জেলা পরিষদের পরোক্ষ ভোট হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ

 

পরোক্ষ ভোটে নির্বাচন সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক : তফসিল স্থগিতের আবেদন : রোববার শুনানি

স্টাফ রিপোর্টার: ৬১ জেলা পরিষদ নির্বাচনের ঘোষিত তফসিল স্থগিত ও স্থানীয় সরকার (জেলা পরিষদ) আইনের তিনটি ধারার কার্যকারিতা স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন দাখিল করা হয়েছে। এ রিটে জেলা পরিষদ নির্বাচনের বিদ্যমান ব্যবস্থা সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক বলে দাবি করা হয়েছে। রিটকারী আইনজীবী ইউনূস আলী আকন্দ বলেছেন, নির্বাচকমণ্ডলী হিসাবে যাদের নির্ধারন করা হয়েছে তারা কেউই জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বা সদস্য নির্বাচনে ভোট দেয়ার জন্য নির্বাচিত হননি। বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর ডিভিশন বেঞ্চে গতকাল মঙ্গলবার রিট আবেদনটি উপস্থাপন করা হলে আদালত রোববার সেটি শুনানির দিন ধার্য করে। রিটে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, আইন সচিব, স্থানীয় সরকার সচিব ও প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে বিবাদী করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত সংবিধানের ১১ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রশাসনের সকল পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধির মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে। এছাড়া সংবিধানের ৫৯(১) অনুচ্ছেদে স্থানীয় শাসন সম্পর্কে বলা হয়েছে, আইনানুযায়ী নির্বাচিত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত প্রতিষ্ঠানসমূহের ওপর প্রজাতন্ত্রের প্রত্যোক প্রশাসনিক একাংশকে স্থানীয় শাসনের ভার প্রদান করা হবে। রিটকারী বলেছেন, যেহেতু সংবিধানে নির্বাচকমণ্ডলী নির্ধারনের কোনো বিধান নেই সুতরাং কোনো আইন দ্বারা তা করা বেআইনি। স্থানীয় সরকার (জেলা পরিষদ) আইন-২০০০ এর ৪(২) ধারা অনুযায়ী নির্বাচকমণ্ডলী গঠন এবং ১৭ ধারা অনুযায়ী ভোটার কারা হবেন তা নির্ধারন করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া রিটে ওই আইনের সর্বশেষ সংশোধনীর ৫ ধারা বাতিল করার প্রস্তাব করা হয়েছে। গত ২০ নভেম্বর জেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। তফসিল অনুযায়ী, আগামী ২৮ ডিসেম্বর পার্বত্য তিন জেলা বাদে বাকি ৬১ জেলায় জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আইন অনুযায়ী, প্রতিটি জেলায় স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জনপ্রতিনিধিদের ভোটে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা নির্বাচিত হবেন। প্রতিটি জেলায় ১৫ জন সাধারণ ও পাঁচজন সংরক্ষিত নারী সদস্য থাকবেন। স্থানীয় সরকারের অন্যান্য স্তরে দলীয় মনোনয়নে চেয়ারম্যান বা মেয়র নির্বাচন হলেও জেলা পরিষদে তা হচ্ছে না। যদিও আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার বিষয়ক কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ড ৬১ জেলা পরিষদে ৬১ জন দলীয় নেতাকে সমর্থনের কথা ঘোষণা করেছে। শুক্রবার রাতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রার্থিতা ঘোষণা করেন। তিনি আরও জানান, জেলা পরিষদের সদস্য পদে কারা ভোটে দাঁড়াবেন তা সংশ্লিষ্ট জেলা আওয়ামী লীগ ঠিক করবে। এদিকে দলীয় সমর্থন পাওয়ার পর প্রার্থীরা মাঠে নেমেছেন ভোট সংগ্রহের কাজে। এ নিয়ে কোথাও কোথাও দলের অভ্যন্তরে কোন্দলও প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। বেশ কিছু জায়গায় ঘোষিত প্রার্থীর পক্ষে-বিপক্ষে মিছিল ও সমাবেশ করেছে। এ রকম বাস্তবতায় জেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে তা স্থগিতের আবেদন করে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ইউনূস আলী আকন্দ এ রিট করেন। রিটে বলা হয়, সংবিধানের ১১ ও ৫৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী স্থানীয় সরকার নির্বাচন হবে জনগণের সরাসরি ভোটে। কিন্তু জেলা পরিষদ আইনের ৪, ৫ ও ১৭ নম্বর ধারার আলোকে নির্বাচন করা হচ্ছে নির্বাচকমণ্ডলীর মাধ্যমে। এখানে সরাসরি ভোটের সুযোগ নেই। সংবিধানে পরোক্ষ ভোট বলে কিছু নেই। তাই ওইসব ধারা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

জেলা পরিষদ আইন-২০০০ এর ৪ (২) ও ১৭ ধারা এবং জেলা পরিষদ সংশোধিত আইন-২০১৬ এর ৫ ধারাকে রিটে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। এসব ধারায় বলা হয়েছে, জেলার অন্তর্ভুক্ত স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান যেমন- সিটি করপোরেশন (যদি থাকে), উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত প্রতিনিধি নির্বাচকমণ্ডলীর সদস্য হবেন এবং তারা জেলা পরিষদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করবেন। যদিও নির্বাচকমণ্ডলী যাদেরকে করা হয়েছে সাংবিধানিকভাবে তারা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কিংবা সদস্য নির্বাচনে ভোটার হবেন এমন বিধান নেই। জেলা পরিষদ আইনের ৪(২), ১৭ ও ৫ ধারা কেন সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক নয়—এই মর্মে রুল জারির জন্য আদালতে আবেদন জানানো হয়েছে। একইসাথে ঘোষিত তফসিল কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না—এই মর্মে রুল জারির জন্য আবেদন করা হয়েছে রিটে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে আবেদনটি শুনানির জন্য হাইকোর্টে উপস্থাপন করেন রিটকারী আইনজীবী। এ পর্যায়ে রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস আদালতে বলেন, রিটের বিষয়বস্তুর সাথে আইনের ব্যাখ্যার বিষয়টি জড়িত। আইন পর্যালোচনা করতে হবে। তখন আদালত রোববার শুনানির জন্য দিন ধার্য করে বলেন, আপনারা আইনের ব্যাখ্যাগুলো জেনে আসবেন।

উল্লেখ্য, ১৯৮৮ সালে এইচএম এরশাদ সরকার প্রণীত স্থানীয় সরকার (জেলা পরিষদ) আইনে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে সরকার কর্তৃক নিয়োগ দেয়ার বিধান ছিলো; পরে আইনটি অকার্যকর হয়ে যায়। ২০০০ সালে তত্কালীন আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচিত জেলা পরিষদ গঠনের জন্য নতুন আইন করে। এরপর ২০১১ সালের ১৫ ডিসেম্বর সরকার ৬১ জেলায় আওয়ামী লীগের জেলা পর্যায়ের নেতাদের প্রশাসক নিয়োগ দেয়। প্রশাসক নিয়োগের ৫ বছরের মাথায় এই নির্বাচন হতে যাচ্ছে।