সম্মিলিত ইসলামি দলের আহ্বানে রোববার সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল

চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর ও ঝিনাইদহে ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ

 

স্টাফ রিপোর্টার: পবিত্র হজ, মহানবী (সা.) এবং তাবলিগ জামাত নিয়ে কটূক্তি করায় সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেফতার ও শাস্তি দাবিতে রোববার সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে সম্মিলিত ইসলামী দলসমূহ। জাতীয় প্রেসক্লাবে বুধবার সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন সংগঠনটির সদস্য সচিব মাওলানা জাফরুল্লাহ খান। তিনি বলেন, লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেফতারের জন্য সরকারকে দু দফা আলটিমেটাম দেয়া হয়। শেষ দফা ২২ অক্টোবরের মধ্যেও সরকার তাকে গ্রেফতার করতে ব্যর্থ হয়েছে। ওই আলটিমেটামেই ২৬ অক্টোবর হরতাল পালনের হুঁশিয়ারি জানানো হয়েছিলো। সে অনুযায়ী তারা রোববার সকাল-সন্ধ্যা সর্বাত্মকভাবে এ কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এদিকে ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন গতকাল চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর ও ঝিনাইদহে একই দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেছে। মেহেরপুরে বিক্ষোভ পুলিশি বাধার মুখে পড়ে।

ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ মসজিদ মিশনের সেক্রেটারি ড. খলিলুর রহমান মাদানী বলেন, হরতাল থেকে সরে আসার কোনো সুযোগ নেই। আমরা আশা করছি, সরকার আমাদের দাবি মেনে নেবে। সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টির চেয়ারম্যান আবদুল মবিন, মুসলিম লীগ একাংশের নেতা কাজী আবুল খায়ের, খেলাফত যুব আন্দোলনের সভাপতি মাওলানা কামরুল ইসলামসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

নিউইয়র্কে ২৯ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইল জেলা সমিতির অনুষ্ঠানে আবদুল লতিফ সিদ্দিকী পবিত্র হজ, মহানবী (সা.), তাবলিগ জামাত ও প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে নিয়ে কটূক্তি করেন। এ নিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে সম্প্রতি সরকার তাকে মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণ করে। তার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন জেলায় দু ডজনের বেশি মামলা হয়। এর বেশ কয়েকটিতে লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। লতিফ সিদ্দিকী বর্তমানে কোলকাতায় অবস্থান করছেন।

পবিত্র হজ, মহানবী (স.), তাবলিগ জামাআত, গণমাধ্যম ও জাতির বিবেক সাংবাদিকদের সম্পর্কে অশালীন মন্তব্য করার প্রতিবাদে এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার নেতৃবৃন্দ। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে চুয়াডাঙ্গা শহীদ হাসান চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদিক্ষণ শেষে পুনরায় শহীদ হাসান চত্বরে এসে শেষ হয়। পরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- সংগঠনের চুয়াডাঙ্গা জেলা সভাপতি প্রভাষক মাও. মু. আবুল হাসান, সাধারণ সম্পাদক ডা. জিনারুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক মু. ইমরান সরকার, অর্থবিষয়ক সম্পাদক মাও. সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, অতীতে এদেশে দাউদ হায়দার, তাসলিমা নাসরিন, ড. আহমদ শরীফ ও আজগর আলীসহ অনেকে ধর্মকে কটাক্ষ করেছে। তারা কেউ জনপ্রতিনিধি ছিলেন না। এদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলো। এক শ্রেণির নাস্তিক ও ধর্মবিরোধী শক্তি পক্ষ নিয়েছিলো। আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী একজন জনপ্রতিনিধি হয়েও তার পক্ষে আজ কেউ নেই। কারণ তিনি শুধু ইসলামের বিরুদ্ধেই কথা বলেননি, তিনি প্রবাসীদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেছেন। সাংবাদিকদেরও কটাক্ষ করেছেন। দেশের গুণীজনকে অশ্লীল ভাষায় অপদস্থ করেছেন। রাসূলুল্লাহর (স.) প্রতি মিথ্যা অপবাদ দেয়ার কারণে এবং ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ হজ নিয়ে যে কটাক্ষ করেছেন আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী তাতে তিনি মুরতাদ তথা ধর্মত্যাগী হয়ে গেছেন। আর ইসলামে মুরতাদের শাস্তি হলো মৃত্যুদণ্ড। আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী দেশে ফিরে এলে তার মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানানো হয়। বক্তারা আরো বলেন, তিনি যদি দেশে ফিরে না আসেন তাহলে তার নাগরিকত্ব বাতিল করতে হবে। এ ধর্ম অবমাননাকারীকে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানানো হয়।

মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মেহেরপুর জেলা শাখার উদ্যোগে গতকাল বুধবার বিকেলে শহরের হোটেল বাজার জামে মসজিদ প্রাঙ্গণ থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি শহরের হোটেল বাজার প্রদক্ষিণ করার সময় পুলিশি বাধার মুখে তা পণ্ড হয়ে যায়। এ সময় মিছিলকারীরা হোটেল বাজার জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- জেলা ইসলামী আন্দোলনের সভাপতি মাও. আব্দুল কাদের, সাধারণ সম্পাদক মুফতি আবুল কালাম কাছেমী প্রমুখ। এসআই শাহাবুল ইসলাম জানান, বিশৃঙ্খলা ও নাশকতার আশঙ্কায় মিছিলটি বন্ধ করে দেয়া হয়।