সেলুন ব্যবসায়ী পরেশকে জবাই করে খুন

মুজিবনগর বল্লভপুরের একটি আমবাগানে দুর্বত্তদের নৃসংশতা

 

মুজিবনগর প্রতিনিধি: মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার বল্লভপুর আমবাগানে নৃসংশতা চালিয়েছে দুর্বত্তরা। গলাকেটে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে পরেশ দাস (৪০) নামের এক সেলুন ব্যবসায়ীকে। গত শনিবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। গতকাল রোববার সকালে মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরেশ দাস বল্লভপুর গ্রামের কার্তিক দাসের জামাই। তার গ্রামের বাড়ি চুয়াডাঙ্গায়। তবে হত্যাকাণ্ডের কোনো কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত নয় পরিবার ও পুলিশ।

Mujibnagar Pic 04jpg

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রোববার সকালে স্বরস্বতী খালের ধারে বল্লভপুর গ্রামের জোকার মাঠে প্রতিদিনের ন্যায় কাজ করতে যান গ্রামের কৃষকরা। এ সময় বল্লভপুর গ্রামের তরুণ শাহের আমবাগানে একটি মরদেহ দেখতে পান। গলাকাটা মরদেহের খবরে এলাকার উৎসুক মানুষ ঘটনাস্থলে ভিড় করে। প্রায় দু ঘণ্টা ধরে নিহতের পরিচয় নিশ্চিত হতে পারেনি কেউ। পরে পরেশের পরিবারের লোকজন ঘটনাস্থলে মরদেহ দেখতে গিয়ে পরিচয় শনাক্ত করেন। পরে মুজিবনর থানা পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালমর্গে প্রেরণ করে।

পরেশ দাস ১০/১২ বছর ধরে বল্লভপুর গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে সংসার করছেন। স্ত্রী ও দু মেয়েকে নিয়েই তার সংসার। কেদারগঞ্জ বাজারে দীর্ঘদিন ধরে সুনামের সাথেই সেলুন ব্যবসা করে আসছেন। তার স্ত্রী চম্পা দাসী জানান, তিনি প্রতিদিনের ন্যায় গত শনিবার দোকানে যান। অন্যদিন সন্ধ্যার পরে বাড়িতে ফিরলেও গত শনিবার রাতে ফিরতে দেরি হয়। রাত আটটার দিকে স্ত্রীর সাথে তার সর্বশেষ কথা হয়। অল্প সময়ের মধ্যে বাড়িতে ফিরবেন বলে জানান। কিন্তু বাড়ি ফেরেননি পরেশ। স্ত্রীর মনে সন্দেহ হলে তিনি আবারো মোবাইলফোনে যোগাযোগ করেন। কিন্তু তার মোবাইলফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে তিনি বিভিন্ন স্থানে পরেশের সন্ধান করেন। শেষ পর্যন্ত তার কোনো হদিস না পেয়ে এক অজানা বিপদের আশঙ্কায় হতাশ হয়ে পড়েন।

পরেশের স্ত্রীর আরো জানান, তার সাথে কারো প্রকাশ্যে কিংবা গোপনে শত্রুতা ছিলো বলে তাদের জানা নেই। ঝামেলাহীন একজন মানুষ সবার সাথে ভালো সম্পর্ক বজায় রেখে চলতেন। তাই কি কারণে এ নৃসংশ হত্যকাণ্ড তা বুঝতে পারছেন না পরিবারের সদস্যরা। এদিকে গতকালই নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। পরে পরিবারের পক্ষ থেকে তার মরদেহ নেয়া হয় চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জ ধুতোরহাট গ্রামে। সেখানে তার সৎকার করা হবে বলে জানা গেছে।

মরদেহ উদ্ধারের পর থেকে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ধারের চেষ্টা ও হত্যকারীদের গ্রেফতারে মাঠে নেমেছে পুলিশ। তবে গতরাতে এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত পুলিশ কোনো হত্যারহস্য উদ্ধার করতে পারেনি। হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে কোনো ধারণা পাওয়া যাচ্ছে না জানিয়ে মুজিবনগর থানার ওসি রবিউল ইসলাম জানান, বিবাদ-বিরোধ কিংবা ব্যক্তিগত কোনো কারণে হত্যকাণ্ড ঘটেছে কি-না তা নিশ্চিত হতে তদন্ত চলছে।

নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকেই গতরাত পর্যন্ত কাউকে দোষারোপ কিংবা সন্দেহ করা হয়নি। নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে গতকালই মুজিবনগর থানায় একটি হত্যামামলা দায়ের করেছেন। তবে আসামি করা হয়েছে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তদের।

নিহতের পারিবারিক পরিচয়: চুয়াডাঙ্গা ও মুজিবনগর এলাকায় পরেশকে ভালো মানুষ হিসেবেই জানেন তার আত্মীয়স্বজন ও পরিচিতজনরা। ব্যবসায়িক স্বার্থে সে সবার সাথে তাল মিলিয়ে চলতো। তার বিষয়ে কোনো অপ্রীতিকর কিছু কখনো চোখে পড়েনি বলে মন্তব্য করেছেন তার পরিচিতজনরা। দীর্ঘদিন ধরে কেদারগঞ্জ বাজারে একজন ভালো মানুষ হিসেবে ব্যবসা করছেন। পারিবারিক জীবনে তিনি দু কন্যা সন্তানের জনক। তার বড় মেয়ে নুপুর (৭) ও ছোট মেয়ে ঝুমুর (৪)। পরিবারে পরেশের অনুপস্থিতি যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে স্ত্রী ও দু মেয়ের মাথায়। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তিকে হারিয়ে স্ত্রী যেমন বাকরুদ্ধ তেমনি দু কন্যা ও পরিবারের অন্য সদস্যরা পড়েছেন অথই সাগরে। হত্যাকাণ্ডের কারণ উদঘাটন ও খুনিদের দ্রুত গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন পরিবার ও পরেশের পরিচিতজনরা।