লোভনীয় লভ্যাংশ দুরস্ত আসল টাকাও হাতছাড়া হওয়ার শঙ্কায় অসংখ্য লগ্নিকারীর ঘুম হারাম

এহসান ইসলামী মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি এহসান রিয়েল স্টেট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের লগ্নিকারীদের যশোরে সংবাদ সম্মেলন

 

স্টাফ রিপোর্টার: যশোরে এহসান ইসলামী মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি এবং এহসান রিয়েল স্টেট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডে আড়াই হাজার কোটি টাকা লগ্নি করে দশ হাজার গ্রাহক এখন নিঃস্ব হওয়ার পথে। লোভনীয় লভ্যাংশ দেয়ার কথা থাকলেও লভ্যাংশ দূরে থাক, আসল টাকাও হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কায় এসব গ্রাহকের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। অভিযোগ পাওয়া গেছে গ্রাহকদের লভ্যাংশ ও লগ্নিকৃত টাকা ফেরত দিতে সংস্থার কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে টালবাহানা করছেন। গাঢাকা দিয়েছেন অনেক কর্মকর্তা। এ অবস্থায় মুনাফা নয় বিনিয়োগের টাকা ফেরত পেতে উদগ্রিব হয়ে পড়েছেন ভুক্তভোগী গ্রাহকরা।

টাকা লোপাটের আশঙ্কা নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সংস্থার ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকরা যশোর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয় কোম্পানির সহসভাপতি ইউনুছ আহমেদ, এমডি জুনায়েদ আলী, রবিউল ইসলাম, ম্যানেজার আতাউল্লাহ, জোনাল ম্যানেজার খবিরুজ্জামান প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

লিখিত বক্তব্যে শহরের বারান্দীপাড়ার বাসিন্দা মফিজুল ইসলাম ইমন জানান, কয়েক বছর আগে যশোর শহরের চৌরাস্তা মোড়ে অফিস খুলে এহসান ইসলামী মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি এবং এহসান রিয়েল স্টেট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড মাসে এক লাখে ১৬শ টাকা মুনাফার প্রতিশ্রুতি দিয়ে টাকা জমা নিতে থাকে। এ প্রলোভনে প্রায় ১০ হাজার গ্রাহক ২ হাজার ৫শ কোটি টাকা জমা দেন। সংস্থাটি প্রথম কয়েক মাস লভ্যাংশের টাকা দিলেও পরবর্তীতে না দিয়ে সেই টাকায় শহর ও শহরতলীর বিভিন্নস্থানে স্থাবর সম্পত্তি ক্রয় করে। এ অবস্থায় গ্রাহকরা টাকা পেতে জোর চেষ্টা করলে তাদের হুমকি দেয়া হয়।

ইমন বলেন, প্রত্যেক এলাকার মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে ধর্মের কথা বলে টাকা সংগ্রহ করে সংস্থাটি। সাধারণ মানুষ সরল বিশ্বাসে টাকা তাদের কাছে দেয়। অথচ তারা প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী লভ্যাংশ ও বিনিয়োগের টাকা ফেরত দিচ্ছে না। তিনি জানান, তার পিতা রবিউল হোসেন ও চাচা ওসমান গাজীকে প্রলোভন দেখিয়ে মাল্টিপারপাস সোসাইটির সহসভাপতি ইউনুছ আহমেদ দেড় বছর আগে ১৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা নিয়েছেন। তার পিতার অসুস্থতার জন্য টাকা তুলতে গেলে তারা টালবাহানা শুরু করে। শুধু তাই নয়, তাদের হুমকিও দেয়া হচ্ছে। এ ঘটনায় গত ৩০ সেপ্টেম্বর এহসান মাল্টিপারপাস সোসাইটির বিরুদ্ধে একটি মামলাও করেছেন তিনি।

হামিদপুর এলাকার কামরুজ্জামান জানান, তিনি তিন লাখ টাকা জমা দিয়েছেন। তার মতো পুরাতন কসবা মিশনপাড়ার আফসার উদ্দিন ৪৫ হাজার, সীতারামপুরের আবুল কালাম ৮ লাখ টাকা, বালিয়া ভেকুটিয়া এলাকার মোহাম্মদ হানিফ ২ লাখ টাকা, বারান্দীপাড়ার আমিনুন্নেছা ৪ লাখ ২৫ হাজার, রাজারহাট এলাকার শাহাজাদী বেগম ৩ লাখ টাকা, বারান্দীপাড়ার আলেয়া বেগম ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা, পূর্ববারান্দী মাঠপাড়ার নাছিমা খাতুন ৩ লাখ টাকা, একই এলাকার রায়হানুল ইসলাম ৫০ হাজার টাকা, নাজির শঙ্করপুর এলাকার তরিকুল ইসলাম ১ লাখ ১৩ হাজার টাকা জমা রাখেন।

বারান্দীপাড়ার বাসিন্দা কুলসুম বেগম অভিযোগ করেন, ১ লাখ টাকায় মাসে ১৬শ টাকা মুনাফা দেয়ার কথা। প্রথম কয়েক মাস দেয়ার পর কোম্পানির লোকজন টাকা দেয় না। চাইতে গেলে টালবাহানা করে। জমি বিক্রি করে টাকা দিয়ে এখন পথে বসেছি। তিনি অভিযোগ করেন, সংস্থার কর্মকর্তারা গ্রাহকের টাকায় ৭০-৮০ হাজার টাকা দরে প্রতি কাঠা জমি ক্রয় করেন। এখন সেই জমি ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা দরে গ্রাহকদের গছিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে। এতে আপত্তি করলে অফিস থেকে জানানো হয় বেশি বাড়াবাড়ি করলে টাকা-জমি কোনটাই দেয়া হবে না।

রূপদিয়া এলাকার শের আলীর গাজীর মেয়ে শারমিন বলেন, তার পিতা জমিজমা বিক্রি করে ৮ লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়েছেন। এখন লাভ ও লগ্নিকৃত টাকার কোনটিই পাচ্ছে না। তারা অসহায় জীবনযাপন করছেন। বারান্দীপাড়া এলাকার আমিরুল নেছা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, তার স্বামী ৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা জমা দিয়েছিলেন। কয়েক মাস আগে তার স্বামী মারা গেছেন। সেই টাকা তুলতে গেলে তাকে টাকা দেয়া হচ্ছে না।