থান কেউ বলতে পারছে না। কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসান তুহিন বলেন, জুবায়ের আহমেদ সংগঠনের নাম ভাঙিয়ে নেশার আড্ডাসহ নানা অপরাধ কর্মের সাথে জড়িত। তাকে একাধিকবার সতর্ক করা হয়েছে। নিজে না শুধরে আরো কয়েক বিপথগামী শিক্ষার্থীকে সংগঠিত করে অপরাধ কর্মের মাত্রা বাড়িয়ে চলছিলো। সংঠনের সুনাম রক্ষার্থে ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বার্থ বিবেচনা করে ঊর্ধ্বতন নেতাদের বিষয়টি অবগত করা হয়। সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ও নীতি বিরোধী কাজে জড়িত থাকায় জুবায়েরকে বহিষ্কার করা হয়।
হোস্টেল সুপার সহকারী অধ্যাপক ডাক্তার এএইচএম আব্দুর রউফ বলেন, কয়েক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ সম্প্রতি তার কাছে এসেছে। গতকাল সেটি তিনি দেখেছেন। অভিযোগের ব্যাপারে কলেজ কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
ডাক্তার রউফ আরো বলেন, অভিযোগটি কোনো রাজনৈতিক বিষয় নয়। কতিপয় শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গের বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। তদন্ত না করে কোনো মন্তব্য করা সঠিক হবে না। তাছাড়া কোনো শিক্ষার্থীর হোস্টেল থেকে সিট বাতিলের সিদ্ধান্ত জারি করা হয়নি।
মেডিকেল কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর ডাক্তার আবু হেনা মো. মাহবুব উল মওলা চৌধুরী বলেন, ছাত্র হোস্টেলে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতির খবর তার জানা নেই। অফিসিয়ালি কোনো অভিযোগ আসেনি। অভিযোগকারী বা অভিযুক্ত কোনো পক্ষ মৌখিক কিংবা লিখিত কিছু জানায়নি। ফলে হোস্টেলে প্রকৃত কী ঘটছে তা অজানা। হোস্টেল সুপার ও পরিচালনা কমিটির সাথে কথা বলে উদ্ভুত পরিস্থিতি সম্পর্কে জেনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। শিক্ষার্থীর লেখাপড়ার সুষ্ঠু পরিবেশ ও শান্তি বজায় রাখতে কোন প্রকার অপরাধ সহ্য করা হবে না।