চুয়াডাঙ্গার খাড়াগোদা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে যুবলীগ সভাপতির পাঁচিল নির্মাণ : বিপাকে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ : উত্তেজনা

 

 

সরোজগঞ্জ প্রতিনিধি/বেগমপুর প্রতিনিধি: সীমানা পাঁচিল নির্মাণ করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছে চুয়াডাঙ্গার খাড়াগোদা মাধ্যমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অপরদিকে নিজের জমিতে পাঁচিল দিয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান ফটক বন্ধ করে দিয়েছেন তিতুদহ ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি রোকন। বিদ্যালয়ের সীমানা পাঁচিল এবং প্রধান ফটক বন্ধ নিয়ে এলাকায় বিরাজ করছে চরম উত্তেজনা। নিজেদের পাঁচিল দেয়া নিয়ে উভয়পক্ষ নানা যুক্তি তুলে ধরেছেন।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার তিতুদহ ইউনিয়নের গড়াইটুপি মৌজায় ১৯৫০ সালে খাড়াগোদা প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ১৯৬১ সালে খাড়াগোদা মাধ্যমিক বিদ্যালয় নামে দুটি প্রতিষ্ঠন গড়ে তোলে এলাকার শিক্ষানুরাজ্ঞীরা। সেই থেকে পাশাপাশি দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠন দীর্ঘদিন স্বাভাবিকভাবে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। সম্প্রতি মাধ্যমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিদ্যালয়ের জমি মাপজোঁক করে বিদ্যালয়ের পূর্বপাশে সীমানা পাঁচিল নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। সে মোতাবেক কলম ঢালাই দিয়ে কাজ শুরু করে। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার সীমানা ঘিরে দেয়ায় বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরে গত সোমবার নিজ জমির সীমানায় পাঁচিল তোলে খাড়াগোদা গ্রামের প্রায়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা সাইদুর রহমানের ছেলে তিতুদহ ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আসাদুল ইসলাম রোকন। রোকন পাঁচিল তোলায় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান ফটক সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায়। ফলে দুটি বিদ্যালয়ে ঢোকার সব রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। রোকন জানান, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার সীমানা বুঝ করে যদি পাঁচিল দিতে পারে আমি কেন আমার জমিতে পাঁচিল দিতে পারবো না। কারণ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ওই পাঁচিল দেয়ার ফলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েরা, এলাকার মানুষের ঈদের নামাজ পড়তে যাওয়া, দুটি গোরস্তানে যাতায়াত করা, জানাজার নামাজ পড়া, লাশ নিয়ে যাওয়া সবকিছু বন্ধ হয়ে যাবে। স্কুল-কলেজ, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ সামাজিক প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় এবং সুবিধামতো জায়গায়। এত মানুষের অসুবিধার দিকটি বিবেচনায় না নিয়ে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একক সিদ্ধান্তে পাঁচিল দিচ্ছে, সেখানে আমি আমার জায়গায় পাঁচিল দেবো তাতে কারো অসুবিধা হওয়ার কথা না।

বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি আব্দুল মতিন বলেন, আমি দায়িত্বে থাকা অবস্থায় সীমানা পাঁচিল দেয়ার জন্য জেলা পরিষদে আবেদন করেছিলাম সে মোতাবেক কাজ হচ্ছে। উদ্দেশ্য বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েদের নিরাপত্তা দেয়া। সভাপতি শফিকুর রহমান রাজু বলেন, প্রত্যেকেই চাই তার বাড়িটি সুরক্ষিত এবং নিরাপদে থাকুক। বিদ্যালয়ের নিরাপত্তা মানে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা। কারণ প্রতিটি অভিভাবক তাদের সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠায় নিরাপদে থাকার জন্য। তাছাড়াও পাঁচিল দেয়ার সিদ্ধান্ত বিগত কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক হচ্ছে এটা আমার কোনো সিদ্ধান্ত না। এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান আকতার হোসেন বলেন, আমি পাঁচিল দেয়ার বিপক্ষে না। তবে খেলার মাঠ নষ্ট করে পাঁচিল দেয়ার পক্ষে না। পূর্বে সিদ্ধান্ত ছিলো বিদ্যালয়ের দক্ষিন পাশে ঈদগার বাইরে দিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয় সীমানা দিয়ে পাঁচিল দেয়া। হঠাৎ দু শিক্ষা প্রতিষ্ঠনের মধ্যদিয়ে পাঁচিল দেয়া এটা কোনো যুক্তি হতে পারে না। এ বিদ্যালয় দুটিতে যে সব গ্রামের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উচিত ছিলো সে সব গ্রামের অভিভাবকদের ডেকে তাদের মতামত নিয়ে কাজটি করা। তবে স্থানীয়রা অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, এটা একটি রাজনৈতিক পাঁচিল। যে যার জেদ বজায় রাখতে চাইছে। এমটি চলতে থাকলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এলাকার ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া। বিষয়টি নিয়ে এলাকাই যেমন বইছে আলোচনা-সমালোচনা তেমনি বিরাজ করছে উত্তেজনা। দ্রুত আলোচনার টেবিলে বসে এ সমস্যার সমাধান চাই অভিভাবকেরা। কারণ ১ জানুয়ারি থেকে নতুন বছরের বই বিতরণ এবং লেখাপড়া শুরু হবে।