আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের লড়াই

 

স্টাফ রিপোর্টার: প্রথমবারের মতো জেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ আজ বুধবার। নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই। নেই উত্তাপ, তবে আছে টাকার খেলা। অধিকাংশ জেলায় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে রয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থী। ফলে লড়াই মূলত আওয়ামী লীগেরই বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের। নির্বাচন কমিশন (ইসি) ঘোষিত ৬১ জেলা পরিষদের নির্বাচনের মধ্যে ২১ জেলায় বিনাভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। আদালতের নির্দেশে কুষ্টিয়ার চেয়ারম্যান পদে ভোট স্থগিত আছে। যে ৩৯ জেলায় চেয়ারম্যান পদে ভোট হবে- তার মধ্যে ৩৪ জেলায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর বিরুদ্ধে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। এদিকে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন আয়োজনের সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব মোহাম্মদ আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, এখানে ভোটার খুব কম হলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যথেষ্ট সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। ভোটকেন্দ্রে সব ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

ইসি জানিয়েছে, মন্ত্রী-এমপিদের আচরণ বিধি মেনে চলার তাগিদ দিয়ে গত মঙ্গলবার রাতে স্পিকারের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে ইসি। চিঠিতে সংশ্লিষ্টদের নির্বাচনী এলাকার বাইরে অবস্থান করতে বলা হয়। একই সঙ্গে সংখ্যালঘু ভোটারদের নিরাপত্তা ও সুষ্ঠুভাবে ভোট সম্পন্নে গুরুত্বারোপ করে গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আরেক চিঠি দিয়েছে ইসি সচিব। এ নির্বাচনে প্রায় ৫ কোটি টাকা খরচ হচ্ছে ইসির। প্রত্যক্ষ ভোট না হওয়ায় নির্বাচনে টাকার খেলা চলছে। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ইলেকট্ররাল পদ্ধতিতে একযোগে জনপ্রতিনিধিদের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। স্থানীয় সরকারের সিটি করপোরেশন, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও ইউপির জনপ্রতিনিধিরা জেলায় ১ জন চেয়ারম্যান, ১৫ জন সদস্য ও ৫ জন সংরক্ষিত সদস্য নির্বাচনে ভোটরাধিকার প্রয়োগ করবেন। ৬১টি জেলার মধ্যে আজ ৫৯ জেলায় ভোট হবে। কারণ ফেনী এবং ভোলায় চেয়ারম্যান ও সদস্য পদে ক্ষমতাসীনদের সবাই বিনাভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। ২১ জন চেয়ারম্যানসহ ২৫৬ জন বিনাভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে সদস্য পদে ১৬৬ জন এবং সংরক্ষিত সদস্য পদে ৬৯ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন। ৩৯ জেলায় চেয়ারম্যান, সদস্য ও সংরক্ষিত সদস্য পদে এবং বাকি ২০ জেলায় শুধু সদস্য ও সংরক্ষিত সদস্য পদে ভোট অনুষ্ঠিত হবে।

জেলা পরিষদ নির্বাচনে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ, বিজিবি, আনসার ও ভিডিপি, কোস্টগার্ড, ব্যাটালিয়ন আনসার নিয়োগ করা হয়েছে। প্রতি ভোটকেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২০জন করে সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ: চেয়ারম্যান পদে যে ৩৯ জেলায় ভোট হবে সেখানে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর বাইরে ৩৪ জেলায় ৫৩ জন প্রার্থী হয়েছেন। এর মধ্যে ৩৮ জেলায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আছে। চাঁদপুরে দলটির পক্ষ থেকে কাউকে সমর্থন দেয়া হয়নি। এখন পর্যন্ত ময়মনসিংহ, কক্সবাজার, রংপুর ও ঝিনাইদহে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী রয়েছেন। বরগুনায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীর প্রতিপক্ষ জাতীয় পার্টি-জাপার প্রার্থী। এছাড়াও মানিকগঞ্জ, নরসিংদী, রাজবাড়ী, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর, জামালপুর, শেরপুর, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বগুড়া, পাবনা, খুলনা, সাতক্ষীরা, চুয়াডাঙ্গা, মাগুরা, মেহেরপুর, সিলেট, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, পঞ্চগড়, নীলফামারী, বরিশাল, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, নড়াইল, চাঁদপুরে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী আছে। ভোটার না হওয়ায় চাঁদপুরে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েও মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি লে. কর্নেল (অব.) এম আবু ওসমান চৌধুরী। সেখানে আওয়ামী লীগ থেকে চারজন প্রার্থী হয়েছেন।

