জীবননগরে জোড়ালাগা যমজ শিশুর জন্ম!

 

 

এম আর বাবু: চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে পেটজোড়া লাগা যমজ শিশুর জন্ম হয়েছে। শহরের একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে গতকাল বুধবার অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে মা সীমা খাতুন (২০) যমজ কন্যাশিশুর জন্ম দেন। তাদের নাম রাখা হয়েছে হাসি-খুশি। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. মাহমুদ বিন হেদায়েত সেতু অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তাদের ভূমিষ্ঠ করান। জন্মের পর তারা সুস্থ রয়েছেন বলে চিকিৎসক জানিয়েছেন। এদিকে দরিদ্র কৃষক পরিবারে পেটজোড়া লাগানো যমজ শিশুর জন্ম হওয়ায় কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মুকুল-সীমা দম্পতি। তাদের চিকিৎসা করানো নিয়ে দরিদ্র মুদিদোকানি পিতা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। অপরদিকে জোড়া লাগা যমজ শিশুর জন্মের খবর ছড়িয়ে পড়লে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত উৎসুক নারী-পুরুষ শিশু দুটিকে এক নজর দেখার জন্য ক্লিনিকে ভিড় করেন। এ সময় বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থীকে সামাল দিতে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষকে হিমশিম খেতে হয়। আজ বৃস্পতিবার যমজ জোড়া লাগা শিশু দুটিকে ঢাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে নেয়া হবে বলে পারিবারিক সূত্রে জানানো হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার মেদিনীপুর গ্রামের বাদল মিয়ার মেয়ে সীমা খাতুনের দুই বছর পূর্বে পার্শ্ববর্তী গয়েশপুর গ্রামের জাহানুল হোসেনের ছেলে মুদিদোকানি মুকুল মিয়ার সাথে বিয়ে হয়। সীমার প্রসব বেদনা উঠলে গতকাল বুধবার সকালে তাকে জীবননগরের আদর্শ ক্লিনিক অ্যান্ড নার্সিং হোমে ভর্তি করা হয়। এখানে চিকিৎসক আল্ট্রাসনোগ্রাম করার পর সীমার গর্ভে যমজ শিশুর অস্তিত্ব পান। ডা. মাহমুদ বিন হেদায়েত সেতু অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে দেখেন কন্যা শিশু দুটির বুকের সিনা হতে নাভি পর্যন্ত জোড়া লাগানো। দুটি মাথা, দুটি পা, দুটি হাত ও আলাদা যৌনাঙ্গ নিয়ে জন্ম নেয়া শিশু দুটিকে তাদের পক্ষে আলাদা করা অসম্ভব। এ অবস্থায় তিনি তাদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেন।

চিকিৎসক ডা. মাহমুদ বিন হেদায়েত সেতু জানান, এমন শিশু জন্মের ঘটনা খুবই বিরল। এ রোগের নাম কনজয়েন্ট টুইন। দুজনকে আলাদা করতে হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ নিতে হবে। এর জন্য বিপুল অংকের অর্থেরও প্রয়োজন। এ জন্য তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ অথবা পিজি হাসপাতালে দ্রুত নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডা. ওয়ালিউর রহমান নয়ন জানান, জেনেটিক কারণে এ ধরনের শিশুর জন্ম হয়ে থাকে। বাংলাদেশে জোড়া লাগা কয়েকটি শিশুর অস্ত্রোপচার ঢাকা পিজি হাসপাতালে হয়েছে। এছাড়া দেশের বাইরে এর অস্ত্রোপচার হয় না। তাছাড়া ওই যমজ শিশুর জোড়া লাগা কি অবস্থায় আছে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরেই বোঝা যাবে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তাদেরকে আলাদা করা যাবে কি-না। হাশি-খুশির নানা বাদল মিয়া জানান, পেটজোড়া লাগা যমজ নাতনি জন্মের খবরে তাদের পরিবারে খুশির পরিবর্তে হতাশা নেমে এসেছে। হাসি-খুশি তার মেয়ে-জামাইয়ের প্রথম সন্তান বলে তিনি জানান। বাদল মিয়া জানান, তিনি একজন দরিদ্র কৃষক, অন্যদিকে জামাই মুকুল ক্ষুদ্র একজন মুদিদোকানি। যমজ হাসি-খুশিকে আলাদা করতে ব্যয়বহুল চিকিৎসার প্রয়োজন বলে চিকিৎসক জানিয়েছেন। যা তাদের পক্ষে বহন করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এ জন্য তিনি সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।