সকল অনিয়মই যেখানে নিয়ম : আলমডাঙ্গা সাব-রেজিস্টার আব্দুর রব ও সরকারি মহুরার দুলালের দুর্নীতি থেমে নেই

 

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: থেমে নেই আলমডাঙ্গা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দুর্নীতির দুরন্ত ঘোড়া। সব অনিয়মই আইনসিদ্ধ হয় টাকায়। দাখিলা-পর্চা না থাকলেও কোনো সমস্যা নেই। দাখিলা ও পর্চাবিহীন রেজিস্ট্রির ক্ষেত্রে দলিল প্রতি ১ হাজার করে ২ হাজার করে টাকা গুনে নেয়া হচ্ছে। এছাড়া জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার ব্যবস্থা ও জাল দলিলের জন্য মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। আলমডাঙ্গা রেজিস্ট্রি অফিসের এ সকল অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করার নায়ক হলেন সাব-রেজিস্ট্রার আব্দুর রব। সরকারি মহুরার পদে সদ্য যোগদানকারী দুলালই হচ্ছেন  সাব-রেজিস্ট্রারের যাবতীয় দুর্নীতির প্রধান সিপাহসালার। এরকমই অভিযোগ এখন সর্বত্র ছড়িয়েছে।

অভিযোগকারীসূত্রে জানা যায়, গতকাল মঙ্গলবার আলমডাঙ্গা শহরের গোবিন্দপুরের নজরুল ইসলাম পৌর শহরের গোবিন্দপুর মৌজার প্রায় সাড়ে ১৫ শতক ধানি জমি বিক্রি করেন। এ জমির দাগ নং-১৭৫০। এ জমির রেজিস্ট্রিকৃত দলিল নং-১৪২৯। ধানি জমির শ্রেণিভূক্ত হওয়ায় তার সরকার নির্ধারিত বাজারমূল্য দাড়ায় ৯ লাখ ৬২ হাজার ২৪৫ টাকা। অথচ অবৈধভাবে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে দলিলে মূল্য দেখানো হয়েছে অর্ধেকেরও কম মাত্র ৪ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। মাত্র এই একটি অবৈধ দলিল থেকে সরকার রাজস্ব হারালো প্রায় ৬০ হাজার টাকা। অভিযোগ উঠেছে অবৈধভাবে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ওই দলিল রেজিস্ট্রি করে দিয়ে আলমডাঙ্গা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সদ্য যোগদানকারী সরকারি মহুরার দুলাল ও দলিল লেখক কুরবান আলী ৪০ হাজার টাকা ভাগাভাগি করেছে। গতকাল দুপুর ১টা পর্যন্ত সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে পৌঁছেননি। সাব-রেজিস্ট্রারের পৌঁছানোর আগেই তারা এ মোটা অঙ্কের টাকা ভাগাভাগি করেন।

গত বুধবার ১৮ ফেব্রুয়ারি দাখিলা ও পর্চাবিহীন হরদম জমির দলিল রেজিস্ট্রি করা হয়েছে বলে পৃথক আরেকটি সূত্র অভিযোগ করেছে। ওই দিন বড় গাংনীর মমতাজ খাতুনের জমি দাখিলা ও পর্চা ছাড়াই ৩ হাজার ৫শ টাকার বিনিময়ে রেজিস্ট্রির অভিযোগ উঠেছে (দলিল নং-১৪০০)। বাঁশবাড়িয়ার বিলকিস বেগমের জমিও একইভাবে দাখিলা ও পর্চাবিহীন রেজিস্ট্রির অভিযোগ উঠেছে। ওই রেজিস্ট্রিকৃত দলিল নং-১৩৯৯। সূত্র জানিয়েছে, প্রতিদিন গড়ে ১৪০টি করে দলিল রেজিস্ট্রি হলে তার মধ্যে হয়তো ২০টি দলিল সঠিকভাবে রেজিস্ট্রি করা হয়। এভাবে  প্রতিদিন আলমডাঙ্গা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দুর্নীতির মাধ্যমে প্রায় অর্ধ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেয়া হচ্ছে। আর কাড়ি কাড়ি অবৈধ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে মাত্র দুজন ব্যক্তি সাবরেজিস্ট্রার আব্দুর রব ও সরকারি মহুরার দুলাল।

একাধিকসূত্র জানিয়েছে, আলমডাঙ্গা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের বর্তমান সাব-রেজিস্ট্রার আব্দুর রব জমি রেজিস্ট্রির ক্ষেত্রে হায়ার ভ্যালু নামে নতুন করে ঘুষের প্রচলন করেছেন। জমির মূল্যের প্রতি লাখের বিপরীতে তিনি স্ব আবিস্কৃত হায়ার ভ্যালু নেন ৪শ টাকা হারে। এতে শুধু জমি ক্রেতা-বিক্রেতাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন না। সেই সাথে সরকারও হারাচ্ছে রাজস্ব। হায়ার ভ্যালু দেয়ার ভয়ে ক্রেতা-বিক্রেতারা জমির প্রকৃত মূল্য গোপন করে অনেক কম মূল্য দেখিয়ে দলিল করছেন। ফলে সরকার ন্যায্য রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আইনগতভাবে দলিলে টিপসই দিতে কোনো টাকা নেয়ার বিধান না থাকলেও কখনও কখনও ১০ টাকা আবার কখনও ২০ টাকা করে গ্রহণের প্রচলন ইতোপূর্বে ছিলো। কিন্তু আব্দুর রব সাব-রেজিস্ট্রার হিসেবে যোগদান করার পর টিপসই বাবদ নজরানা এক লাফে ৩ গুন বৃদ্ধি করা হয়েছে। বর্তমানে ৬০ টাকা হিসেবে আদায় করা হচ্ছে। দেদারছে খারিজবিহীন জমি রেজিস্ট্রি করা হচ্ছে। প্রতিদিন ১২০টির মধ্যে ৩০-৩৫ ভাগই খারিজবিহীন বলে দাবি করেছেন একাধিক ডিড রাইটার। খারিজবিহীন দলিল প্রতি সাব রেজিস্ট্রার ২ হাজার ৮শ করে টাকা করে নেন। তবে এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় তিনি সতর্ক হয়েছেন।