সাত লাখ ইয়াবাসহ এএসআই আটক

 

সংবাদ সম্মেলন ডেকেও বাতিল করলো র্যাব

স্টাফ রিপোর্টার: এবার পুলিশ কর্মকর্তার গাড়িতে পাওয়া গেলো ইয়াবার বিশাল চালান। গত শনিবার রাতে ফেনীর লালপোল এলাকায় একটি কালো রঙের এলিয়েন প্রাইভেট কার (ঢাকা মেট্রো-গ-১৭-৭১৮১) থেকে প্রায় সাত লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে ৱ্যাব-৭ এর একটি টিম। এ সময় গাড়িতে ছিলেন পুলিশের বিশেষ শাখার (টেকনিক্যাল) এএসআই মো. মাহফুজুর রহমান (৩৫) ও গাড়িচালক মো. জাবেদ আলী (২৯)। তাদের আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে গাড়িটি তল্লাশি করে পলিথিনের প্যাকেটে মোড়ানো অবস্থায় বিপুল পরিমাণ ইয়াবা ছাড়াও মাদক বিক্রির নগদ ৭ লাখ টাকা, চারটি মোবাইলফোন, বিভিন্ন ব্যাংকের ৮টি ক্রেডিট কার্ড এবং মাদকের টাকার হিসাব লেখা তিনটি নোটবুক উদ্ধার করা হয়।

ৱ্যাব জানায়, রাত সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে একটি ছোট ছেলেকে চাপা দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় ধাওয়া করে প্রাইভেট কারটি আটক করা হয়। গাড়ি থেকে উদ্ধার করা নোটবুকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জনের সাথে ইয়াবা কেনাবেচা সংক্রান্ত বিষয়ে ২৮ কোটি ৪৪ লাখ ১৩ হাজার টাকার হিসাব পাওয়া গেছে। ৱ্যাব থেকে সরবরাহকৃত ওই তালিকায় দেখা যায়, মাহফুজ বিভিন্ন সময়ে মোট ১৪ জনের সাথে এ টাকা লেনদেন করেছেন। এরা হলেন তোফাজ্জল হোসেন, কাশেম, আজাদ, মামা গিয়াস, গিয়াস, গোবিন্দ দাদা, সেলিম, শাহিন, অ্যাডভোকেট জাকির, বিল্লাল, হাইকোর্টের মুহুরি মোতালেব, এসআই আমিরের বন্ধু, মামা হান্নান ও এসআই আশিক (চট্টগ্রাম)।

ৱ্যাব দাবি করেছে, এই চালান আটকের মধ্যদিয়ে নিষিদ্ধ মাদক ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িত পুলিশ, আইনজীবী ও হাইকোর্টের মুহুরিদের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেটের সন্ধান পাওয়া গেছে। ৱ্যাব-৭’র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) মো. সোহেল মাহমুদ স্বাক্ষরিত এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, মো. মাহফুজুর রহমান বাংলাদেশ পুলিশের একজন এএসআই। তিনি বর্তমানে এসবি, ঢাকা টেকনিক্যাল সেকশনে কর্মরত (বিপি নং ৮০০১০৬৩১১৯, এসবি আইডি নং-৭৭৮৫)। জিজ্ঞাসাবাদে মাহফুজ জানিয়েছেন, তিনি ২০১১ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত কক্সবাজারের টেকনাফ থানায় চাকরি করতেন। এ সময় বিভিন্ন ইয়াবা ব্যবসায়ীর সাথে তার সখ্য গড়ে ওঠে। তার কাছ থেকে উদ্ধারকৃত ইয়াবার চালানের বিষয়ে মাহফুজুর রহমান জানান, কক্সবাজার জেলা ডিবি পুলিশের এএসআই মো. বেলাল এবং চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের কুমিরা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মো. আশিক তাকে ইয়াবাগুলো ঢাকায় পৌঁছে দেয়ার জন্য বলেছেন। ঢাকায় হাইকোর্টের জনৈক মুহুরি মো. মোতালেব, অ্যাডভোকেট জাকির এবং শাহীন, কাশেম ও গিয়াস নামে এসবির তিনজন কনস্টেবলের কাছে এসব ইয়াবা বুঝিয়ে দেয়ার কথা ছিলো।

