মুড়ি-বিস্কুট খেয়ে দিন কাটছে স্টাফদের

স্টাফ রিপোর্টার: সঙ্কট যেন কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না গুলশান কার্যালয়ে অবস্থানরত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ অন্যদের। দীর্ঘদিন পর কার্যালয়ের সামনে থেকে ইট-বালুর ট্রাক ও জলকামান সরে যাওয়ায় কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসে। কিন্তু ৩০ জানুয়ারি গভীর রাতে হঠাৎ করে কার্যালয়ের বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। পরের দিন ফোন, ফ্যাক্স, ইন্টারনেট, ডিশসহ সব ধরনের সংযোগও বিচ্ছিন্ন করা হয়। ১৯ ঘণ্টা পর বিদ্যুত ও কয়েক দিন আগে মোবাইল নেটওয়ার্ক চালু করা হলেও এখনও বিচ্ছিন্ন রয়েছে সব ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা। এমন পরিস্থিতিতে বুধবার রাত থেকে কার্যালয়ের ভেতরে কোনো ধরনের খাবার প্রবেশ করতে দিচ্ছে না পুলিশ। তিন দিন ধরে ভাত না পেয়ে বিস্কুট, মুড়ি, ফলমূলসহ শুকনো খাবার খেয়ে কোনোমতে জীবন কাটাচ্ছেন কার্যালয়ের ভেতরে অবস্থান করা প্রায় অর্ধশত লোক। শুধু খাবার নয়, পানিও প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। খাবার না পেয়ে অনেকটা মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। তবে খালেদা জিয়ার জন্য আনা খাবার প্রবেশে কোনো বাধা দেয়া হচ্ছে না। সরকারের এমন আচরণে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া হতভম্ব বলে কার্যালয়ে অবস্থানরত কয়েকজন জানান। তারা বলেন, তিনি (খালেদা জিয়া) কার্যালয়ের সবার খোঁজখবর নিচ্ছেন। তার জন্য আনা শুকনো খাবার ও ফলমূল তাদেরকে দিচ্ছেন।

তবে গুলশান থানা পুলিশ খাবার ফিরিয়ে দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন। থানার ওসি রফিকুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, গুলশান কার্যালয়ে কোনো খাবার নিতে বাধা দেয়া হচ্ছে না। থানায়ও কোনো খাবার আনা হয়নি। খাবার আটকের ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা নেই বলেও দাবি করেন তিনি। কার্যালয়ের সামনে দায়িত্বরত গুলশান থানার একজন এসআই নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ভাই সবকিছুই তো বুঝেন। কেন খামাখা জিজ্ঞেস করছেন।

গত ৩ জানুয়ারি রাত থেকে খালেদা জিয়া এ কার্যালয়ে অবস্থান করছেন। তার সাথে দলের ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল কাইয়ুম, প্রেসসচিব মারুফ কামাল খান, বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, মাহবুব আলম ডিউ, নিরাপত্তা সমন্বয়কারী কর্নেল (অব.) আবদুল মজিদ, প্রেস উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার, শায়রুল কবির খান, চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কর্মকর্তা (সিএসএফ), অফিস কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ প্রায় অর্ধশত লোক রয়েছেন।

জানতে চাইলে কার্যালয়ে অবস্থানরত চেয়ারপারসনের প্রেসসচিব মারুফ কামাল খান বলেন, আমরা কোন দেশে বাস করছি। কার্যালয়ের ভেতরে যারা আছি তারা তো কেউ মুত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিও নই। সে ধরনের আসামিকেও তো খাবার দেয়া হয়। তিনি জানতে চান, কোন আইনে খাবার ঢুকতে বাধা দিচ্ছে পুলিশ। দেশে এমন কোনো আইন আছে কিনা যে, কোনো নাগরিককে খাবার খেতে দেয়া যাবে না।

তিনি বলেন, বুধবার রাত থেকে কেউ খাবার খেতে পারছেন না। শুকনো খাবার, ফলমূল-জুস ইত্যাদি খেয়ে কোনোমতে বেঁচে আছেন। এভাবে চললে কার্যালয়ের ভেতর ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের আশংকা রয়েছে বলেও জানান মারুফ কামাল খান। কার্যালয়ে অবস্থানরত মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা বলেন, এই কার্যালয়কে তো জেলখানা ঘোষণা করা হয়নি। জেলখানায়ও তো তিন বেলা খাবার দেয়া হয়। কোনো সভ্য সমাজে এমন আচরণ হতে পারে না।

জানা গেছে, বুধবার রাত আটটার কিছু পরে প্রতিদিনের মতো রাতের খাবার নিয়ে একটি ভ্যান কার্যালয়ের মূল গেটে এসে থামে। যথারীতি গেট খুলে ভ্যানটি ভেতরে নেয়ার প্রস্তুতি নেয়া হয়। এমন সময় গেটের সামনে দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কয়েকজন সদস্য খাবার ভেতরে যাবে না বলে ভ্যানচালককে জানিয়ে দেন। এ সময় কার্যালয়ের ভেতরে অবস্থান করা চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য ও নিরাপত্তা কর্মীরা বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দেননি। তারা হয়তো ভেবেছিলেন, পুলিশ ফান করছে। কিন্তু পরে বুঝতে পারেন সত্যি সত্যিই খাবার প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। এ সময় তারা কিছুক্ষণ দায়িত্বরত পুলিশকে খাবার প্রবেশ না করতে দেয়ার কারণ জানতে চান।

তখন এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ওপরের নির্দেশ আছে। খাবার ভেতরে যাবে না। প্রেস উইংয়ের এক সদস্য জানতে চান, কোন ওপরের। কে নির্দেশ দিয়েছে। তখন ওই পুলিশ কর্মকর্তা সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ভেতরে আছেন ভালো আছেন। চুপচাপ থাকেন। বেশি কথা বললে অসুবিধা হবে। তখন প্রেস উইংয়ের কর্মকর্তাও পুলিশকে সতর্ক করে দেন। এক পর্যায়ে খাবারভর্তি ভ্যানটি গুলশান থানা পুলিশ নিয়ে যায়। পরের দিন বৃহস্পতিবার সকালে রুটি-ভাজিসহ সকালের নাস্তা নিয়ে একটি ভ্যান কার্যালয়ের সামনে আসে। যথারীতি পুলিশের বাধা। এরপর বৃস্পতিবার দুপুর ও রাতের খাবারও প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। শুক্রবারও একই ঘটনা ঘটে। গুলশান কার্যালয়ের জন্য আনা খাবারের গাড়ি ফিরিয়ে দিয়েছে পুলিশ।

বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার ও শায়রুল কবির খান ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, পুলিশকে বারবার অনুরোধ করার পরও তারা খাবার প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। কার্যালয়ের ভেতরে যারা আছেন তারা কিভাবে বেঁচে আছেন একমাত্র আল্লাহ জানেন। কয়েক টুকরো বিস্কুট আর কয়েক গ্লাস পানি খেয়ে তারা সময় পার করছেন। খাবারের পাশাপাশি পানিও আসতে দেয়া হচ্ছে না। ওয়াসার সাপ্লাইয়ের ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি খেয়ে কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।