যুদ্ধবিরতি শেষে আবারো ইসরাইলি হামলা

মাথাভাঙ্গা মনিটর: সাময়িকযুদ্ধবিরতি শেষে আবারো গাজায় আগ্রাসন শুরু করেছে ইসরাইল। তিনদিনেরযুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার সাথে সাথেই গতকাল সকালে গাজা লক্ষ্য করে ইসরাইলিট্যাংকের গোলা বর্ষণ শুরু হয়। এবার আকাশ, জল এবং স্থলপথে হামলা শুরু করেছেইসরাইলি সেনারা। হামাসের ছোড়া রকেটের পাল্টা জবাব দেয়া হচ্ছে বলে দাবিইসরাইলের। নতুন করে এই হামলায় দশ বছরের এক বালক নিহত হয়েছে। গাজার একটিমসজিদের পাশে ইসরাইলি গোলার আঘাতে সে মারা যায়।

এদিকেগাজায় চলমান ইসরাইলি হামলার এক মাস পূর্ণ হয়েছে গতকাল। যদিও এর মধ্যেতিনদিন ও কয়েক ঘণ্টার জন্য যুদ্ধবিরতি স্থায়ী হয়েছিলো। জাতিসংঘের অফিস ফরদ্য কো-অর্ডিনেশন অব হিউম্যানিটেরিয়ান এফেয়ার্স (ওসিএইচএ) এর বরাত দিয়েবিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৬ আগস্ট পর্যন্ত ফিলিস্তিনে ১৮৯০ জন মারাগেছেন। ওসিএইচএ সূত্র ব্যবহার করে প্রকাশিত এক তালিকায় দেখা যায়, নিহতদেরমধ্যে বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক যাদের মধ্যে ৪১৪ জন শিশু ও ২১৯ জন নারীরয়েছেন। শিশুদের মধ্যে ১১৫ জনেরই বয়স পাঁচ বছরের কম।

যুদ্ধ বিরতিরপর গাজায় ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দেশটির সেনাবাহিনীকেগাজায় জোরালোহামলা চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের বিষয়টি ইসরাইলের এক সরকারি কর্মকর্তা নিশ্চিতকরেছেন। গতকাল ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা রকেট হামলা চালিয়েছে অভিযোগ করেনেতানিয়াহু এ নির্দেশ দিয়েছেন। ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, শুক্রবারসকালে গাজা থেকে ইসরাইলকে লক্ষ্য করে ৩৫টি রকেট ছোড়া হয়েছে। আয়রন ডোমনামে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তিনটি রকেট আকাশে ধ্বংস করেছে।অন্যগুলো খোলা জায়গায় পড়েছে। অপরদিকে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর খবরেবলা হয়, ইসরাইলি সেনারা যুদ্ধ বিমান, গানবোট এবং ট্যাংক দিয়ে গাজায় হামলাশুরু করে। তবে কোনো ইসরাইলি সেনা এখনো ফিলিস্তিনি অধিকৃত এলাকায় প্রবেশকরেনি।

ফিলিস্তিনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রেজানা গেছে, গাজার উত্তরে জাবালিয়া এলাকা, গাজা শহর ও ফিলিস্তিনি ছিটমহলেরকেন্দ্রস্থলে আজ ইসরায়েলের যুদ্ধবিমান আঘাত হেনেছে। এ ছাড়া গাজার পূর্ব ওউত্তরাঞ্চলে কামানের গোলা ছোঁড়া হয়েছে। গতকালের হামলায় গাজার একটিমসজিদের পাশে ইসরাইলি গোলার আঘাতে এক বালক মারা গছে বলে বিবিসি জানায়।হামলায় আরো ছয় ফিলিস্তিনি আহত হয়েছে।

