বিভাগীয় রাজস্ব সভা ও ইকোপার্কের রেস্টহাউজ উদ্বোধন

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় খুলনা বিভাগীয় কমিশনারসহ বিভাগের ১০ জেলার জেলা প্রশাসকদের মিলনমেলা বসেছিলো গতকাল বুধবার। প্রশাসনের এই শীর্ষ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ইনোভেশন কমিটিরসভা, বিভাগীয় রাজস্ব সমাবেশ, প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধান কার্যক্রম ও ডিসি ইকোপার্কের রেস্ট হাউজের শুভ উদ্বোধন করা হয়। সবকটি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো. আব্দুস সামাদ।
বিভাগীয় কমিশনার মো. আব্দুস সামাদ প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, নিজেকে খাপ খাইয়ে নেয়াই ইনোভেশন। জনগণের কল্যাণে কাজ করতে হবে। সরকার নির্ধারিত কাজ ছাড়াও অতিরিক্ত কাজ করতে হবে। খুলনা বিভাগে প্রায় সব বিষয়ে ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে। তবে, এ বিভাগে বাল্যবিয়ের চিত্র খুবই হতাশাজনক। বাল্যবিয়ে বন্ধে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। আসন্ন এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ট্রেজারিতে রাখতে হবে। ব্যাংকে রাখা যাবে না। ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়া প্রশ্ন কেউই খুলতে পারবে না। নকলমুক্ত পরিবেশে পরীক্ষা গ্রহণ করতে হবে। ২০১৬ সালের উদ্ভাবনী কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে পাঠাতে হবে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পড়ে আছে তা বরাদ্দ দিতে হবে। প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ ও অনুসন্ধান কার্যক্রমে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা সহযোগীতা করবেন। আখচাষ যাতে বৃদ্ধি পায় সেদিকে সকলকে দৃষ্টি দিতে হবে। ভ্রমণের জন্য এখন আর দেশবাসীকে আমেরিকা, সিঙ্গাপুর অথবা থাইল্যান্ড যেতে হবে না। চুয়াডাঙ্গা জেলার গর্ব ডিসি ইকোপার্ক ভ্রমণ পিপাসুদের আকৃষ্ট করবে। ইকোপার্কের জমি সরকারি হলেও পার্কটি এলাকাবাসীদের সম্পদ। তাই এ সম্পদ সকলকে রক্ষা করতে হবে। ইকোপার্ক ভ্রমণ সকলকে মুগ্ধ করবে।
বেলা ১১টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে জেলা প্রশাসক সায়মা ইউনুসের সভাপতিত্বে জেলা ইনোভেশন কমিটিরসভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বিভাগীয় কমিশনার মো. আব্দুস সামাদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন, খুলনা জেলা প্রশাসক মোস্তফা কামাল, মেহেরপুর জেলা প্রশাসক শফিকুল ইসলাম, ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক মাহবুব আলম তালুকদার, সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসান, যশোর জেলা প্রশাসক ড. মো. হুমায়ুন কবীর ও নড়াইল জেলা প্রশাসক হেলাল মাহমুদ শরীফ এবং বাগেরহাটের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক শফিকুল ইসলাম, কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আবু হেনা মোস্তফা কামাল ও মাগুরার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কালাচাঁদ সিংহ।
ইনোভেশন কমিটির সভায় চুয়াডাঙ্গার জেলায় এ পর্যন্ত গৃহীত ৩৫টি ইনোভেশন প্রকল্প উপস্থাপন করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আনজুমান আরা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা খোন্দকার রুহুল আমীন, জেলা ভারপ্রাপ্ত তথ্য কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দীক ও জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক রেজাউল করিম। এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আনজুমান আরা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) আব্দুর রাজ্জাক, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কেএম মামুন উজ্জামান, দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদুর রহমান, জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল হাফিজ, আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আহমেদ কামরুল হাসান ও এনডিসি মুনিবুর রহমানসহ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ উপস্থিত ছিলেন।
