দু’পক্ষ অনড় থাকায় ৭ দিনেও অপরসারণ হয়নি খাড়াগোদা বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের দেয়াল

 

আজ কোমলমতি শিশুরা দেয়াল টপকে নতুন বই নিয়ে কি ঘরে ফিরতে পারবে?

বেগমপুর প্রতিনিধি: আজ সারাদেশে একযোগে সরকারি, বেসরকারি প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও মাদরাসায় একযোগে নতুন বছরের প্রথম দিনে নতুন বই বিতরণ অনুষ্ঠিত হবে। নতুন ক্লাসের নতুন বই হাতে পেতে শিক্ষার্থীরা ইদগ্রিব রয়েছে। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং যুবলীগ নেতার সমর্থকেরা মুখোমুখি অবস্থানে থাকায় ৭ দিন অতিবিাহিত হলেও এখনও অপসারণ হয়নি খাড়াগোদা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে দেয়া দেয়াল। আজ পাঁচিল টপকে দুটি বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিশুরা কী নতুন বই নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারবে? নাকি দেয়ালে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে শূন্যহাতে বাড়ি ফিরবে তরা।

শিক্ষাখাতে বর্তমান সরকার নানামুখি কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সেসব কর্মসূচির একটি বড় অংশ বছরের প্রথম দিনে প্রথম শ্রেণি থেকে ৯ম শ্রেণির সরকারি, বেসরকারি এবং মাদরাসার শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যে নতুন বই তুলে দেয়া। সে মোতাবেক জেলা এবং উপজেলা পর্যায় থেকে প্রায় সিংহভাগ বই প্রতিষ্ঠানগুলোতে পৌঁছে গেছে। আজ একযোগে সারাদেশে বিতরণ হবে। নতুন ক্লাসের নতুন বই হাতে পাওয়ার জন্য ছেলেমেয়েরা উদগ্রিব হয়ে আছে। আজ রোববার সকালে যখন চুয়াডাঙ্গা জেলার সকল বিদ্যালয়গুলোতে বই বিতরণের কর্মসূচি পালন করবে, ঠিক তখনও সদর উপজেলার খাড়াগোদা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে দেয়া ৭ দিন আগের দেয়াল এখন পর্যন্ত অপসারিত হয়নি। কারণ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং তিতুদহ ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি রাশেদুল ইসলাম রোকন নিজেদের পক্ষে নানাযুক্তি তুলে ধরে সীমানা পাঁচিল নির্মাণ এবং প্রধান ফটকে দেয়াল দিয়েছেন।

এলাকার শিক্ষানুরাগীরা জানান, তিতুদহ ইউনিয়নের গড়াইটুপি মৌজায় ১৯৫০ সালে খাড়াগোদা প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ১৯৬১ সালে খাড়াগোদা মাধ্যমিক বিদ্যালয় নামে দুটি প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। সেই থেকে পাশাপাশি দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন স্বাভাবিকভাবে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। এবং দুটি প্রতিষ্ঠনের ছেলেমেয়েরা একটি মাঠে খেলাধুলা করে থাকে। এমন কি বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হলে উভয় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ মাঠটি নিজেদের মাঠ হিসেবে ব্যবহার করে থাকে।

গত ২৬ ডিসেম্বর মাধ্যমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিদ্যালয়ের জমি মাপজোঁক করে বিদ্যালয়ের পূর্বপাশে সীমানা পাঁচিল নির্মাণের কাজ শুরু করে। ফলে প্রাথমিক বিদলয়ের খেলার মাঠটি সংকীর্ণ হয়ে যায়। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এমন সিদ্ধান্তে এলাকার অভিভাবক মহলে দেখা দেয় মিশ্র প্রতিক্রিয়া। একপর্যায় তিতুদহ ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি রাশেদুল ইসলাম রোকন নিজ জায়গার ওপর দেয়াল নির্মাণ করলে বিদ্যালয়ের প্রধান ফটক বন্ধ হয়ে যায়। এ ফটক দিয়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা তাদের বিদ্যালয়ে যাতায়াত করে থাকে। গত ২৮ ডিসেম্বর চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক ঘটনাস্থলে গিয়ে পাঁচিল নির্মাণ নিয়ে জটিলতার বিষয়টি সমাধানের জন্য জনপ্রতিনিধি এবং বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। ঘটনার ৭ দিন অতিবাহিত হলেও উভয়পক্ষক কোনো সমাধানে আসতে না পারায় প্রধান ফটকের দেয়াল থেকেই যায়।

এলাকাবাসী আরও জানায়, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ওই পাঁচিল দেয়ার ফলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েরা, এলাকার মানুষের ঈদের নামাজ পড়তে যাওয়া, দুটি গোরস্তানে যাতায়াত করা, জানাজার নামাজ পড়া, লাশ নিয়ে যাওয়া সবকিছুতেই প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হবে। এতোগুলো সমস্যা জানা সত্ত্বেও বিদ্যালয়ের সীমানা দেয়ার অজুহাত দেখিয়ে যারা পাঁচিল নির্মাণ করছে তারা কি কাজটি ঠিক করছে? এখানে আমাদের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করে। আমাদের মতামতের কি কোনো মূল্য নেই? এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের সভাপতি আব্দুল মতিন খোকন বলেন, বিদ্যালয়ে প্রায় ৯শ ছেলেমেয়ে। কয়েকজন শিক্ষকের পক্ষে তাদেরকে দেখভাল করা সম্ভব না। বিভিন্ন অজুহাতে ছেলেমেয়েরা যেখানে সেখানে ঘুরে বেড়ায়। আবার একসাথে দুটি বিদ্যালয় ছুটি হলে নানা সমস্যা দেখা দেয়। অনেক অভিভাবকেরও দাবি বিদলয়ের সীমানা পাঁচিলের। আর বিদ্যালয় পাঁচিল থাকলে ছেলেমেয়েরা নিরাপদে থাকবে এটাই স্বাভাবিক। বহিরাগতরা এসে কোনো দুর্ঘটনা ঘটালে এর দায়ভার কে নেবে। এ ব্যাপারে রোকন বলেন, বিদ্যালয়ের সীমানা পাঁচিল আমরাও চাই। তাই বলে খেলার মাঠ নষ্ট করে পাঁচিল দেয়া এটা ঠিক না। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার জায়গায় পাঁচিল দিয়েছে আমি আমার জায়গায় পাঁচিল দিয়েছি। তারা অপরাধ না করলে আমি অপরাধী হবো কেন? ইউপি চেয়ারম্যান আকতার হোসেন বলেন, বিদ্যালয়ে সীমানা পাঁচিল হবে ভালো কথা। খেলার মাঠ নষ্ট করে পাঁচিল দেয়া এটা ভালো দেখায় না।