৫ খুন : সন্দেহে ভাগ্নে মাহফুজ : সন্দেহের বাইরে নেই পরকীয়া

স্টাফ রিপোর্টার: নারায়ণগঞ্জ শহরের বাবুরাইলে ভাড়া বাসায় ঢুকে দুই শিশুসহ পাঁচজনকে হত্যার ঘটনায় এক ভাগ্নেসহ ৭ জনকে সন্দেহের কেন্দ্রে রেখে তদন্ত চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পরকীয়া সম্পর্ক ও সুদের পাওনা টাকা নিয়ে বিরোধের জের ধরে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে, এমন সন্দেহ করছেন নিহতদের স্বজন ও তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। খুনীরা নিহতদের পরিচিত ছিলো বলেও মনে করছেন পুলিশ ও র্যা ব কর্মকর্তারা। হাসপাতালে ময়নাতদন্ত কমিটি জানিয়েছে, গলা কেটে নয়, মাথায় আঘাত ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে ৫ জনকে। এ ঘটনায় এ পর্যন্ত ৬ জনকে আটক করা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ শহরের ৫ খুনে স্বজনদের পাশাপাশি পুলিশও সন্দেহ করছে আলোচিত ওই ঘটনায় স্ত্রী, দু সন্তান ও ভাইবউ হারানো শফিকুল ইসলামের ভাগ্নে মাহফুজকে। শনিবার রাতে শহরের ২ নম্বর বাবুরাইল এলাকার প্রবাসী ইসমাইলের পাঁচতলা বাড়ির একতলার পূর্ব পাশের ফ্ল্যাটে ওই ৫ জনের লাশ পাওয়া যায়। নিহতরা হলেন- তাসলিমা বেগম (৪০), তার ছেলে শান্ত (১০), মেয়ে সুমাইয়া (৫), ভাই মোরশেদুল (২৫) ও তাসলিমার জা লামিয়া (২৫)।
তাসলিমার স্বামী শফিকুল ইসলাম ঢাকায় একটি প্রাইভেট কোম্পানির গাড়িচালক। তার ছোট ভাই নিহত লামিয়ার স্বামী শরীফ মিয়া ঢাকার মোতালেব প্লাজায় মোবাইলফোন সার্ভিসিংয়ের কাজ করেন। পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, মাহফুজ তার ছোট মামীকে অশালীন প্রস্তাব দিতো। এ নিয়ে পারিবারিক সালিসও হয়। বিষয়টি শফিকুল রোববার সকালে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় দায়ের করা হত্যা মামলায়ও উল্লেখ করেছেন।
তাসলিমার খালা রমিজা খাতুন বলেন, ১৫ দিন আগে মামী লামিয়াকে কুপ্রস্তাব দেয়ার অভিযোগে মাহফুজকে জুতাপেটা করা হয়। এরপর পারিবারিক সালিশেও তাকে বকাঝকা করা হয়। তবে তাসলিমার কাছে পাওনা টাকা নিয়ে দেয়া হুমকির বিষয়টিও গুরুত্বের সাথে দেখছে পুলিশ। নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা ওসি আব্দুল মালেক জানান, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শফিকুলের ভাগ্নে মাহফুজ ও মোরশেদের খালাতো ভাই শাহজাদাকে আটক করা হয়েছে। এছাড়া ৮ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। পুলিশ সুপার ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন রোববার সাংবাদিকদের বলেন, হত্যাকাণ্ডের পেছনে ব্যক্তিগত সম্পর্ক বা দেনা-পাওনার বিষয় থাকতে পারে। আমরা আশা করছি, আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে রহস্য উদঘাটন করতে পারবো।
মামলায় যে অভিযোগ করেছেন শফিকুল: শফিকুল মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছেন, তার স্ত্রী তাসলিমার কাছে ঢাকার কলাবাগান এলাকার নাজমা, শাহজাহানসহ কয়েকজন প্রায় ১২ লাখ টাকা পেতো, যা মাসিক চক্র বৃদ্ধি হারে সুদে নেয়া। পাওনা টাকার জন্য তারা প্রায়ই নারায়ণগঞ্জের বাসায় এসে হুমকি দিতো। তাসলিমার ভাই মোশারফ হোসেন ওরফে মোরশেদের কাছেও ব্যবসায়ীক কারণে অনেকে টাকা পেতো। এছাড়া তার ছোটভাই শরীফের স্ত্রী লামিয়ার কাছে ‘যৌন আবেদন’ করতো ভাগ্নে মাহফুজ। লামিয়া বিষয়টি তার স্বামী শরীফ ও জা তাসলিমাকে জানিয়েছিলেন। আমার সন্দেহ উক্ত ব্যক্তিগণসহ অজ্ঞাতনামা দুস্কৃতিকারীরা পরস্পরের যোগসাজসে গত ১৫ জানুয়ারি রাত সাড়ে ১০টার পর থেকে ১৬ জানুয়ারি রাত ৮টা ২০ মিনিটের মধ্যে ভোতা অস্ত্র দিয়ে গুরুতর জখম কর গলায় ফাঁস লাগিয়ে ৫ জনকে হত্যা করেছে। হত্যাকাণ্ডের পর থেকে তাসলিমা ও মোরশেদের মুঠোফোনে পাওয়া যাচ্ছে না। পুলিশ মামলাটি গ্রহণ করে প্রাথমিক তথ্য বিবরণীতে আসামির ঘরে অজ্ঞাতনামা আসামিরা উল্লেখ করেছে। দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারায় (পরিকল্পিতভাবে পরস্পরের যোগসাজসে খুন করার অপরাধ) দায়ের মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সদর মডেল থানার এসআই হামিদুল ইসলামকে।