দুপুর ১২টায় খুলনা বিভাগীয় কমিশনারের সভাপতিত্বে বিভাগীয় মাসিক রাজস্বসভা অনুষ্ঠিত হয়। অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে খুলনা বিভাগে চলতি অর্থবছরের গত ৬ মাসের রাজস্ব আদায় নিয়ে আলোচনা হয়। ১০ জেলার জেলা প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকগণ নিজ নিজ জেলার পক্ষে মতামত দেন।
বেলা ১টায় প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর খুলনা বিভাগের আয়োজনে চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া জেলায় প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ ও অনুসন্ধান কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন বিভাগীয় কমিশনার। প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের মহাপরিচালক আলতাফ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান একেএম দেলোয়ার হোসেন। এ সভায় কেরু অ্যান্ড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবিএম আরশাদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন। খুলনার জেলা প্রশাসক মোস্তফা কামাল পেট্রোবাংলার পরিচালক হিসেবে পদোন্নতি পাওয়ায় তাকে বিভাগীয় কমিশনার ও খুলনা বিভাগের ১০ জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে বিদায় সংবর্ধনা ও শুভেচ্ছা উপহার দেয়া হয়। বেলা ৩টায় কেরুজ ফুটবল মাঠে প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ ও অনুসন্ধান কার্যক্রমের উদ্বোধন উপলক্ষে রঙ-বেরঙের বেলুন উড়ান প্রধান অতিথি বিভাগীয় কমিশনার আব্দুস সামাদ।
বিকেল ৫টায় বিভাগীয় কমিশনার সহকর্মীদের সাথে নিয়ে দামুড়হুদা উপজেলার শিবনগরে অবস্থিত ডিসি ইকোপার্কে যান এবং সেখানে নবনির্মিত রেস্টহাউজ উদ্বোধন করেন। ১০ জেলার জেলা প্রশাসকগণ একটি করে গাছ লাগান। এছাড়া বিভাগীয় কমিশনার আব্দুস সামাদ ও জেলা প্রশাসক সায়মা ইউনুসসহ কর্মকর্তারা নৌ-ভ্রমণ করেন। সন্ধ্যায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান কার্পাসডাঙ্গায় খ্রিস্টানপাড়ায় অবস্থিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতি বিজড়িত আটচালা ঘরের পাশে স্মৃতিফলক উন্মোচন করেন। এ সময় দামুড়হুদা উপজেলা চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল আলম ঝন্টু ও হাউলী ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী শাহ মিন্টু, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল করিমসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
দামুড়হুদা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, এদেশের মানুষ ভ্রমণ করতে বিদেশ যায়। যারা লাখ লাখ টাকা খরচ করে সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করতে যায় আমি ওই সমস্ত ভ্রমণ পিয়াশীদের অনুরোধ করবো এখন থেকে আর সিঙ্গাপুর না গিয়ে আপনারা দামুড়হুদার শীবনগর আমবাগানে গড়ে তোলা দৃষ্টিনন্দন ডিসি ইকো পার্কে আসুন। গতকাল বুধবার বিকেলে দামুড়হুদা উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে জমিদার নফর পাল চৌধুরীর স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহ্যবাহি তালসারি শীবনগর আমবাগানে নির্মাণাধীন রেস্ট হাউজ উদ্বোধনকালে খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুস সামাদ প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত কথাগুলো বলেন। দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ফরিদুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি আরো বলেন, এই পার্ক হবে পাখিদের অভয়ারণ্য। বিভিন্ন প্রজাতির লাখ লাখ পাখি এই পার্কের শোভাবর্ধণ করবে। কেউ যদি একটি পাখিও হত্যা করে তবে তাকে ধরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জেলে ঢোকানো হবে। আগামীতে এ পার্কের কারণে এলাকার নাম দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়বে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি এর আগে পার্কের কোলঘেষা বটতলীর বিলের সাম্পান নৌকায় চড়ে এলাকা ঘুরে দেখেন এবং গাছের চারা রোপন শেষে নির্মাণাধীন রেস্ট হাউজের ফলক উম্মোচন করেন। এ সময় বিলের দুপাড়ে এলাকার শ শ নারী-পুরুষের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।