মিসরের মধ্যস্থতায় দু পক্ষগত মঙ্গলবার থেকে ৭২ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতিতে রাজি হলেও এর মেয়াদ বাড়ারসম্ভাবনা নিয়ে সন্দেহ ছিলো। ইসরাইল গাজায়যুদ্ধবিরতি বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিলো। তবে হামাস যুদ্ধবিরতির সময় বাড়াতেঅস্বীকার করেছে। তাদের দাবি, গাজার ওপর সাঁড়াশি অবরোধ এবং বন্দি মুক্তিরমতো গুরুত্বপূর্ণ দাবিগুলো পূরণে ইসরাইল ব্যর্থ হয়েছে। গাজাকে পুরোপুরিঅস্ত্রমুক্ত করার ইসরাইলের প্রস্তাবকেও প্রত্যাখ্যান করেছে হামাস। মিসরেরমধ্যস্থতায় ইসরাইল ও হামাসের মধ্যকার আলোচনায় অচলাবস্থার মধ্যেই পুনরায় এইহামলা শুরু হয়। অন্যদিকে যুদ্ধবিরতির সময় বাড়ানোর জন্য মিসরের মধ্যস্থতায়যে আলোচনা চলছিল তা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে ইসরাইল। যুদ্ধ বিরতি শেষে দুপক্ষ বিজয় দাবি করেছে বলে আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গাজা নিয়ন্ত্রণকারী হামাসের ছোঁড়া রকেট হামলার পরিপ্রেক্ষিতে আত্মরক্ষারঅজুহাতে ইসরাইল গত ৮ জুলাই তাদের অভিযান শুরু করে। অভিযানে গাজার সুড়ঙ্গব্যবস্থাও ধ্বংস করা হয়েছে। ইসরাইলের দাবি এসব সুড়ঙ্গ দিয়েই হামাসেরযোদ্ধারা ইসরায়েলের অভ্যন্তরে এসে হামলা চালাতো।

এক মাসে ৪১৪ শিশু ও ২১৯ ফিলিস্তিনি নারী নিহত:গাজায়ইসরাইলি হামলায় এখন পর্যন্ত ১৮৯০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে যাদের বেশিরভাগইবেসামরিক নাগরিক। ইসরাইলি হামলা থেকে রেহাই পায়নি নারী, শিশু ও বৃদ্ধরাও।ওসিএইচএ’র সূত্র ব্যবহার করে বিবিসিতে প্রকাশিত এক তালিকায় দেখা যায়, ইসরাইলি হামলায় ১০৩০ জন ফিলিস্তিনি পুরুষ প্রাণ হারিয়েছে। যাদের ৬১৭ জনইবেসামরিক ব্যক্তি। নিহত ৫০ জনের বয়স ষাটের ঊর্ধ্বে। ফিলিস্তিনি যোদ্ধামারা গেছে ১৬৬ জন। আর ১৯৩ জন বেসামরিক নাকি যোদ্ধা তা নিশ্চিত করা যায়নি।ইসরাইলিহামলায় ২১৯ নারীর মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ২১৮ জন বেসামরিক ৩৭ জনের বয়সষাটের ঊর্ধ্বে। একজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ইসরাইলি হামলায়ব্যাপকহারে শিশুরা প্রাণ হারিয়েছে। নিহত ৪১৪ জনের মধ্যে ছেলে শিশু হলো ২৫৩জন যাদের মধ্যে ৫৭ জনের বয়স পাঁচ বছরের কম। এদের মধ্যে দুজন শিশু যোদ্ধাছিলো বলে জানানো হয়েছে। আর কন্যাশিশু নিহত হয়েছে ১৬১ জন যাদের মধ্যে ৫৮জনের বয়স পাঁচ বছরের কম। অন্যদিকে হামাসের সাথে লড়াইয়ে ৬৬জন ইসরাইলি প্রাণহারিয়েছে। যাদের মধ্যে ২ জন বেসামরিক ও ৬৪ জন সেনা। এছাড়া একজন থাইনাগরিকও নিহত হয়েছেন। ওসিএইচএ’র তালিকায় দেখা যায়, নিহত ১৬৬৩ জনফিলিস্তিনির তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। বাকি নিহত প্রায় ২২৭ জনের তথ্য উল্লেখকরতে পারেনি তারা।