বিনাভোটে নির্বাচিত ২১ জন: বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতে যাওয়া প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা জেলায় মাহবুবুর রহমান, কিশোরগঞ্জে জিল্লুর রহমান, গাজীপুরে আখতার উজ্জামান, নারায়ণগঞ্জে আনোয়ার হোসেন, মুন্সিগঞ্জে মহিউদ্দীন, ফরিদপুরে লোকমান হোসেন মৃধা, টাঙ্গাইলে ফজলুর রহমান খান ফারুক, চট্টগ্রামে আবদুস সালাম, ফেনীতে আজিজ আহমদ চৌধুরী, ঝালকাঠিতে সরদার মো. শাহ আলম, ভোলায় আব্দুল মুমিন টুলু, বাগেরহাটে শেখ কামরুজ্জামান টুকু, যশোরে শাহ হাদীউজ্জামান, নেত্রকোণায় প্রশান্ত কুমার রায়, জয়পুরহাটে আরিফুর রহমান, নওগাঁয় একেএম ফজলে রাব্বি, নাটোরে সাজেদুর রহমান খান, সিরাজগঞ্জে আব্দুল লতিফ বিশ্বাস, হবিগঞ্জে ডা. মুশফিক হুসেন চৌধুরী, দিনাজপুরে আজিজুল ইমাম চৌধুরী ও ঠাকুরগাঁওয়ে মু. সাদেক কোরাইশী।

প্রতিকেন্দ্রে একজন ম্যাজিস্ট্রেট: প্রতিকেন্দ্রে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করেছে কমিশন। ৮৩৬টি ভোটকেন্দ্রে ৮৩৬ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কেন্দ্রের ভেতরে দায়িত্ব পালন করবেন। এর পাশাপাশি ৯১ জন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোবাইলকোর্ট পরিচালনার দায়িত্বে থাকবেন।

প্রার্থীভোটার সংখ্যা: কার্যত ৩৯ জেলায় চেয়ারম্যান পদে ভোট হবে। নির্বাচনে প্রতি জেলায় মোট ভোটকেন্দ্র ১৫টি। প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি ভোটকেন্দ্র থাকবে। প্রতিকেন্দ্রে পুরুষ ও মহিলা ভোটারদের পৃথক কক্ষ থাকবে। নির্বাচনে মেয়র পদে ১৪৬ জন, সাধারণ সদস্য পদে ২ হাজার ৯৮৬ ও সংরক্ষিত সদস্য পদে ৮০৬ জন প্রার্থী রয়েছেন। সারাদেশে মোট ভোটারের সংখ্যা ৬৩ হাজার ১৪৩ জন, যার মধ্যে পুরুষ ৪৮ হাজার ৩৪৩ ও নারী ১৪ হাজার ৮০০ জন। জেলা পরিষদে সর্বোচ্চ ভোটার-চট্টগ্রাম-২৭০৬ জন এবং সর্বনিম্ন ভোটার-মেহেরপুরে ২৬৯ জন।

ইসি সচিবের ব্রিফিং: ইসি সচিবালয়ের সচিব মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেছেন, ব্যতিক্রম হচ্ছে এই নির্বাচনে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের অন্য নির্বাচনের মত কেন্দ্রে গিয়ে রাত্রী যাপনের বিষয়টি বাধ্যবাধকতা করা হয়নি। নির্বাচনে ভোটার কম হওয়ার কারণে এটা করা হয়েছে। আগের দিন তারা নির্বাচনী সামগ্রী গ্রহণ করে উপজেলা মালখানায় রাখবেন এবং ভোটের দিন সকাল ৭টার মধ্যে কেন্দ্রে পৌঁছতে হবে। গতকাল ইসি সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি একথা বলেন। তিনি বলেন, রাজনৈতিক সচেতন ব্যক্তিরা ভোটার। এমন একটা আশঙ্কা রয়েছে যে ভোটদানের গোপনীয়তা ভঙ হতে পারে। কেউ হয়তো প্রমাণের জন্য ব্যালট পেপারের চিহ্ন মোবাইলে ছবি ধারণ করতে পারে। এজন্য কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোনো ধরনের ডিজিটাল ডিভাইস সেটা দিয়ে স্ক্যান করা যেতে পারে তা কেন্দ্রে অ্যালাউ নয়। বিএনপি ও জাতীয় পার্টি-জাপা এই নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলেও দল দু’টির দুইজন করে প্রার্থী রয়েছেন। আওয়ামী লীগের বাইরে মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টি-জেপি থেকে ৩ জন ও জাসদ থেকে তিনজন ছাড়াও গণফোরাম থেকে একজন প্রার্থী আছেন।