খুলনায় আওয়ামী লীগ নেতাকে হত্যার চেষ্টা : গুলিতে গৃহবধূ নিহত

 

স্টাফ রিপোর্টার: ফুল কিনে পূজা দেয়া হলো না গৃহবধূ শিপ্রা রানী কুণ্ডুর (৫৩)। আওয়ামী লীগ নেতা জেডএ মাহমুদ ডনকে হত্যার উদ্দেশে দুর্বৃত্তরা গুলি ছোড়ে। সেই গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে পথচারী শিপ্রা রানী গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে নিহত হন। গতকাল শনিবার সকাল পৌনে ১১টার দিকে খুলনা মহানগরীর দোলখোলা মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। পূজার জন্য ফুল কিনে ইসলামপুর রোডের বিলাসী গলির ১৭/১, কুণ্ডু বাড়িতে ফেরার পথে এই মর্মান্তিক ঘটনার শিকার হন শিপ্রা। শিপ্রা কুণ্ডু বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (ডিবিবিএল) খুলনা শাখার ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) চিত্ত রঞ্জন কুণ্ডুর স্ত্রী। শিপ্রা রানীর মেয়ে অবন্তী কুণ্ডু খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে স্নাতকোত্তর পাস করে বর্তমানে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবসায় প্রশাসনে এমবিএ করছেন। আর একমাত্র ছেলে অভিজিত কুণ্ডু খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। শিপ্রা রানীর বাড়ি ডুমুরিয়া উপজেলার রুদাঘরা গ্রামে। স্বামীর চাকরির কারণে তারা খুলনা শহরে বাড়ি করে বসবাস করতেন। বেঁচে যাওয়া আওয়ামী লীগ নেতা জেডএ মাহমুদ ডন খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক। হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে পিস্তলের ২ রাউন্ড গুলির খোসা এবং রক্তমাখা পলিথিনসহ বেশ কিছু আলামত জব্দ করেছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) কমিশার নিবাস চন্দ্র মাঝি বলেন, কেউ পার পাবে না। আমরা খুনিদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও আইনের মুখোমুখি করবো। গতকাল শনিবার বিকাল সাড়ে ৪টায় নগরীর দোলখোলায় ইসলামপুর রোডে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। ঘটনাস্থলসহ আশপাশে শতশত মানুষের ভিড়। অনেক আত্মীয়-স্বজন নিহতের বাড়ির সামনে এসে আহাজারি করছেন। এ সময় নিহত শিপ্রা রানীর মা অশীতিপর বৃদ্ধা দুর্গা রানী বুক চাপড়ে আর্তনাদ করে বলছিলেন, ‘আমার মেয়ের এ ক্যামন মৃত্যু হলো। সে কি অপরাধ করেছিলো। তার স্বামী-সন্তানকে কে দেখবে। ভগবান আমি এ কষ্ট কি করে সহ্য করবো।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং কেসিসির ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর জেডএ মাহমুদ ডন দোলখোলা মোড়ে একটি বৈঠক শেষে মোটরসাইকেলে পার্শ্ববর্তী নিজ বাসায় যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। ওই সময় দুইটি মোটরসাইকেলে মুখোশ পরা ৬ যুবক তাকে লক্ষ্য করে গুলি করে। এ সময় গুলি লক্ষভ্রষ্ট হয়ে তা পথচারী শিপ্রা কুণ্ডুর বুকের বাম পাশে একটি এবং বাম হাতে অপর গুলি লাগে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় জেনারেল হাসপাতাল এবং পরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে বেলা পৌনে ১২টায় তিনি মারা যান।

আওয়ামী লীগ নেতার ওপর গুলি ও হত্যাকাণ্ডের খবর পেয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য মিজানুর রহমান মিজান, র‌্যাব ৬’র পরিচালক খোন্দকার রফিকুল ইসলাম, পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) সদস্য, ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে তাত্ক্ষণিকভাবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল করেন।