ঢাকার মিরপুরে বাসা থেকে হাঁটতে বেরিয়ে ট্রাকের ধাক্কায় শিশুপুত্রসহ আলমডাঙ্গা খুদিয়াখালীর শান্তি নিহত

 

স্টাফ রিপোর্টার: ছয় বছরের শিশুসন্তান রূপককে নিয়ে হাঁটতে বেরিয়েছিলেন বাবা আসাদুজ্জামান বিশ্বাস শান্তি। দ্রুত গতির একটি ট্রাক পেছন দিক থেকে তাদেরকে ধাক্কা দেয়। এতে ছিটকে পড়েন বাবা ও সন্তান। তবু ছোট্ট শিশুর কোমল দেহ কোলের মধ্যে আঁকড়ে ধরে রাখেন বাবা শান্তি। ততোক্ষণে বাবা-সন্তান চলে গেছেন না ফেরার দেশে। নিহতরা হলেন চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার জেহালা ইউনিয়নের খুদিয়াখালী গ্রামের আসাদুজ্জামান বিশ্বাস ওরফে শান্তি (৩৮) ও তার ছয় বছরের ছেলে সাদ আবরার তিশাল ওরফে রূপম। নিহত শান্তি খুদিয়াখালী গ্রামের মৃত মজির উদ্দিন বিশ্বাসের ছেলে ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মেহেদী মাসুদের ভাই। মিরপুর থানার ওসি ভুইয়া মাহবুব হোসেন জানান, মিরাজ নামে আসাদুজ্জামানের এক বন্ধু জানান, বনশ্রীতে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সিইএ হিসেবে কর্মরত ছিলেন শান্তি।

গত পরশু শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে মিরপুরে শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের ভিআইপি গেটের সামনে সড়কে মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার পরপরই পথচারী গিয়ে দেখেন এক ব্যক্তি রক্তাক্ত অবস্থায় ছোট্ট এক শিশুকে কোলের মধ্যে নিয়ে রাস্তায় পড়ে আছেন। রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসকরা জানান, হাসপাতালে নেয়ার আগেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। মিরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ ভুইয়া মাহবুব হোসেন জানান, আসাদুজ্জামান শান্তি তার ছেলেকে নিয়ে মিরপুর ছয় নম্বর সেকশনের বাসায় ফিরছিলেন। স্টেডিয়ামের সামনে বেপরোয়া গতির ট্রাক ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়। দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, বাবার কোলের মধ্যে সন্তানের নিথর দেহ। বাবাও বেঁচে নেই। ধাক্কা খেয়েও ছেলেকে কোলছাড়া করেননি তিনি। স্থানীয় লোকজন ট্রাক ও তার চালক শহীদকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে। এ ব্যাপারে আসাদুজ্জামান শান্তির ভায়রা সেলিম রেজা বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন। স্বামী আসাদুজ্জামান শান্তি ও একমাত্র সন্তান তিশাল ওরফে রূপমকে হারিয়ে ইলারা রুমি এখন পাগল প্রায়। কী করবেন কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না। ইলারা রুমি চুয়াডাঙ্গা হাসপাতালপাড়ার বাসিন্দ চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের অবসপ্রাপ্ত শিক্ষক আবদুল হাইয়ের মেয়ে।

গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে পিতা-পুত্রের লাশ নেয়া হয় গ্রামের বাড়ি আলমডাঙ্গার খুদিয়াখালী গ্রামে। তাদের মৃতদেহ এক নজর দেখার জন্য শত শত মানুষের ভিড় জমে। রাত সাড়ে ১০টার দিকে গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে জানাজা শেষে তাদের দাফন কাজ সম্পন্ন হয়েছে। পিতা-পুত্রের এ অকাল মৃত্যুতে পরিবারে ও আশপাশ এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। নিহত আসাদুজ্জামান শান্তি  ৩ বোন ও ৩ ভাইয়ের মধ্যে ছিলেন মেজ।