মুজিবনগরের সোনাপুর সীমান্তে বিএসএফ’র গুলিতে বাংলাদেশি নিহত

 

 

মাজেদুল হক মানিক/শেখ শফি: আব্দুল খালেক (৩২) নামের এক ব্যক্তিকে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সদস্যের গুলিতে বাংলাদেশি এক নাগরিক নিহত হয়েছেন। গতরাত সাড়ে ৯টার দিকে মেহেরপুর মুজিবনগর উপজেলার সোনাপুর সীমান্তে ওই বর্বরতা চলায় ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীরা। আব্দুল খালেক সোনাপুর গ্রামের দুলু মল্লিকের ছেলে। তিনি গরু ব্যবসায়ীদের শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সোনাপুর গ্রামের কয়েকজনের সাথে গতরাতে সীমান্তের ১০৬-১০৭ আন্তর্জাতিক সীমানা পিলারের মাঝামাঝি যান আব্দুল খালেক। ৫টি গরু কিনে গ্রামের দিকে আসার পথে বিএসএফ তাদের তাড়া করে। বাংলাদেশ সীমানায় প্রবেশ করে গুলিবর্ষণ করে বিএসএফ। গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন আব্দুল খালেক। সঙ্গীরা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে মুজিবনগরের একটি ক্লিনিকে নিয়ে যান। পরে মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘুরে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে আনা হয়। এসময় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। রাতেই লাশ নেয়া হয় বাড়িতে। পরে মুজিবনগর থানা পুলিশ লাশ থানা হেফাজতে নেয়। নিহতের পরিবারে শুরু হয় শোকের মাতম।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সোনাপুর গ্রামের কয়েকজন চিহ্নিত ব্যক্তি ভারতীয় গরু ব্যবসার সাথে জড়িত। বিজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ে তারা প্রায় প্রতি রাতে ভারত থেকে গুরু কিনে আনে। রাতের আধারেই গরুগুলো দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রেরণ করা হয়। সীমান্ত থেকে গরু আনা এবং বিভিন্ন স্থানে সরবরাহের সাথে জড়িত বেশ কিছু শ্রমিক। দরিদ্র প্রকৃতির মানুষকে অর্থের প্রলোভনে ঝুঁকিপূর্ণ ওইকাজে নিয়োজিত করেছেন গরু ব্যবসায়ীরা। আব্দুল খালেক ছিলেন তেমনই এক শ্রমিক। অভাবের সংসারে বাধ্য হয়েই তিনি ওই কাজে জড়িয়ে পড়েন। সীমান্ত থেকে একবার গরু আনলে তিনি পেতেন চারশ’ টাকা। ওই টাকা দিয়ে চলতো তার সংসার। গরু ব্যবসায়ীদের প্রতি ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়ে এলাকার লোকজন আরো জানান, পেটের দায়ে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে গিয়ে লাশ হলো আব্দুল খালেক। তার পরিবার এখন অসহায়। এই দায় কে নেবে?

এদিকে নিহতের লাশের ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে মুজিবনগর থানা সূত্রে জানা গেছে। বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছে বিএসএফ’র সাথে পতাকা বৈঠকের লক্ষ্যে পত্র প্রদানের প্রক্রিয়া চলছে।

সোনাপুর গ্রামের মাঝপাড়ার দুলু মল্লিকের দু ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে নিহত আব্দুল খালেক বড়। পারিবারিক জীবনে তিনি দু ছেলে মেয়ের জনক। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তিকে হারিয়ে স্ত্রী যেমন পাগল প্রায় তেমনি পিতৃহারা ছেলেমেয়েদের জীবনে নেমে এসেছে শুধুই অন্ধকার।