এদিকে পুলিশ সদস্য আটক ও ইয়াবা উদ্ধার বিষয়ে সাংবাদিকদের অবহিত করতে গতকাল রোববার নগরীর পতেঙ্গাস্থ ৱ্যাব-৭ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়। এজন্য ৱ্যাবের তিনটি গাড়িতে সাংবাদিকদের ৱ্যাব কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে শেষ মুহূর্তে সংবাদ সম্মেলন বাতিল করা হয়। আটক ব্যক্তিদের মিডিয়ার সামনেও উপস্থিত করা হয়নি। ৱ্যাব কর্মকর্তারা সংবাদ সম্মেলন বাতিলের কোনো ব্যাখ্যাও দেননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি না পাওয়ায় সংবাদ সম্মেলন বাতিল করা হয়েছে।

ৱ্যাব-৭ এর সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) মো. সোহেল মাহমুদ জানান, ইয়াবা ব্যবসায়ী এ সিন্ডিকেটের বিষয়ে আমাদের কাছে বিস্তারিত তথ্য রয়েছে। তবে সবকিছু এখন আপনাদের বলা যাচ্ছে না। পরে জানতে পারবেন। তিনি জব্দকৃত ইয়াবা ও আটক ব্যক্তিদের ফেনী থানায় হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান। মাহফুজ তার ইয়াবা সিন্ডিকেটের সাথে আরো যাদের নাম উল্লেখ করেছে তারা আসলেই জড়িত কি-না সে ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তাদেরকেও মামলার আসামি করা হবে বলে তিনি জানান।

যেভাবে উত্থান মাহফুজের: ৱ্যাবের বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, মাহফুজুর রহমান কুমিল্লা জেলার ব্রাহ্মণপাড়া থানার মিরপুর গ্রামের জামশেদ মিয়ার ছেলে। পুলিশের একজন এএসআই হিসেবে তার বেতন বড়জোর ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। কিন্তু বেতনের সাথে তার জীবনযাত্রার কোনো মিল নেই। তিনি অত্যন্ত বিলাসী জীবন যাপনকরেন। ঢাকার দনিয়ায় তার দোতলা বিলাসবহুল বাড়ি, দোকানপাট ও মার্কেট রয়েছে। এছাড়া জেএন ইন্টারন্যাশনাল নামে তার একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। আটক এলিয়েন গাড়িটি মাহফুজের নিজের হলেও কাগজপত্র তার বাবার নামে। তার বাবা জামশেদ মিয়া ছোটখাটো একজন ব্যবসায়ী। মাহফুজ তার অনেক সম্পত্তি বাবার সম্পত্তি বলে চালিয়ে দেন। এজন্য তিনি আয়কর বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো ম্যানেজ করে রেখেছেন।

জানা গেছে, মাহফুজ অনেক চেষ্টা তদবির করে ২০১১ সালে টেকনাফ থানায় পোস্টিং নেন। তারপর স্বল্পতম সময়ের মধ্যে গড়ে তোলেন শক্তিশালী ইয়াবা সিন্ডিকেট। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পর্যন্ত মহাসড়কের বিভিন্ন থানা, পুলিশ ফাঁড়িসহ প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে মাহফুজের লোক রয়েছে। রাজনৈতিক মহলেও তার যোগাযোগ রয়েছে। নিয়মিত ঘাটে ঘাটে বখরা দিয়েই মাহফুজ তার শক্তিশালী ইয়াবা সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। মিয়ানমার সীমান্ত থেকে প্রতি পিস ইয়াবা ৫০ টাকায় কিনে ঢাকায় তা ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি করা হয়। এভাবে নিষিদ্ধ ব্যবসার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন মাহফুজ। প্রসঙ্গত, আটক গাড়িচালক জাবেদের বাড়ি ব্রাক্ষণবাড়িয়ার সদর উপজেলায়। তবে তার ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি।